জাকির হোসেন হাওলাদার | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ — বিএনপি চেয়ারপারসন ও দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে জীবন-মৃত্যুর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে কাতার সরকারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পৌঁছেছে।
দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে মানুষ আজ নেত্রীর সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় মগ্ন। হাসপাতালের সামনে প্রতিদিনই ভিড় করছে হাজারো সাধারণ মানুষ—যার মধ্যে রয়েছে আবেগ, ভালোবাসা ও মানবিকতার অনন্য দৃশ্য।
সংগ্রাম আর দৃঢ়তায় গড়া এক রাজনৈতিক অধ্যায়
স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। পুরুষশাসিত রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের সংগঠনকে পুনর্গঠন, দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকা তাকে প্রতিষ্ঠিত করে আপসহীন নেত্রী হিসেবে।
তিনি তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শক্ত নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন।
দীর্ঘ কারাজীবন ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত দুই বছরের দীর্ঘ কারাজীবন তার স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে বলে পরিবার ও দলীয় নেতারা অভিযোগ করেন। লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক রোগ জটিল রূপ নেয়।
বর্তমান সংকটময় অবস্থায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসাই তার জন্য জরুরি বলে জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা।
তারেক রহমানের আবেগঘন বার্তা
মায়ের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তারেক রহমানের একটি পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে গভীর আবেগ সৃষ্টি করেছে। সেখানে তিনি লিখেছেন—মায়ের কাছে যেতে না পারার বেদনা, রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাধা এবং একজন সন্তানের অসহায়ত্বের কথা। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেই পোস্টে সহানুভূতি জানাচ্ছেন।
দলমত নির্বিশেষে দোয়া ও সংহতি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে মসজিদের মাইকে—বিভিন্ন রাজনৈতিক মতের মানুষ আজ প্রার্থনা করছেন খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য।
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাধারণ মানুষের প্রার্থনা একটি বিরল জাতীয় সংহতির বার্তা দিচ্ছে।
বিএনপির নেতাদের দাবি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান
বিএনপির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক কারণে দ্রুত সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না মিললে তার অবস্থা আরও জটিল হতে পারে।
উপাচার্যের আবেগঘন মন্তব্য
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম সামাজিক মাধ্যমে এক দীর্ঘ লিখায় খালেদা জিয়াকে “এক দৃঢ়, ত্যাগী ও জাতির অভিভাবকসুলভ নারী” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন—
“তার সুস্থতা জাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। দেশবাসীর প্রতি আমি অনুরোধ করছি—এই মানবমহিয়সী নেত্রীর জন্য দোয়া করুন।”
শেষভাগ : জাতির অপেক্ষা
কখন লন্ডনের উদ্দেশে তাকে নেওয়া হবে—তাতে চোখ রাখছে পুরো দেশ। রাতের আকাশে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উড়াল দেবে, আর সেই বিমানে থাকবেন দেশের রাজনীতির এক জীবন্ত ইতিহাস, বেগম খালেদা জিয়া।
তার সুস্থতার জন্য দোয়া, আশার অপেক্ষা—সব মিলিয়ে দেশজুড়ে বিরল আবেগঘন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সম্পাদনায় | এস এম মেহেদী হাসান | E-mail: rupantorsongbad@gmail.com
Reporter Name 



























