ঢাকা | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ — আজ ৮ ডিসেম্বর—মৌলভীবাজারের ইতিহাসে এক গৌরবময় ও উল্লাসের দিন। এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মৌলভীবাজারকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। একাত্তরের আজকের এই সকালেই শহরজুড়ে এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্তে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল–সবুজের পতাকা। বিজয়ের আনন্দে হাজারো মানুষের মুখে ফুটে ওঠে মুক্তির উল্লাস।
৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক সমন্বয় দায়িত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান
মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ অঞ্চলে ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক সমন্বয়কারী ছিলেন মৌলভীবাজারের গণপরিষদ সদস্য, সাবেক হুইপ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মো. আজিজুর রহমান। সামরিক দায়িত্বে ছিলেন জেড ফোর্সের সাহসী সদস্যরা। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই তারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ আরও জোরদার করেন।
ক্রমে একে একে শত্রুমুক্ত হয় পুরো জেলা
৪ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলাকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ৫ ডিসেম্বর জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ আরও তীব্র হয়। একদিকে মুক্তিবাহিনী, অন্যদিকে মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে কূল কিনারা হারায় পাক হানাদাররা।
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে—৫ ও ৬ ডিসেম্বর—মুক্ত হয় রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া ও মুন্সীবাজার। এরপরই মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দিকে অগ্রযাত্রা শুরু করেন।
মৌলভীবাজার প্রেসিডেন্সি ঘিরে ভয়াবহ যুদ্ধ
৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী শহরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। সে সময় মৌলভীবাজার মহকুমা হেডকোয়ার্টারে অবস্থান করত পাকবাহিনীর একটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার। ফলে এখানে সংঘটিত হয় প্রচণ্ড তীব্র লড়াই।
জেড ফোর্সের ১৭টি ইউনিটের মধ্যে জব্বার ও মুহিবের নেতৃত্বে দুইটি ইউনিট কুলাউড়ার দিকে অভিযান চালালেও বাকি ১৫টি ইউনিট সরাসরি শহর অভিমুখে এগিয়ে আসে। তুমুল গুলি–বিনিময় ও অনেক প্রাণহানির পর ৭ ডিসেম্বর রাতেই মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন।
৮ ডিসেম্বর: অবশেষে শত্রুমুক্ত ঘোষিত মৌলভীবাজার
যুদ্ধ শেষে দেখা যায়—শহরের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদাররা পুঁতে রেখেছে প্রচুর মাইন, বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণে সময় লাগে পুরো একদিন। অবশেষে সব বিপদ অপসারণের পর ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১—মৌলভীবাজারকে আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়।
আজও স্মরণে সেই গৌরবের দিন
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে যে স্বাধীন মৌলভীবাজার উপহার পেয়েছিল, আজ ৮ ডিসেম্বর সেই বিজয়ের দিনটি স্মরণ করে গর্বে বুক ভরে ওঠে জেলার প্রতিটি মানুষের।
সম্পাদনায় | এস এম মেহেদী হাসান | E-mail: rupantorsongbad@gmail.com
এস এম মেহেদী হাসান 























