পায়রা নদীর ভাঙনে নিশ্চিহ্নের পথে আলগী গ্রাম: বিপর্যস্ত মানুষের পাশে এবি পার্টি
দুমকি, পটুয়াখালী | ২৬ আগষ্ট ২০২৫ — পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আলগী গ্রাম আজ ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান নদী পায়রা নদীর প্রবল ভাঙনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, জমি ও জনপদ। দুঃখ-দুর্দশায় ডুবে থাকা মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার রবিবার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
পায়রা নদী: ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট
পায়রা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার ডিঙ্গি নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে পটুয়াখালী জেলার দুমকি, মির্জাগঞ্জ, কলাপাড়া ও দশমিনা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ প্রায় ১ কিলোমিটার হলেও বিভিন্ন স্থানে প্রস্থ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২–৩ কিলোমিটার।
পায়রা নদীর দুই তীরে হাজার হাজার মানুষ কৃষি, মৎস্য, নৌ-যান চলাচল এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া পায়রা নদী ঘিরে পায়রা সমুদ্রবন্দর গড়ে ওঠায় এ নদীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহুগুণে বেড়েছে।
🎬 ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন — পায়রা নদীর ভাঙনে নিশ্চিহ্ন আলগী গ্রাম: সরকারের উদ্যোগ কবে আসবে? | Pratidin24
ভাঙনের ভয়াবহতা
পায়রা নদী বরাবরই ভাঙনপ্রবণ। বর্ষা মৌসুমে নদীর স্রোত বেড়ে গেলে দুই তীরের গ্রামগুলোতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয়দের মতে, গত ১০ বছরে শুধুমাত্র দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৩ হাজার পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। অনেকেই অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পায়রা নদীর ভাঙনের অন্যতম কারণ হলো—
-
প্রাকৃতিক স্রোতের তীব্রতা
-
নদী শাসনের কোনো কার্যকর প্রকল্প না থাকা
-
পায়রা সমুদ্রবন্দরের কারণে নৌপথ গভীরীকরণ ও খননকাজ
-
নদীর চর ভেঙে ধ্বংস হওয়া
আলগী গ্রাম বর্তমানে ভাঙনের সবচেয়ে বড় শিকার। প্রতিদিন নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি ও জমি।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনযাপন
ভাঙনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক ও জেলে পরিবারগুলো। একসময় যারা ফসল ফলিয়ে কিংবা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন, আজ তারা জমি-জায়গা হারিয়ে দিনমজুর বা রিকশাচালক হিসেবে অন্যত্র কাজ করছেন।
আলগী গ্রামের বাসিন্দা হাজী মো. সিরাজ বলেন—
“আমি জীবনে তিনবার ঘর বানিয়েছি, তিনবারই নদীতে চলে গেছে। এখন আর কোনো শক্তি নেই নতুন ঘর করার। আমরা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি।”
নারী-শিশুদের দুর্দশা আরও ভয়াবহ। বসতভিটা হারিয়ে অস্থায়ী ঘরে বা অন্যের জমিতে আশ্রয় নেওয়ায় তাদের জীবনযাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এবি পার্টির সহমর্মিতা
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবি পার্টি। রবিবার বিকেলে প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার ভাঙন কবলিত আলগী গ্রাম পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় শতাধিক নারী-পুরুষ তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা জানান।
ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখে তিনি বলেন—
“পায়রা নদীর ভাঙনে আলগী গ্রাম আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। আমি আপনাদের পাশে আছি, থাকবো। ভাঙন রোধ করে আলগী গ্রামকে বাঁচাতে যা যা করণীয় তাই করবো।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবিলম্বে টেকসই নদী শাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি পটুয়াখালী জেলা শাখার সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন, সহকারী সদস্য সচিব মাসুদুর রহমান, সদস্য আবু হানিফ জয় ও মেহেদী হাসান কাওছার।
নদী বিশেষজ্ঞদের মতামত
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন—
“পায়রা নদীর ভাঙন দক্ষিণাঞ্চলের জন্য একটি বড় হুমকি। এখানে টেকসই বাঁধ, গাইডওয়াল এবং জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। শুধু বর্ষায় অস্থায়ী কাজ করে লাভ নেই।”
তিনি আরও বলেন, পায়রা নদীর ভাঙন নিয়ন্ত্রণ না হলে শুধু গ্রাম নয়, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও আঞ্চলিক মহাসড়কও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
ভাঙনরোধে সরকারের উদ্যোগ
সরকার এর আগে কয়েকবার ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও স্থায়ী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের দাবি—অবিলম্বে পায়রা নদী শাসনের স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, নদী ভাঙন রোধে একটি ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মানুষের প্রত্যাশা
আলগী গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, এবি পার্টির এই উদ্যোগ হয়তো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তারা আশা করছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পুরো গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
গ্রামবাসী আক্ষেপ করে বলেন—
“আমরা তো ভোট দিই, কর দিই, অথচ আজ ঘরবাড়ি হারিয়ে আমরা রাস্তায়। যদি এখনই নদী রক্ষা না হয়, আগামী প্রজন্মের কাছে আলগী নামের কোনো গ্রাম থাকবে না।”
উপসংহার
পায়রা নদী শুধু একটি নদী নয়, এটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার অংশ। কিন্তু ভাঙনের কারণে প্রতিদিন নদী গিলে নিচ্ছে মানুষের স্বপ্ন। এবি পার্টির উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মনে আশা জাগালেও, স্থায়ী সমাধান ছাড়া পায়রা নদীর ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়।
প্রতিবেদক : জাকির হোসেন হাওলাদার
— এস এম মেহেদী/ সালেহ আহমদ
Reporter Name 



























