12:30 pm, Sunday, 23 November 2025

খাসিয়া সম্প্রদায়ের শতবর্ষী বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উদযাপন

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:36:34 pm, Saturday, 22 November 2025
  • 68 Time View

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), ২২ নভেম্বর — মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’। শনিবার দিনব্যাপী উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে আয়োজিত এ উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি জনপদে নেমে আসে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের রং। এ বছর খাসিয়ারা পালন করছেন তাদের ১২৬তম বর্ষবিদায় এবং ১২৭তম নববর্ষকে বরণ অনুষ্ঠান

দিনভর নানা আচার, নৃত্য, গান ও খাদ্য–সংস্কৃতিতে জমে ওঠে বর্ষবিদায়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসরণ করে খাসিয়া নারী-পুরুষরা উৎসবের বিশেষ পোশাক পরে অংশ নেন আদি পাহাড়ি নাচ–গানে। ইতিহাস, কৃষিশিল্প, এবং জুম–চাষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা খাসিয়া জীবনের নানামাত্রা তুলে ধরা হয় নৃত্যচিত্রে।

উৎসব উপলক্ষে পুঞ্জিতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী হাট—
যেখানে দেখা মেলে বাঁশ–বেতের কারুশিল্প, খাসিয়া পান, তীর–ধনুক, গয়না, ও ঐতিহ্যবাহী পোশাকসহ নানা সামগ্রী।

আয়োজকদের বক্তব্য

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং বলেন,
“খাসি সেং কুটস্নেম সফলভাবে আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ঐতিহ্যগত খেলা, পোশাক, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, খাবার—সবই থাকবে। আমাদের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্ম ও বাইরের মানুষের সামনে তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য।”

পুঞ্জির নেতৃত্বের বক্তব্য

মাগুরছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী ও খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং জানান,
“সিলেট বিভাগে প্রায় ৯০টি খাসিয়া পুঞ্জি আছে। সেখান থেকে অনেকে এখানে এসে অংশ নিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে বাঙালি, বিভিন্ন পেশার মানুষ ও দেশ–বিদেশের পর্যটকরাও যোগ দিয়েছেন।”

উৎসবকে ঘিরে পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সহাবস্থার উজ্জ্বল পরিবেশ—এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাসিয়া বর্ষবিদায় উৎসবের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

খাসিয়া সম্প্রদায় নিজেদের স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি (Khasi Lunar Calendar) অনুসরণ করে। এ ক্যালেন্ডারের ভিত্তি হলো—
চাঁদের ঊর্ধ্বগতি, কৃষি মৌসুম, জুম–চাষের পর্যায় এবং প্রকৃতির রূপান্তর।

সেং কুটস্নেম (Seng Kut Snem) খাসিয়া সামাজিক বন্ধন ও ঐতিহ্যরক্ষার প্রতীক।
এই দিনে তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষ, জমি, বন, জল ও আকাশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বর্ষবিদায় মানে শুধু উৎসব নয়—
বছর জুড়ে শ্রম, ফসল, প্রকৃতি, ঝড়-বন্যা, রোগব্যাধি থেকে বাঁচার গল্পকে বিদায়।
আর নতুন বছর মানে নতুন বীজ, নতুন ফসল, নতুন আশাবাদ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

খাসিয়া সম্প্রদায়ের শতবর্ষী বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উদযাপন

Update Time : 07:36:34 pm, Saturday, 22 November 2025

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), ২২ নভেম্বর — মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের বর্ষবিদায় উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’। শনিবার দিনব্যাপী উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে আয়োজিত এ উৎসবকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি জনপদে নেমে আসে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের রং। এ বছর খাসিয়ারা পালন করছেন তাদের ১২৬তম বর্ষবিদায় এবং ১২৭তম নববর্ষকে বরণ অনুষ্ঠান

দিনভর নানা আচার, নৃত্য, গান ও খাদ্য–সংস্কৃতিতে জমে ওঠে বর্ষবিদায়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসরণ করে খাসিয়া নারী-পুরুষরা উৎসবের বিশেষ পোশাক পরে অংশ নেন আদি পাহাড়ি নাচ–গানে। ইতিহাস, কৃষিশিল্প, এবং জুম–চাষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা খাসিয়া জীবনের নানামাত্রা তুলে ধরা হয় নৃত্যচিত্রে।

উৎসব উপলক্ষে পুঞ্জিতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী হাট—
যেখানে দেখা মেলে বাঁশ–বেতের কারুশিল্প, খাসিয়া পান, তীর–ধনুক, গয়না, ও ঐতিহ্যবাহী পোশাকসহ নানা সামগ্রী।

আয়োজকদের বক্তব্য

খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং বলেন,
“খাসি সেং কুটস্নেম সফলভাবে আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ঐতিহ্যগত খেলা, পোশাক, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, খাবার—সবই থাকবে। আমাদের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্ম ও বাইরের মানুষের সামনে তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য।”

পুঞ্জির নেতৃত্বের বক্তব্য

মাগুরছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী ও খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং জানান,
“সিলেট বিভাগে প্রায় ৯০টি খাসিয়া পুঞ্জি আছে। সেখান থেকে অনেকে এখানে এসে অংশ নিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে বাঙালি, বিভিন্ন পেশার মানুষ ও দেশ–বিদেশের পর্যটকরাও যোগ দিয়েছেন।”

উৎসবকে ঘিরে পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সহাবস্থার উজ্জ্বল পরিবেশ—এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাসিয়া বর্ষবিদায় উৎসবের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

খাসিয়া সম্প্রদায় নিজেদের স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি (Khasi Lunar Calendar) অনুসরণ করে। এ ক্যালেন্ডারের ভিত্তি হলো—
চাঁদের ঊর্ধ্বগতি, কৃষি মৌসুম, জুম–চাষের পর্যায় এবং প্রকৃতির রূপান্তর।

সেং কুটস্নেম (Seng Kut Snem) খাসিয়া সামাজিক বন্ধন ও ঐতিহ্যরক্ষার প্রতীক।
এই দিনে তাঁরা তাঁদের পূর্বপুরুষ, জমি, বন, জল ও আকাশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বর্ষবিদায় মানে শুধু উৎসব নয়—
বছর জুড়ে শ্রম, ফসল, প্রকৃতি, ঝড়-বন্যা, রোগব্যাধি থেকে বাঁচার গল্পকে বিদায়।
আর নতুন বছর মানে নতুন বীজ, নতুন ফসল, নতুন আশাবাদ।