12:16 pm, Sunday, 7 December 2025

১০ মাসে ১৯৮ হত্যাকাণ্ড: নিরাপত্তাহীনতার ‘নতুন আতঙ্কে’ রাজধানীবাসী

ঢাকা | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ — রাজধানী ঢাকায় চলতি বছর একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব, এলাকা দখল, মাদক ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নভেম্বরেও ঘটেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর খুন। এতে মাসিক হিসাবে গড়ে ১৯–২০টি হত্যা সংঘটিত হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

হত্যাকাণ্ড বেড়েছে কেন?

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধির কয়েকটি প্রধান কারণ—

  • রাজনৈতিক প্রতিহিংসা
  • এলাকায় আধিপত্য বিস্তার
  • ব্যক্তিগত আক্রোশ
  • মাদক ব্যবসা
  • চাঁদাবাজি চক্র
  • সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
  • নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক অস্থিরতা

গত ৫ আগস্টের পর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের ‘ঢালাও জামিনে’ মুক্তি পাওয়া এবং তাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়া পাওয়া অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চাঞ্চল্যকর দুটি হত্যা

  • ১০ নভেম্বর, পুরান ঢাকার আদালতপাড়ার কাছে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে
  • ১৭ নভেম্বর, পল্লবীর একটি দোকানে ঢুকে ১০ সেকেন্ডে টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে

দুটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়— হেলমেট ও মাস্ক পরা অস্ত্রধারীরা দিবালোকে নির্দ্বিধায় গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘দুর্বলতা’ নিয়ে প্রশ্ন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনি দায়িত্বে ব্যস্ত থাকায় সন্ত্রাসীরা সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। অপরদিকে, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনি এখনো মনোবল ফিরে পায়নি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন—
“ঢাকা সহ দেশে এখন যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা যাচ্ছে, তা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার ফল। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নির্বিচারে জামিন দিয়ে ফের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।”

গত তিন বছরের তুলনায় ভয়াবহ চিত্র

ডিএমপির তথ্য—

  • ২০২3: ১৬৫টি খুন
  • ২০২2: ১৭২টি খুন
  • ২০২1: ১৬৬টি খুন
  • ২০২৫ (১০ মাসেই): প্রায় ২০০ খুন

যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

  • অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার
  • বৈধ অস্ত্রও সাময়িক জমা নেওয়া
  • পুলিশের সক্ষমতা ও মনোবল পুনর্গঠন
  • দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা পরিকল্পনা
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে কার্যকর উদ্যোগ

রাজধানীবাসীর দাবি— আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া ঢাকার নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

শিক্ষকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মবিরতি—ভবিষ্যৎ কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা

১০ মাসে ১৯৮ হত্যাকাণ্ড: নিরাপত্তাহীনতার ‘নতুন আতঙ্কে’ রাজধানীবাসী

Update Time : 10:43:01 pm, Monday, 1 December 2025

ঢাকা | ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ — রাজধানী ঢাকায় চলতি বছর একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব, এলাকা দখল, মাদক ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানীতে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নভেম্বরেও ঘটেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর খুন। এতে মাসিক হিসাবে গড়ে ১৯–২০টি হত্যা সংঘটিত হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

হত্যাকাণ্ড বেড়েছে কেন?

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধির কয়েকটি প্রধান কারণ—

  • রাজনৈতিক প্রতিহিংসা
  • এলাকায় আধিপত্য বিস্তার
  • ব্যক্তিগত আক্রোশ
  • মাদক ব্যবসা
  • চাঁদাবাজি চক্র
  • সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব
  • নির্বাচনপূর্ব রাজনৈতিক অস্থিরতা

গত ৫ আগস্টের পর শীর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের ‘ঢালাও জামিনে’ মুক্তি পাওয়া এবং তাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়া পাওয়া অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চাঞ্চল্যকর দুটি হত্যা

  • ১০ নভেম্বর, পুরান ঢাকার আদালতপাড়ার কাছে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে
  • ১৭ নভেম্বর, পল্লবীর একটি দোকানে ঢুকে ১০ সেকেন্ডে টার্গেট করে গুলি করে হত্যা করা হয় যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে

দুটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়— হেলমেট ও মাস্ক পরা অস্ত্রধারীরা দিবালোকে নির্দ্বিধায় গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘দুর্বলতা’ নিয়ে প্রশ্ন

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনি দায়িত্বে ব্যস্ত থাকায় সন্ত্রাসীরা সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। অপরদিকে, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনি এখনো মনোবল ফিরে পায়নি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন—
“ঢাকা সহ দেশে এখন যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা যাচ্ছে, তা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার ফল। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নির্বিচারে জামিন দিয়ে ফের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।”

গত তিন বছরের তুলনায় ভয়াবহ চিত্র

ডিএমপির তথ্য—

  • ২০২3: ১৬৫টি খুন
  • ২০২2: ১৭২টি খুন
  • ২০২1: ১৬৬টি খুন
  • ২০২৫ (১০ মাসেই): প্রায় ২০০ খুন

যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

  • অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার
  • বৈধ অস্ত্রও সাময়িক জমা নেওয়া
  • পুলিশের সক্ষমতা ও মনোবল পুনর্গঠন
  • দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা পরিকল্পনা
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাতে কার্যকর উদ্যোগ

রাজধানীবাসীর দাবি— আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া ঢাকার নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটতে পারে।