1:28 pm, Sunday, 23 November 2025

বঙ্গবন্ধুর ছবি ঘিরে বিতর্ক: পিরোজপুরের স্কুলে উত্তেজনা, প্রধান শিক্ষিকার অটল অবস্থান

বঙ্গবন্ধুর ছবি ঘিরে বিতর্ক: পিরোজপুরের স্কুলে উত্তেজনা, প্রধান শিক্ষিকার অটল অবস্থান

নেছারাবাদ, পিরোজপুর | ৩ আগস্ট ২০২৫  পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সোনারঘোপ রমেশ চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ঝুলিয়ে রাখাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিভক্তি ও মতপার্থক্য যেন প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তার প্রভাব ফেলছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, একটি নিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকী ব্যক্তিত্বের ছবি ঝুলিয়ে রাখা পক্ষপাতদুষ্টতা এবং অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক প্রচারণার শামিল।

উপজেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“বঙ্গবন্ধুর অবদান আমরা অস্বীকার করছি না, কিন্তু একটি নিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবল এক দলের নেতার ছবি টাঙানো হলে তা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অবিচার।”

বিএনপির উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আজাহারুল ইসলাম টুটুল আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন,

“১৭ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। শুধু বঙ্গবন্ধু ও হাসিনার ছবি টাঙিয়ে দিয়ে জাতীয় ইতিহাসকে সংকুচিত করা হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে প্রধান শিক্ষিকা

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রেজাউল কবির বলেন,

“আমরা সহকর্মীরা প্রধান শিক্ষিকাকে বারবার বলেছি ছবি সরাতে। কিন্তু তিনি তা করেননি।”

তবে প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিন তাঁর অবস্থান থেকে এক চুলও সরেননি। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন,

“আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতা নন, জাতির পিতা। তাঁকে আমি হৃদয়ে ধারণ করি। ছবি নামানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন,

“বঙ্গবন্ধুকে অপমান করার প্রশ্নই আসে না। কেউ জোর করে যদি ছবি নামায়, সেটা তাদের দায়িত্ব হবে, আমার নয়।”

প্রশাসনের বক্তব্য: সরকারি আদেশ নেই

নেছারাবাদ উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দীন জানান,

“সরকার পতনের পরে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে কোনো লিখিত নির্দেশনা পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”

প্রেক্ষাপট: রাজনৈতিক পরিবর্তনের ছায়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো হলেও, শুধুমাত্র এই একটি বিদ্যালয়ে এখনও বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানো রয়েছে। ফলে বিষয়টি এলাকায় রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

উপসংহার: শ্রদ্ধা না রাজনৈতিক বিতর্ক?

জাতির পিতার ছবি কি ইতিহাস ও জাতীয় চেতনার প্রকাশ, না কি এটি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? এই প্রশ্ন এখন শুধু নেছারাবাদেই নয়, পুরো দেশেই প্রাসঙ্গিক।

যে প্রশ্নটি সমাজের সামনে উঠে আসছে তা হলো—জাতীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে রাজনীতির বাইরে রাখতে পারছে কি আমরা?

—  মাহমুদুল হাসান/ সালেহ/ তাবাসসুম

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

বঙ্গবন্ধুর ছবি ঘিরে বিতর্ক: পিরোজপুরের স্কুলে উত্তেজনা, প্রধান শিক্ষিকার অটল অবস্থান

Update Time : 06:42:01 pm, Sunday, 3 August 2025

বঙ্গবন্ধুর ছবি ঘিরে বিতর্ক: পিরোজপুরের স্কুলে উত্তেজনা, প্রধান শিক্ষিকার অটল অবস্থান

নেছারাবাদ, পিরোজপুর | ৩ আগস্ট ২০২৫  পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সোনারঘোপ রমেশ চন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ঝুলিয়ে রাখাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিভক্তি ও মতপার্থক্য যেন প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তার প্রভাব ফেলছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, একটি নিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকী ব্যক্তিত্বের ছবি ঝুলিয়ে রাখা পক্ষপাতদুষ্টতা এবং অনানুষ্ঠানিক রাজনৈতিক প্রচারণার শামিল।

উপজেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“বঙ্গবন্ধুর অবদান আমরা অস্বীকার করছি না, কিন্তু একটি নিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবল এক দলের নেতার ছবি টাঙানো হলে তা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অবিচার।”

বিএনপির উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আজাহারুল ইসলাম টুটুল আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন,

“১৭ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। শুধু বঙ্গবন্ধু ও হাসিনার ছবি টাঙিয়ে দিয়ে জাতীয় ইতিহাসকে সংকুচিত করা হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারণ নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে প্রধান শিক্ষিকা

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রেজাউল কবির বলেন,

“আমরা সহকর্মীরা প্রধান শিক্ষিকাকে বারবার বলেছি ছবি সরাতে। কিন্তু তিনি তা করেননি।”

তবে প্রধান শিক্ষিকা শামীমা ইয়াছমিন তাঁর অবস্থান থেকে এক চুলও সরেননি। আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন,

“আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধু শুধু একজন নেতা নন, জাতির পিতা। তাঁকে আমি হৃদয়ে ধারণ করি। ছবি নামানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন,

“বঙ্গবন্ধুকে অপমান করার প্রশ্নই আসে না। কেউ জোর করে যদি ছবি নামায়, সেটা তাদের দায়িত্ব হবে, আমার নয়।”

প্রশাসনের বক্তব্য: সরকারি আদেশ নেই

নেছারাবাদ উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দীন জানান,

“সরকার পতনের পরে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে কোনো লিখিত নির্দেশনা পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”

প্রেক্ষাপট: রাজনৈতিক পরিবর্তনের ছায়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানো হলেও, শুধুমাত্র এই একটি বিদ্যালয়ে এখনও বঙ্গবন্ধুর ছবি টাঙানো রয়েছে। ফলে বিষয়টি এলাকায় রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

উপসংহার: শ্রদ্ধা না রাজনৈতিক বিতর্ক?

জাতির পিতার ছবি কি ইতিহাস ও জাতীয় চেতনার প্রকাশ, না কি এটি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? এই প্রশ্ন এখন শুধু নেছারাবাদেই নয়, পুরো দেশেই প্রাসঙ্গিক।

যে প্রশ্নটি সমাজের সামনে উঠে আসছে তা হলো—জাতীয় ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে রাজনীতির বাইরে রাখতে পারছে কি আমরা?

—  মাহমুদুল হাসান/ সালেহ/ তাবাসসুম