1:01 pm, Sunday, 23 November 2025

সূরা আশ-শামস: সূর্য থেকে আত্মা পর্যন্ত — মানবতার জন্য এক ঐশী সতর্কবার্তা

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:11:41 pm, Wednesday, 13 August 2025
  • 61 Time View

সূরা আশ-শামস

সূরা আশ-শামস: সূর্য থেকে আত্মা পর্যন্ত — মানবতার জন্য এক ঐশী সতর্কবার্তা

সূরার পূর্ণ পাঠ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অনুবাদ: শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا (1)
উচ্চারণ: ওয়াশ-শামসি ওয়া দুহাহা
অনুবাদ: শপথ সূর্যের এবং তার প্রভাতের।

وَالْقَمَرِ إِذَا تَلَاهَا (2)
উচ্চারণ: ওয়াল-ক্বামারি ইযা তালাহা
অনুবাদ: এবং শপথ চাঁদের, যখন তা (সূর্যকে) অনুসরণ করে।

وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا (3)
উচ্চারণ: ওয়ান-নাহারি ইযা জল্লাহা
অনুবাদ: এবং শপথ দিনের, যখন তা (সূর্যকে) প্রকাশ করে।

وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا (4)
উচ্চারণ: ওয়াল-লাইলি ইযা ইয়াগশাহা
অনুবাদ: এবং শপথ রাতের, যখন তা (সূর্যকে) আচ্ছাদিত করে।

وَالسَّمَاءِ وَمَا بَنَاهَا (5)
উচ্চারণ: ওয়াস-সামা-ই ওয়া মা বানাহা
অনুবাদ: এবং শপথ আকাশের ও যিনি তা নির্মাণ করেছেন।

وَالْأَرْضِ وَمَا طَحَاهَا (6)
উচ্চারণ: ওয়াল-আর্দি ওয়া মা তোহাহা
অনুবাদ: এবং শপথ পৃথিবীর ও যিনি তা বিছিয়ে দিয়েছেন।

وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا (7)
উচ্চারণ: ওয়া নাফসিন ওয়া মা সাওয়াহা
অনুবাদ: এবং শপথ প্রাণের ও যিনি তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন।

فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا (8)
উচ্চারণ: ফা-আলহামাহা ফুজূরাহা ওয়া তাকওয়াহা
অনুবাদ: অতঃপর তাকে তার পাপ ও তার পরহেযগারির বোধ দান করেছেন।

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (9)
উচ্চারণ: ক্বদ আফলাহা মান জাক্কাহা
অনুবাদ: সফল সেই, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে।

وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا (10)
উচ্চারণ: ওয়া ক্বদ খাবা মান দাস্সাহা
অনুবাদ: ব্যর্থ সেই, যে তাকে কলুষিত করেছে।

كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِطَغْوَاهَا (11)
উচ্চারণ: কাযযাবাত সামূদু বিতাগওয়াহা
অনুবাদ: সামূদ সম্প্রদায় তাদের সীমালঙ্ঘনের কারণে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।

إِذِ انبَعَثَ أَشْقَاهَا (12)
উচ্চারণ: ইযিম্বা’আসা আশক্বাহা
অনুবাদ: যখন তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে অভিশপ্ত ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল।

فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ نَاقَةَ اللَّهِ وَسُقْيَاهَا (13)
উচ্চারণ: ফা-ক্বালা লাহুম রাসূলুল্লাহি নাক্বাতাল্লাহি ওয়া সুকইয়াহা
অনুবাদ: তখন আল্লাহর রসূল বলেছিলেন — “আল্লাহর উটনিকে (অবাধে) পান করতে দাও।”

فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُم بِذَنبِهِمْ فَسَوَّاهَا (14)
উচ্চারণ: ফা-কাযযাবুহু ফা-‘আকরুহা ফাদামদামা আলাইহিম রব্বুহুম বিযানবিহিম ফাসাওয়াহা
অনুবাদ: তারা তাকে মিথ্যা বলল এবং উটনিকে হত্যা করল; ফলে তাদের পাপের কারণে তাদের উপর তাদের প্রতিপালক ধ্বংস নেমে আনলেন এবং সমতল করে দিলেন।

وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا (15)
উচ্চারণ: ওয়া লা ইয়াখাফু উক্ববাহা
অনুবাদ: এবং তিনি এর পরিণামের ভয় করেন না।

ঘটনার সারাংশ

মক্কার আকাশ থেকে সম্প্রতি অবতীর্ণ হলো এক অসাধারণ বার্তা — “সূরা আশ-শামস”। এতে সূর্য, চাঁদ, দিন, রাত, আকাশ, পৃথিবী এবং মানুষের আত্মা — সাতটি মহাজাগতিক ও নৈতিক বাস্তবতার শপথ করে শুরু করা হয়েছে। মূল বার্তা স্পষ্ট: সফল হবে সেই মানুষ, যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে; ব্যর্থ হবে সে, যে আত্মাকে কলুষিত করে।

প্রধান বার্তা

  • প্রাকৃতিক শপথ: সূর্যের দীপ্তি, চাঁদের অনুসরণ, দিনের উজ্জ্বলতা, রাতের আচ্ছাদন — এসব কেবল সৌন্দর্যের কথা নয়, বরং স্রষ্টার সুশৃঙ্খল নিয়মের প্রমাণ।

  • আত্মার শিক্ষা: প্রতিটি মানুষের অন্তরে সৎ ও অসৎ উভয়ের বোধ দান করা হয়েছে। পছন্দ আপনার — পবিত্রতা নাকি কলুষতা।

  • ইতিহাসের সাক্ষী: সামূদ জাতির কাহিনী সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। তারা আল্লাহর উটনির প্রতি অবাধ্য হয়েছিল, ফলে ধ্বংস তাদের উপর নেমে এসেছিল।

ঘটনার পটভূমি

সূরা আশ-শামস অবতীর্ণ হয় মক্কার প্রাথমিক সময়ে, যখন মানুষ আল্লাহর একত্ব, নৈতিক শুদ্ধতা ও অবাধ্যতার পরিণতি সম্পর্কে উদাসীন ছিল। এটি মানুষের মনোযোগ আনে প্রকৃতি ও নৈতিকতার সংযোগের দিকে।

বিশেষ সাক্ষাৎকার — তাফসীর বিশ্লেষণ

ধর্মীয় বিশ্লেষকরা বলছেন:

“এখানে একাধিক শপথের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের বোঝাচ্ছেন যে, যেমন মহাবিশ্বের প্রতিটি উপাদান নিয়মের মধ্যে চলছে, তেমনই মানুষের আত্মাও শুদ্ধতার পথে চললে সফল হবে। আর নৈতিক অবক্ষয় হলে তার পরিণতি ধ্বংস।”

সতর্কতা বার্তা

সামূদের কাহিনী কেবল একটি প্রাচীন ঘটনা নয়; এটি আজকের সমাজের জন্যও সতর্ক সংকেত। যখন অন্যায়, অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন বাড়ে, তখন ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়।

সমাপনী মন্তব্য

সূরা আশ-শামস মানবতার জন্য এক শাশ্বত আহ্বান — নিজেকে শুদ্ধ করো, সত্যের পথে চলো, প্রকৃতি ও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও। সূর্যের মতো দীপ্ত হও, কিন্তু অহংকারে নয়; সত্যে, ন্যায়ে এবং নৈতিকতায়।

লেখক: মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।

— এস এম মেহেদী হাসান

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সূরা আশ-শামস: সূর্য থেকে আত্মা পর্যন্ত — মানবতার জন্য এক ঐশী সতর্কবার্তা

Update Time : 04:11:41 pm, Wednesday, 13 August 2025

সূরা আশ-শামস: সূর্য থেকে আত্মা পর্যন্ত — মানবতার জন্য এক ঐশী সতর্কবার্তা

সূরার পূর্ণ পাঠ

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অনুবাদ: শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

وَالشَّمْسِ وَضُحَاهَا (1)
উচ্চারণ: ওয়াশ-শামসি ওয়া দুহাহা
অনুবাদ: শপথ সূর্যের এবং তার প্রভাতের।

وَالْقَمَرِ إِذَا تَلَاهَا (2)
উচ্চারণ: ওয়াল-ক্বামারি ইযা তালাহা
অনুবাদ: এবং শপথ চাঁদের, যখন তা (সূর্যকে) অনুসরণ করে।

وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا (3)
উচ্চারণ: ওয়ান-নাহারি ইযা জল্লাহা
অনুবাদ: এবং শপথ দিনের, যখন তা (সূর্যকে) প্রকাশ করে।

وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا (4)
উচ্চারণ: ওয়াল-লাইলি ইযা ইয়াগশাহা
অনুবাদ: এবং শপথ রাতের, যখন তা (সূর্যকে) আচ্ছাদিত করে।

وَالسَّمَاءِ وَمَا بَنَاهَا (5)
উচ্চারণ: ওয়াস-সামা-ই ওয়া মা বানাহা
অনুবাদ: এবং শপথ আকাশের ও যিনি তা নির্মাণ করেছেন।

وَالْأَرْضِ وَمَا طَحَاهَا (6)
উচ্চারণ: ওয়াল-আর্দি ওয়া মা তোহাহা
অনুবাদ: এবং শপথ পৃথিবীর ও যিনি তা বিছিয়ে দিয়েছেন।

وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا (7)
উচ্চারণ: ওয়া নাফসিন ওয়া মা সাওয়াহা
অনুবাদ: এবং শপথ প্রাণের ও যিনি তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন।

فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا (8)
উচ্চারণ: ফা-আলহামাহা ফুজূরাহা ওয়া তাকওয়াহা
অনুবাদ: অতঃপর তাকে তার পাপ ও তার পরহেযগারির বোধ দান করেছেন।

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا (9)
উচ্চারণ: ক্বদ আফলাহা মান জাক্কাহা
অনুবাদ: সফল সেই, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে।

وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا (10)
উচ্চারণ: ওয়া ক্বদ খাবা মান দাস্সাহা
অনুবাদ: ব্যর্থ সেই, যে তাকে কলুষিত করেছে।

كَذَّبَتْ ثَمُودُ بِطَغْوَاهَا (11)
উচ্চারণ: কাযযাবাত সামূদু বিতাগওয়াহা
অনুবাদ: সামূদ সম্প্রদায় তাদের সীমালঙ্ঘনের কারণে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।

إِذِ انبَعَثَ أَشْقَاهَا (12)
উচ্চারণ: ইযিম্বা’আসা আশক্বাহা
অনুবাদ: যখন তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে অভিশপ্ত ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল।

فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ نَاقَةَ اللَّهِ وَسُقْيَاهَا (13)
উচ্চারণ: ফা-ক্বালা লাহুম রাসূলুল্লাহি নাক্বাতাল্লাহি ওয়া সুকইয়াহা
অনুবাদ: তখন আল্লাহর রসূল বলেছিলেন — “আল্লাহর উটনিকে (অবাধে) পান করতে দাও।”

فَكَذَّبُوهُ فَعَقَرُوهَا فَدَمْدَمَ عَلَيْهِمْ رَبُّهُم بِذَنبِهِمْ فَسَوَّاهَا (14)
উচ্চারণ: ফা-কাযযাবুহু ফা-‘আকরুহা ফাদামদামা আলাইহিম রব্বুহুম বিযানবিহিম ফাসাওয়াহা
অনুবাদ: তারা তাকে মিথ্যা বলল এবং উটনিকে হত্যা করল; ফলে তাদের পাপের কারণে তাদের উপর তাদের প্রতিপালক ধ্বংস নেমে আনলেন এবং সমতল করে দিলেন।

وَلَا يَخَافُ عُقْبَاهَا (15)
উচ্চারণ: ওয়া লা ইয়াখাফু উক্ববাহা
অনুবাদ: এবং তিনি এর পরিণামের ভয় করেন না।

ঘটনার সারাংশ

মক্কার আকাশ থেকে সম্প্রতি অবতীর্ণ হলো এক অসাধারণ বার্তা — “সূরা আশ-শামস”। এতে সূর্য, চাঁদ, দিন, রাত, আকাশ, পৃথিবী এবং মানুষের আত্মা — সাতটি মহাজাগতিক ও নৈতিক বাস্তবতার শপথ করে শুরু করা হয়েছে। মূল বার্তা স্পষ্ট: সফল হবে সেই মানুষ, যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে; ব্যর্থ হবে সে, যে আত্মাকে কলুষিত করে।

প্রধান বার্তা

  • প্রাকৃতিক শপথ: সূর্যের দীপ্তি, চাঁদের অনুসরণ, দিনের উজ্জ্বলতা, রাতের আচ্ছাদন — এসব কেবল সৌন্দর্যের কথা নয়, বরং স্রষ্টার সুশৃঙ্খল নিয়মের প্রমাণ।

  • আত্মার শিক্ষা: প্রতিটি মানুষের অন্তরে সৎ ও অসৎ উভয়ের বোধ দান করা হয়েছে। পছন্দ আপনার — পবিত্রতা নাকি কলুষতা।

  • ইতিহাসের সাক্ষী: সামূদ জাতির কাহিনী সতর্কবার্তা হিসেবে এসেছে। তারা আল্লাহর উটনির প্রতি অবাধ্য হয়েছিল, ফলে ধ্বংস তাদের উপর নেমে এসেছিল।

ঘটনার পটভূমি

সূরা আশ-শামস অবতীর্ণ হয় মক্কার প্রাথমিক সময়ে, যখন মানুষ আল্লাহর একত্ব, নৈতিক শুদ্ধতা ও অবাধ্যতার পরিণতি সম্পর্কে উদাসীন ছিল। এটি মানুষের মনোযোগ আনে প্রকৃতি ও নৈতিকতার সংযোগের দিকে।

বিশেষ সাক্ষাৎকার — তাফসীর বিশ্লেষণ

ধর্মীয় বিশ্লেষকরা বলছেন:

“এখানে একাধিক শপথের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের বোঝাচ্ছেন যে, যেমন মহাবিশ্বের প্রতিটি উপাদান নিয়মের মধ্যে চলছে, তেমনই মানুষের আত্মাও শুদ্ধতার পথে চললে সফল হবে। আর নৈতিক অবক্ষয় হলে তার পরিণতি ধ্বংস।”

সতর্কতা বার্তা

সামূদের কাহিনী কেবল একটি প্রাচীন ঘটনা নয়; এটি আজকের সমাজের জন্যও সতর্ক সংকেত। যখন অন্যায়, অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন বাড়ে, তখন ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়।

সমাপনী মন্তব্য

সূরা আশ-শামস মানবতার জন্য এক শাশ্বত আহ্বান — নিজেকে শুদ্ধ করো, সত্যের পথে চলো, প্রকৃতি ও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও। সূর্যের মতো দীপ্ত হও, কিন্তু অহংকারে নয়; সত্যে, ন্যায়ে এবং নৈতিকতায়।

লেখক: মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।

— এস এম মেহেদী হাসান