1:55 pm, Sunday, 23 November 2025

শরীরের এই ৫ জায়গায় ব্যথা মানে কিডনি বিপদে! বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

  • Reporter Name
  • Update Time : 11:09:35 am, Monday, 25 August 2025
  • 36 Time View

শরীরের এই ৫ জায়গায় ব্যথা মানে কিডনি বিপদে! বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

🔹 কেন কিডনি এত গুরুত্বপূর্ণ?

মানবদেহের প্রতিদিন প্রায় ৫০ গ্যালনের মতো রক্ত কিডনি ফিল্টার করে। কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করে, শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হরমোন উৎপাদন করে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ কিডনি বিকলজনিত সমস্যায় ভোগে, যাদের মধ্যে অনেকেই ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া বাঁচতে পারেন না।

🔹 শরীর যেভাবে কিডনির বিপদের সংকেত দেয়

কিডনির সমস্যা সবসময় চুপচাপ শুরু হয়। ব্যথা সাধারণত কোমরে সীমাবদ্ধ না থেকে পেট, কুঁচকি, পা–গোড়ালি, এমনকি বুকে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে

এখন দেখে নিন ৫টি জায়গা যেখানে ব্যথা মানেই সতর্ক হওয়া দরকার


১️⃣ কোমরের পাশের অংশ (ফ্ল্যাঙ্ক এরিয়া)

এটাই কিডনির সমস্যার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ।

  • ব্যথার ধরন: ভোঁতা ব্যথা বা ঢেউয়ের মতো তীব্র ব্যথা, যা এক বা দুই পাশে হতে পারে।

  • কারণ: কিডনিতে প্রদাহ, সংক্রমণ বা পাথর হলে এই ব্যথা দেখা দেয়। সাধারণ ব্যাক পেইনের মতো বিশ্রাম বা মালিশে এটি কমে না।


২️⃣ পেটের ব্যথা

অনেকে প্রথমে ভেবে নেন এটি সাধারণ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা। কিন্তু তা সবসময় নয়।

  • ব্যথার ধরন: নিচের পেটে চাপ অনুভব, হঠাৎ তীব্র ব্যথা, ক্র্যাম্প এবং বমিভাব।

  • কারণ: কিডনিতে ব্লকেজ বা চাপ তৈরি হলে ব্যথা পেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।


৩️⃣ কুঁচকি ও পেলভিক এলাকায় ব্যথা

কিডনি থেকে আসা ব্যথা কুঁচকি পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।

  • ব্যথার ধরন: আসা–যাওয়া করা তীব্র ব্যথা, প্রস্রাবে অস্বস্তি, বা হঠাৎ প্রস্রাবের তাগিদ।

  • কারণ: ইউরেটার দিয়ে পাথর নামতে থাকলে তীব্র ব্যথা হয়।


৪️⃣ পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতা

কিডনি সমস্যার কারণে শরীরে তরল জমে যায়।

  • ব্যথার ধরন: পায়ে ফুলে যাওয়া, পেশীতে ক্র্যাম্প, গোড়ালি শক্ত হয়ে যাওয়া, অথবা ঝিনঝিন ভাব।

  • কারণ: কিডনি সঠিকভাবে অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করতে না পারলে (ইডিমা) এমনটা হয়।


৫️⃣ বুকে ও পাঁজরের নিচে ব্যথা

এটি সবচেয়ে ভয়ংকর সতর্কবার্তা।

  • ব্যথার ধরন: বুকে চাপ, শ্বাস নিতে কষ্ট, বা শোয়া অবস্থায় ব্যথা বাড়া।

  • কারণ: কিডনির জটিলতায় হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের চারপাশে তরল জমতে পারে, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়।


⚠️ কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

  • কোমরের পাশে তীব্র ব্যথা

  • কুঁচকি পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া ব্যথা

  • প্রস্রাবে জ্বালা বা রক্ত আসা

  • হঠাৎ পা–গোড়ালি ফুলে যাওয়া

  • বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট

এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তার দেখান


🩺 বিশেষজ্ঞ মতামত

কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. সুমন রানা বলেন—

“কিডনি সমস্যা অনেক সময় নীরবে শুরু হয়। কিন্তু শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় অস্বাভাবিক ব্যথা কিডনির গুরুতর সমস্যার আগাম সতর্কবার্তা হতে পারে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী—

  • বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ১ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত।

  • বাংলাদেশে ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার, অথচ প্রয়োজন আরও অনেক বেশি।


🛡️ প্রতিরোধমূলক টিপস

১. প্রতিদিন অন্তত ২–৩ লিটার পানি পান করুন (ডাক্তারের পরামর্শমতো)।
২. অতিরিক্ত লবণ, জাঙ্ক ফুড ও কোল্ড ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন
৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন—রক্তচাপ, রক্তে শর্করা ও কিডনির কার্যক্ষমতা।
৪. অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
৫. প্রস্রাবে অস্বাভাবিকতা বা শরীর ফোলা দেখলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


🔹 উপসংহার

প্রিয় দর্শক,
কিডনি আমাদের শরীরের এক নীরব যোদ্ধা। তাই শরীরের ছোট্ট কোনো ব্যথাকেও অবহেলা করবেন না। প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা মানেই কিডনির বড় ক্ষতি ঠেকানো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

শরীরের এই ৫ জায়গায় ব্যথা মানে কিডনি বিপদে! বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

Update Time : 11:09:35 am, Monday, 25 August 2025

শরীরের এই ৫ জায়গায় ব্যথা মানে কিডনি বিপদে! বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা

🔹 কেন কিডনি এত গুরুত্বপূর্ণ?

মানবদেহের প্রতিদিন প্রায় ৫০ গ্যালনের মতো রক্ত কিডনি ফিল্টার করে। কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করে, শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হরমোন উৎপাদন করে।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজারের বেশি মানুষ কিডনি বিকলজনিত সমস্যায় ভোগে, যাদের মধ্যে অনেকেই ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া বাঁচতে পারেন না।

🔹 শরীর যেভাবে কিডনির বিপদের সংকেত দেয়

কিডনির সমস্যা সবসময় চুপচাপ শুরু হয়। ব্যথা সাধারণত কোমরে সীমাবদ্ধ না থেকে পেট, কুঁচকি, পা–গোড়ালি, এমনকি বুকে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে

এখন দেখে নিন ৫টি জায়গা যেখানে ব্যথা মানেই সতর্ক হওয়া দরকার


১️⃣ কোমরের পাশের অংশ (ফ্ল্যাঙ্ক এরিয়া)

এটাই কিডনির সমস্যার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ।

  • ব্যথার ধরন: ভোঁতা ব্যথা বা ঢেউয়ের মতো তীব্র ব্যথা, যা এক বা দুই পাশে হতে পারে।

  • কারণ: কিডনিতে প্রদাহ, সংক্রমণ বা পাথর হলে এই ব্যথা দেখা দেয়। সাধারণ ব্যাক পেইনের মতো বিশ্রাম বা মালিশে এটি কমে না।


২️⃣ পেটের ব্যথা

অনেকে প্রথমে ভেবে নেন এটি সাধারণ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা। কিন্তু তা সবসময় নয়।

  • ব্যথার ধরন: নিচের পেটে চাপ অনুভব, হঠাৎ তীব্র ব্যথা, ক্র্যাম্প এবং বমিভাব।

  • কারণ: কিডনিতে ব্লকেজ বা চাপ তৈরি হলে ব্যথা পেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়।


৩️⃣ কুঁচকি ও পেলভিক এলাকায় ব্যথা

কিডনি থেকে আসা ব্যথা কুঁচকি পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।

  • ব্যথার ধরন: আসা–যাওয়া করা তীব্র ব্যথা, প্রস্রাবে অস্বস্তি, বা হঠাৎ প্রস্রাবের তাগিদ।

  • কারণ: ইউরেটার দিয়ে পাথর নামতে থাকলে তীব্র ব্যথা হয়।


৪️⃣ পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতা

কিডনি সমস্যার কারণে শরীরে তরল জমে যায়।

  • ব্যথার ধরন: পায়ে ফুলে যাওয়া, পেশীতে ক্র্যাম্প, গোড়ালি শক্ত হয়ে যাওয়া, অথবা ঝিনঝিন ভাব।

  • কারণ: কিডনি সঠিকভাবে অতিরিক্ত তরল ফিল্টার করতে না পারলে (ইডিমা) এমনটা হয়।


৫️⃣ বুকে ও পাঁজরের নিচে ব্যথা

এটি সবচেয়ে ভয়ংকর সতর্কবার্তা।

  • ব্যথার ধরন: বুকে চাপ, শ্বাস নিতে কষ্ট, বা শোয়া অবস্থায় ব্যথা বাড়া।

  • কারণ: কিডনির জটিলতায় হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের চারপাশে তরল জমতে পারে, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়।


⚠️ কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

  • কোমরের পাশে তীব্র ব্যথা

  • কুঁচকি পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়া ব্যথা

  • প্রস্রাবে জ্বালা বা রক্ত আসা

  • হঠাৎ পা–গোড়ালি ফুলে যাওয়া

  • বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট

এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তার দেখান


🩺 বিশেষজ্ঞ মতামত

কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. সুমন রানা বলেন—

“কিডনি সমস্যা অনেক সময় নীরবে শুরু হয়। কিন্তু শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায় অস্বাভাবিক ব্যথা কিডনির গুরুতর সমস্যার আগাম সতর্কবার্তা হতে পারে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী—

  • বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ১ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত।

  • বাংলাদেশে ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার, অথচ প্রয়োজন আরও অনেক বেশি।


🛡️ প্রতিরোধমূলক টিপস

১. প্রতিদিন অন্তত ২–৩ লিটার পানি পান করুন (ডাক্তারের পরামর্শমতো)।
২. অতিরিক্ত লবণ, জাঙ্ক ফুড ও কোল্ড ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন
৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন—রক্তচাপ, রক্তে শর্করা ও কিডনির কার্যক্ষমতা।
৪. অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
৫. প্রস্রাবে অস্বাভাবিকতা বা শরীর ফোলা দেখলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


🔹 উপসংহার

প্রিয় দর্শক,
কিডনি আমাদের শরীরের এক নীরব যোদ্ধা। তাই শরীরের ছোট্ট কোনো ব্যথাকেও অবহেলা করবেন না। প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা মানেই কিডনির বড় ক্ষতি ঠেকানো।