12:45 pm, Sunday, 23 November 2025

একই পরিবারের ৫ জনকে পুড়িয়ে হত্যা, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছে মানুষ

একই পরিবারের ৫ জনকে পুড়িয়ে হত্যা, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছে মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ০২ আগষ্ট ২০২৫ —

ভারতের বিহার রাজ্যের তেতগামা গ্রামে ‘ডাইনি’ সন্দেহে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ৭১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ও তার চার সন্তানকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারে উন্মত্ত জনতা। অভিযোগ— তারা নাকি গ্রামে জাদুবিদ্যা চালিয়ে আসছিলেন।

ঘটনার বর্ণনা

রোববার (৬ জুলাই) রাত ১০টার দিকে স্থানীয় এক আত্মীয়ের বাড়ির সামনে জড়ো হয় গ্রামবাসী। রাত পেরোনোর আগেই পুড়িয়ে মারা হয় মানীশা দেবীর (ছদ্মনাম) শাশুড়ি কাতো ওরাওনসহ পরিবারের আরও চার সদস্যকে।

গ্রামবাসীদের দাবি, এই পরিবারটি জাদুবিদ্যা বা টোনা-টোটকার মাধ্যমে গ্রামে রোগ-দুর্ভাগ্য ডেকে আনছিল। সন্দেহ ও কুসংস্কারের বশে তারা প্রথমে পরিবারটিকে বেধড়ক মারধর করে, পরে গায়ে আগুন দেয়। পুলিশের দাবি, তদন্ত চলছে, তবে আত্মীয়রা বলছে— পুলিশের কাছে সাহায্য চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।

‘ডাইনি’ সন্দেহে হত্যা: বিচ্ছিন্ন নয় এই ঘটনা

ভারতে এমন কুসংস্কারনির্ভর হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে জাদুবিদ্যা সন্দেহে ২,৫০০-র বেশি নারীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তেতগামার ঘটনা ভিন্ন— কারণ একসঙ্গে একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা এক নজিরবিহীন নৃশংসতা।

অন্ধবিশ্বাসের বলি আদিবাসী সমাজ

নিহত ও অভিযুক্ত সবাই আদিবাসী ওরাওন সম্প্রদায়ের সদস্য। সমাজকর্মীরা বলছেন, এসব দুর্ঘটনার মূল শিকড় হলো শিক্ষা ও সচেতনতায় ঘাটতি এবং দীর্ঘদিনের সামাজিক বৈষম্য। ভারতের ঝাড়খণ্ড ও বিহারে ‘ডাইনি বিরোধী আইন’ থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল।

এই ঘটনার পর আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে বহু পরিবার। অনেকে নিজেদের বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে গেছে। একজন গ্রামবাসী বলেন, “এখন এখানে ভূতের ভয় নয়, মানুষে মানুষে ভয়।”

— এস এম মেহেদী হাসান/ তাবাসসুম

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

একই পরিবারের ৫ জনকে পুড়িয়ে হত্যা, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছে মানুষ

Update Time : 10:49:13 pm, Saturday, 2 August 2025

একই পরিবারের ৫ জনকে পুড়িয়ে হত্যা, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছে মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ০২ আগষ্ট ২০২৫ —

ভারতের বিহার রাজ্যের তেতগামা গ্রামে ‘ডাইনি’ সন্দেহে একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ৭১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ও তার চার সন্তানকে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে মারে উন্মত্ত জনতা। অভিযোগ— তারা নাকি গ্রামে জাদুবিদ্যা চালিয়ে আসছিলেন।

ঘটনার বর্ণনা

রোববার (৬ জুলাই) রাত ১০টার দিকে স্থানীয় এক আত্মীয়ের বাড়ির সামনে জড়ো হয় গ্রামবাসী। রাত পেরোনোর আগেই পুড়িয়ে মারা হয় মানীশা দেবীর (ছদ্মনাম) শাশুড়ি কাতো ওরাওনসহ পরিবারের আরও চার সদস্যকে।

গ্রামবাসীদের দাবি, এই পরিবারটি জাদুবিদ্যা বা টোনা-টোটকার মাধ্যমে গ্রামে রোগ-দুর্ভাগ্য ডেকে আনছিল। সন্দেহ ও কুসংস্কারের বশে তারা প্রথমে পরিবারটিকে বেধড়ক মারধর করে, পরে গায়ে আগুন দেয়। পুলিশের দাবি, তদন্ত চলছে, তবে আত্মীয়রা বলছে— পুলিশের কাছে সাহায্য চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।

‘ডাইনি’ সন্দেহে হত্যা: বিচ্ছিন্ন নয় এই ঘটনা

ভারতে এমন কুসংস্কারনির্ভর হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরো (NCRB) অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে জাদুবিদ্যা সন্দেহে ২,৫০০-র বেশি নারীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তেতগামার ঘটনা ভিন্ন— কারণ একসঙ্গে একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা এক নজিরবিহীন নৃশংসতা।

অন্ধবিশ্বাসের বলি আদিবাসী সমাজ

নিহত ও অভিযুক্ত সবাই আদিবাসী ওরাওন সম্প্রদায়ের সদস্য। সমাজকর্মীরা বলছেন, এসব দুর্ঘটনার মূল শিকড় হলো শিক্ষা ও সচেতনতায় ঘাটতি এবং দীর্ঘদিনের সামাজিক বৈষম্য। ভারতের ঝাড়খণ্ড ও বিহারে ‘ডাইনি বিরোধী আইন’ থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ দুর্বল।

এই ঘটনার পর আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে বহু পরিবার। অনেকে নিজেদের বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে গেছে। একজন গ্রামবাসী বলেন, “এখন এখানে ভূতের ভয় নয়, মানুষে মানুষে ভয়।”

— এস এম মেহেদী হাসান/ তাবাসসুম