1:28 pm, Sunday, 23 November 2025

সড়ক ছাড়াই ৬৯ লাখ টাকার কালভার্ট নির্মাণ: জনস্বার্থ না ব্যক্তিস্বার্থে?

সড়ক ছাড়াই ৬৯ লাখ টাকার কালভার্ট নির্মাণ: জনস্বার্থ না ব্যক্তিস্বার্থে?

দুমকি, পটুয়াখালী | ০৩ আগস্ট ২০২৫  পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের সাতানী গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি বক্স কালভার্ট, যার জন্য ব্যয় হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে ৬৯ লাখ টাকা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই কালভার্ট দুটি কোথাও সংযুক্ত নয়—এর চারপাশে নেই কোনো সড়ক, নেই কোনো যাতায়াতের পথ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।

প্রশ্ন উঠছে—কার স্বার্থে এই নির্মাণ?

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিশেষ বরাদ্দ খাতে কালভার্ট দুটির একটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা, অন্যটিতে ৩৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স রুকাইয়া ট্রেডার্স। কিন্তু বাস্তবায়নের পর পরই স্থানীয়রা দেখতে পান, কালভার্ট দুটির আশেপাশে কোনো সড়ক নেই। ফলে এটি কার্যত এক টুকরো কংক্রিটের অবকাঠামো হয়ে পড়ে রয়েছে।

এলাকাবাসীর হতাশা ও ক্ষোভ

স্থানীয় বাসিন্দা খলিল হাওলাদার বলেন,

“আমরা তো রাস্তা চাইছিলাম, অথচ এখানে বানিয়ে দিলো দুইটা কালভার্ট, কিন্তু তার কোনো রাস্তাই নাই! এটা কোনো সাধারণ মানুষের কাজে আসবে না।”

অন্য এক বাসিন্দা আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন,

“এই কালভার্ট শুধু সাবেক এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মসজিদ কমপ্লেক্সে যাওয়ার পথ হিসেবে বানানো হয়েছে। কিন্তু রাস্তা না থাকায় সেটাও কেউ ব্যবহার করতে পারছে না। এটা তো সরকারি টাকার অপচয়।”

কর্তৃপক্ষের অবস্থান

ঠিকাদার মেহেদী হাসান রোহান জানান,

“আমি শুধু কাজ করেছি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশে। সবকিছু টেন্ডার অনুযায়ী হয়েছে। অনিয়মের কোনো প্রশ্নই আসে না।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ আলী বলেন,

“এই প্রকল্পটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রস্তাবে করা হয়েছিল। আমরা বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ করেছি, নিজস্ব স্বাধীনতা ছিল না।”

জনস্বার্থ বনাম রাজনৈতিক সুবিধা

এই প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বড় প্রশ্ন উঠেছে—সরকারি অর্থের এই ব্যবহারে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে, নাকি এটি ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার হচ্ছে? উন্নয়ন কি শুধুই কাগজে-কলমে, নাকি বাস্তবেও?

বিশ্লেষকদের মতে, রাস্তা ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হলে তা শুধু অর্থ অপচয়ই নয়, বরং জনগণের আস্থার ওপর আঘাত। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া এমন উন্নয়ন প্রকল্প ভবিষ্যতের জন্য একটি হুঁশিয়ারি সংকেত।

 

—  জাকির হোসেন হাওলাদার/ সালেহ/ তাবাসসুম

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সড়ক ছাড়াই ৬৯ লাখ টাকার কালভার্ট নির্মাণ: জনস্বার্থ না ব্যক্তিস্বার্থে?

Update Time : 07:32:56 pm, Sunday, 3 August 2025

সড়ক ছাড়াই ৬৯ লাখ টাকার কালভার্ট নির্মাণ: জনস্বার্থ না ব্যক্তিস্বার্থে?

দুমকি, পটুয়াখালী | ০৩ আগস্ট ২০২৫  পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের সাতানী গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি বক্স কালভার্ট, যার জন্য ব্যয় হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে ৬৯ লাখ টাকা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই কালভার্ট দুটি কোথাও সংযুক্ত নয়—এর চারপাশে নেই কোনো সড়ক, নেই কোনো যাতায়াতের পথ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।

প্রশ্ন উঠছে—কার স্বার্থে এই নির্মাণ?

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিশেষ বরাদ্দ খাতে কালভার্ট দুটির একটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা, অন্যটিতে ৩৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স রুকাইয়া ট্রেডার্স। কিন্তু বাস্তবায়নের পর পরই স্থানীয়রা দেখতে পান, কালভার্ট দুটির আশেপাশে কোনো সড়ক নেই। ফলে এটি কার্যত এক টুকরো কংক্রিটের অবকাঠামো হয়ে পড়ে রয়েছে।

এলাকাবাসীর হতাশা ও ক্ষোভ

স্থানীয় বাসিন্দা খলিল হাওলাদার বলেন,

“আমরা তো রাস্তা চাইছিলাম, অথচ এখানে বানিয়ে দিলো দুইটা কালভার্ট, কিন্তু তার কোনো রাস্তাই নাই! এটা কোনো সাধারণ মানুষের কাজে আসবে না।”

অন্য এক বাসিন্দা আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন,

“এই কালভার্ট শুধু সাবেক এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের মসজিদ কমপ্লেক্সে যাওয়ার পথ হিসেবে বানানো হয়েছে। কিন্তু রাস্তা না থাকায় সেটাও কেউ ব্যবহার করতে পারছে না। এটা তো সরকারি টাকার অপচয়।”

কর্তৃপক্ষের অবস্থান

ঠিকাদার মেহেদী হাসান রোহান জানান,

“আমি শুধু কাজ করেছি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশে। সবকিছু টেন্ডার অনুযায়ী হয়েছে। অনিয়মের কোনো প্রশ্নই আসে না।”

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ আলী বলেন,

“এই প্রকল্পটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রস্তাবে করা হয়েছিল। আমরা বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ করেছি, নিজস্ব স্বাধীনতা ছিল না।”

জনস্বার্থ বনাম রাজনৈতিক সুবিধা

এই প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বড় প্রশ্ন উঠেছে—সরকারি অর্থের এই ব্যবহারে সাধারণ মানুষের উপকার হচ্ছে, নাকি এটি ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার হচ্ছে? উন্নয়ন কি শুধুই কাগজে-কলমে, নাকি বাস্তবেও?

বিশ্লেষকদের মতে, রাস্তা ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হলে তা শুধু অর্থ অপচয়ই নয়, বরং জনগণের আস্থার ওপর আঘাত। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া এমন উন্নয়ন প্রকল্প ভবিষ্যতের জন্য একটি হুঁশিয়ারি সংকেত।

 

—  জাকির হোসেন হাওলাদার/ সালেহ/ তাবাসসুম