ঢাকা | ১৭ নভেম্বর ২০২৫ — জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে তাঁদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। রাজসাক্ষী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থনে আসায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ের সারাংশ
মোট পাঁচ অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে বিচার হয়। রায়ে দুটি অভিযোগে শেখ হাসিনা, একটি অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আদালত বলেন, সহিংসতা দমন কঠোর হলেও এ ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী অস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহার মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
রায়ে শহীদদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
তিন আসামির অবস্থান
তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামাল বর্তমানে পলাতক বলে জানা গেছে। দুজনই ভারতে অবস্থান করছেন। একমাত্র চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসিকিউশন–ডিফেন্সের তথ্যউপাত্ত
রায়ে আন্দোলনের সময় প্রাণঘাতী গুলিবর্ষণের ভিডিও, অডিও, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন, ফোনালাপসহ অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়।
ঢাকা, রংপুর, আশুলিয়া, যাত্রাবাড়ী, রামপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে গুলিবর্ষণ ও আগুনে হত্যার ঘটনাগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
কোটা আন্দোলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, টেলিফোনে নির্দেশ—এসব বিষয়ও রায়ে বিবেচনায় আসে।
প্রতিক্রিয়া
রায়কে ‘ন্যায় প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ নজির’ বলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, সরকার শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যর্পণের জন্য আবারও ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করেছে।” তাঁর দাবি, উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্বের যেকোনো আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “জুলাই বিপ্লবের শহীদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। এ রায় আইনের শাসনের মাইলফলক হয়ে থাকবে।” তিনি জানান, শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হওয়ার দিন থেকেই তাঁর সাজা কার্যকর হবে।
ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে উত্তেজনা
রায় ঘোষণা ঘিরে ট্রাইব্যুনালের বাইরে ‘মঞ্চ ২৪’, ‘জনজোট বিপ্লবী মঞ্চ’ ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের অবস্থান দেখা যায়। সেখানে ‘হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি’ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বড় পর্দায় রায় দেখার আয়োজন করে ডাকসু। সেখানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়।
ধানমন্ডি ৩২–এ উত্তেজনা
দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দুটি এক্সকাভেটর নিয়ে কিছু লোক জড়ো হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুলিশের একজন সদস্য আহত হন। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।
সম্পাদনায় | এস এম মেহেদী হাসান | E-mail: rupantorsongbad@gmail.com
Reporter Name 




























