বিয়ে করায় স্কুল থেকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক, শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত মনিরা
মহেশপুর, ঝিনাইদহ | ২৯ জুলাই ২০২৫ — বাবার অকাল মৃত্যু, সংসারের অভাব-অনটন—সবকিছু মিলিয়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের রিনা আক্তার মনিরার কিশোর বয়সেই ঘুরে গেল জীবনের মোড়। চোখে ছিল পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন, অথচ বাস্তবতা তাকে ঠেলে দেয় বিয়ের পিঁড়িতে। তবুও মনিরা থেমে যেতে চায়নি। বিয়ের পরও চেয়েছিল স্কুলে ফিরে পড়াশোনা করে শিক্ষক হওয়ার সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় নিজেরই স্কুল কর্তৃপক্ষ।
গত ২০ জুলাই মা–কে সঙ্গে নিয়ে মনিরা হাজির হয় স্থানীয় স্বরুপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক মমিনুল রহমান জানিয়ে দেন—“বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না।” আর তাতেই শেষ হয়ে যায় মনিরার স্বপ্নের ক্লাসরুমে ফেরার চেষ্টা।
👉 “নায়িকার বিয়ে করার ইচ্ছা ‘ভালো হুজুরকে’ — মিথ্যাবাদী ইমামদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সাংবাদিক!”
সাংবাদিকের মুখে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ইসলামী মূল্যবোধ নিয়ে সমসাময়িক বিশ্লেষণ।
অভিযোগ, অনুরোধ—তবু কোনো সুরাহা নয়
মনিরা ও তার মা প্রধান শিক্ষককে অনেক অনুরোধ করেন তাকে ক্লাসে বসতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রধান শিক্ষক অনড়। তার দাবি, “স্কুলের অভ্যন্তরীণ নিয়ম অনুযায়ী বিবাহিত ছাত্রীদের ক্লাসে বসতে দেওয়া হয় না।” এ ঘটনায় হতাশ হয়ে মনিরা লিখিত অভিযোগ দেন মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। অভিযোগ জমা দেওয়ার পরও মিলেনি কোনো প্রতিকার।
এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিনেশ চন্দ্র পাল জানান, “অভিযোগ পেয়েই প্রধান শিক্ষককে ফোন করে শিক্ষার্থীকে পুনরায় ক্লাসে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাদিজা আক্তার বলেন, “বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কান্না নয়, কলম ধরতে চায় মনিরা
মনিরা জানায়, “আমি লেখাপড়া করে শিক্ষক হতে চাই। বিয়ে হয়ে গেছে মানে এই নয় যে আমার স্বপ্ন শেষ। আমি স্কুলে ফিরে যেতে চাই।”
এই বক্তব্যে তার হতাশার চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট হয় প্রত্যয়—একটি মেয়ের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার কোনো অবস্থাতেই খর্ব করা যায় না।
আইন কী বলে?
বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনাতেই বলা হয়নি যে বিবাহিত শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়তে পারবে না। ফলে প্রধান শিক্ষকের এমন ‘অভ্যন্তরীণ আইন’-এর ভিত্তি নেই বলেই মনে করছেন অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি শুধু একটি শিক্ষার্থীর অধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং একটি ভুল দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে—যেখানে মেয়েদের বিয়েই হয়ে উঠবে শিক্ষা বন্ধের কারণ।
— মুরছালিন/ তাবাসসুম/ এস এম মেহেদী
নিজস্ব প্রতিবেদক 





















