‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই জাতীয় সনদ’: দুটি ঐতিহাসিক দলিলের তাৎপর্য
ঢাকা | ০৫ আগস্ট ২০২৫ —
জাতির সামনে আগামীকাল মঙ্গলবার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ব্যস্ত রয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করার কাজে। রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত দুটি বিষয়—জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ—একইসাথে আলোচনায় এলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলো ভিন্ন উদ্দেশ্য ও কাঠামোর দুটি স্বতন্ত্র দলিল।
কী হলো ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’?
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ মূলত ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার একটি দলিল। এটি একটি ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকৃতি দেবে এবং অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, সেটিকে বৈধতা প্রদান করবে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথম থেকেই ছাত্র-তরুণ নেতৃত্ব এই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছিল। পরে সরকার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নিজ উদ্যোগেই এটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রাপ্ত খসড়ায় দেখা গেছে, ঘোষণাপত্রে মোট ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১টি দফায় উল্লেখ আছে মুক্তিযুদ্ধ, গণআন্দোলন, বাকশাল, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরের ঘটনার মতো নানা ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ। এক দফায় বলা হয়েছে, “জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।”
বাকি দফাগুলোতে রয়েছে—গণতান্ত্রিক সংস্কারের অঙ্গীকার, গুম-খুন-নিপীড়নের বিচার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতিশ্রুতি এবং বৈষম্যহীন সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা।
গুরুত্বপূর্ণ একটি দফায় বলা হয়েছে, ‘ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪’–কে সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হবে এবং এ ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিলে যুক্ত করা হবে। যদিও বিএনপি চায়, এটি শুধু চতুর্থ তফসিলে সংযুক্ত হোক, প্রস্তাবনায় নয়।
এই ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ’ কী?
অন্যদিকে, ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ হলো একটি রাজনৈতিক দলিল, যা মূলত আগামী দিনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এ সনদের খসড়া তৈরি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সনদের খসড়াটি তিনটি ভাগে বিভক্ত:
-
সনদের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট
-
যেসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে
-
সংস্কার বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার
এখানে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে।
আইনগত ভিত্তির দাবি ও রাজনৈতিক মতানৈক্য
যদিও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল ‘অঙ্গীকার’ শব্দটিকে দুর্বল মনে করে। তারা চায়, জাতীয় সনদে যেন আইনি ভিত্তি ও বাধ্যবাধকতা থাকে।
সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে আরও একদফা রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনায় ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশ নিয়েছে। এই দলগুলোই জুলাই জাতীয় সনদে সই করবে। পরবর্তী সংবিধান সংস্কারে এ সনদ গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
🔗 ভিডিও লিংক (YouTube):
“জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ কী? | Interim Government & Political Reform Explained”
👉 https://youtu.be/UfHAu7VmDmo
— এস এম মেহেদী হাসান/ সালেহ/ তাবাসসুম
Reporter Name 




























