1:02 pm, Sunday, 23 November 2025

১১ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত ২,৩৯৯ শিক্ষক: লালমনিরহাটে ‘No Promotion, No Work’ স্লোগানে উত্তাল শিক্ষা ক্যাডার

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:45:56 pm, Sunday, 16 November 2025
  • 85 Time View

কল্লোল আহমেদ, লালমনিরহাট: বছরের পর বছর পদোন্নতি বঞ্চনা—অবশেষে বিস্ফোরিত হলো সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। সারাদেশের মতো লালমনিরহাটেও বৃহস্পতিবার দিনভর “No Promotion, No Work” কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে ওঠেন প্রভাষকরা। লালমনিরহাট সরকারি কলেজ চত্বরে কয়েক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন জেলার বিভিন্ন কলেজের প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

“১১ বছরের বঞ্চনা—এটা রাষ্ট্রীয় বৈষম্য”

জেলা ইউনিটের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আবু সাদেক মো. জুন্নুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“৩২তম থেকে ৩৭তম বিসিএসের ২,৩৯৯ কর্মকর্তা টানা ১১ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত। অন্য সব ক্যাডার নিয়মিত পদোন্নতি পেলেও শিক্ষা ক্যাডারে স্থবিরতা এবং বৈষম্য সংস্কৃতি বন্ধ হচ্ছে না। দ্রুত জটিলতা সমাধান করে পদোন্নতির জিও (GO) জারি করতে হবে। একই সঙ্গে ২০০০ বিধি ভেঙে আত্মীকৃত শিক্ষকদের পক্ষে দেওয়া অবৈধ ৫৭টি আদেশ বাতিল করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা ক্যাডার দেশের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের চালিকাশক্তি—অথচ এখানেই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষা।”

“শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই ভূতাপেক্ষিক পদোন্নতি”

ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরমান রহমান বলেন—
“এই বঞ্চনার সমাধান হলো ভূতাপেক্ষিক (time-scale) পদোন্নতি। এতে শিক্ষক সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলাও ফিরবে।”

“যে অধিকার প্রাপ্য, তা পেতে বারবার রাস্তায় নামতে হবে কেন?”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উম্মে তাজ এ জান্নাত বলেন—
“গত পাঁচ বছরে কয়েকবার আন্দোলন করেছি। যে অধিকার সহজেই পাওয়ার কথা, তার জন্য রাস্তায় নামলে রাষ্ট্র তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। শিক্ষক আন্দোলনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরাই।”

অধ্যক্ষের সংহতি: “শিক্ষক উপেক্ষা মানে শিক্ষাব্যবস্থার বিপর্যয়”

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু ইমাম মো. রাশেদুন্নবী আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বলেন—
“শিক্ষকের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করলে শিক্ষাব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।”

পদোন্নতি স্থবিরতায় যে ক্ষতি হচ্ছে

  • কর্মস্পৃহা ও মনোবল ভেঙে যাচ্ছে
  • প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হচ্ছে
  • আর্থিক ক্ষতির মুখে শিক্ষকরা
  • মেধাবীরা শিক্ষা ক্যাডারে আসতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে
    ফলে সামগ্রিকভাবে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রভাষক পরিষদের প্রধান দাবি:

  1. ৩২–৩৭তম বিসিএসের ২,৩৯৯ কর্মকর্তার দ্রুত পদোন্নতি
  2. ২০০০ বিধি লঙ্ঘন করে দেওয়া অবৈধ ৫৭টি আত্মীকরণ আদেশ বাতিল
  3. সকল ব্যাচে সমানুপাতে নিয়মিত পদোন্নতি কাঠামো বাস্তবায়ন
  4. ভূতাপেক্ষিক (time-scale) পদোন্নতি পুনর্বহাল

শেষ কথা

লালমনিরহাটের আন্দোলন শুধু একটি জেলার অসন্তোষ নয়—এটি সারাদেশের প্রভাষকদের ১১ বছরের বঞ্চনা, ক্ষোভ এবং হতাশার প্রতিচ্ছবি। এখন সমাধান সময়ের দাবি—নয়তো শিক্ষা ব্যবস্থা আরও বড় সংকটে পড়বে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

১১ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত ২,৩৯৯ শিক্ষক: লালমনিরহাটে ‘No Promotion, No Work’ স্লোগানে উত্তাল শিক্ষা ক্যাডার

Update Time : 06:45:56 pm, Sunday, 16 November 2025

কল্লোল আহমেদ, লালমনিরহাট: বছরের পর বছর পদোন্নতি বঞ্চনা—অবশেষে বিস্ফোরিত হলো সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার। সারাদেশের মতো লালমনিরহাটেও বৃহস্পতিবার দিনভর “No Promotion, No Work” কর্মসূচিতে উত্তাল হয়ে ওঠেন প্রভাষকরা। লালমনিরহাট সরকারি কলেজ চত্বরে কয়েক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন জেলার বিভিন্ন কলেজের প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

“১১ বছরের বঞ্চনা—এটা রাষ্ট্রীয় বৈষম্য”

জেলা ইউনিটের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আবু সাদেক মো. জুন্নুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“৩২তম থেকে ৩৭তম বিসিএসের ২,৩৯৯ কর্মকর্তা টানা ১১ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত। অন্য সব ক্যাডার নিয়মিত পদোন্নতি পেলেও শিক্ষা ক্যাডারে স্থবিরতা এবং বৈষম্য সংস্কৃতি বন্ধ হচ্ছে না। দ্রুত জটিলতা সমাধান করে পদোন্নতির জিও (GO) জারি করতে হবে। একই সঙ্গে ২০০০ বিধি ভেঙে আত্মীকৃত শিক্ষকদের পক্ষে দেওয়া অবৈধ ৫৭টি আদেশ বাতিল করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষা ক্যাডার দেশের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের চালিকাশক্তি—অথচ এখানেই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষা।”

“শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই ভূতাপেক্ষিক পদোন্নতি”

ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরমান রহমান বলেন—
“এই বঞ্চনার সমাধান হলো ভূতাপেক্ষিক (time-scale) পদোন্নতি। এতে শিক্ষক সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলাও ফিরবে।”

“যে অধিকার প্রাপ্য, তা পেতে বারবার রাস্তায় নামতে হবে কেন?”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উম্মে তাজ এ জান্নাত বলেন—
“গত পাঁচ বছরে কয়েকবার আন্দোলন করেছি। যে অধিকার সহজেই পাওয়ার কথা, তার জন্য রাস্তায় নামলে রাষ্ট্র তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। শিক্ষক আন্দোলনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরাই।”

অধ্যক্ষের সংহতি: “শিক্ষক উপেক্ষা মানে শিক্ষাব্যবস্থার বিপর্যয়”

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু ইমাম মো. রাশেদুন্নবী আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বলেন—
“শিক্ষকের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করলে শিক্ষাব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।”

পদোন্নতি স্থবিরতায় যে ক্ষতি হচ্ছে

  • কর্মস্পৃহা ও মনোবল ভেঙে যাচ্ছে
  • প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হচ্ছে
  • আর্থিক ক্ষতির মুখে শিক্ষকরা
  • মেধাবীরা শিক্ষা ক্যাডারে আসতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে
    ফলে সামগ্রিকভাবে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রভাষক পরিষদের প্রধান দাবি:

  1. ৩২–৩৭তম বিসিএসের ২,৩৯৯ কর্মকর্তার দ্রুত পদোন্নতি
  2. ২০০০ বিধি লঙ্ঘন করে দেওয়া অবৈধ ৫৭টি আত্মীকরণ আদেশ বাতিল
  3. সকল ব্যাচে সমানুপাতে নিয়মিত পদোন্নতি কাঠামো বাস্তবায়ন
  4. ভূতাপেক্ষিক (time-scale) পদোন্নতি পুনর্বহাল

শেষ কথা

লালমনিরহাটের আন্দোলন শুধু একটি জেলার অসন্তোষ নয়—এটি সারাদেশের প্রভাষকদের ১১ বছরের বঞ্চনা, ক্ষোভ এবং হতাশার প্রতিচ্ছবি। এখন সমাধান সময়ের দাবি—নয়তো শিক্ষা ব্যবস্থা আরও বড় সংকটে পড়বে।