যাত্রী ছাউনি আছে, তবে যাত্রীদের দখলে নেই
টাঙ্গাইল | ২৭ জুলাই ২০২৫ — টাঙ্গাইলের সখীপুরের বড়চওনা বাজারে একটি যাত্রী ছাউনি। নাম তার ‘যাত্রী ছাউনি’ হলেও বাস্তবে সেখানে যাত্রীদের কোনো জায়গা নেই।
তিন কক্ষবিশিষ্ট ছাউনিটি এখন পুরোটাই ব্যবসায়ীদের দখলে। মাঝের কক্ষ, যা ছিল যাত্রীদের বসার জন্য নির্ধারিত—সেটি এখন চা-পানের দোকান। বাকি দুটি কক্ষে চলছে ফলের দোকান আর মোবাইল সার্ভিসিং ব্যবসা। বসার বেঞ্চগুলোকে সরিয়ে দিয়ে জায়গা করে নিয়েছে কাঠের তাক, চায়ের চুলা আর সার্ভিসিং টুলস।
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য—এই দোকান ঘরগুলো নাকি মাসিক ভাড়ায় চলে। ফলের দোকানে ২ লাখ ৫০ হাজার এবং মোবাইল সার্ভিসিং ঘরে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জামানত নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে মাসে তিন হাজার টাকা করে ভাড়া। অথচ নীতিমালায় কোথাও এমন লিজ বা ভাড়ার কথা নেই।
প্রশ্ন একটাই: ছাউনি কি ব্যবসার জায়গা, নাকি অপেক্ষার আশ্রয়?
প্রকৃত যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ জায়গাটি নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় হাট ইজারা কমিটি। যাত্রী বসবে কোথায়? তাদের জন্য নেই কোনো ছায়া, নেই কোনো বিশ্রামের স্থান।
নারী-শিশু-বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষকে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রাস্তার ধারে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল এমন পাঁচটি যাত্রী ছাউনি। মাত্র পাঁচ-ছয় বছরের ব্যবধানেই সবগুলো ছাউনির ছাদ থেকে পানি পড়তে শুরু করে। এখন পাঁচটির চারটিই কার্যত দোকানে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে, যাত্রী কক্ষেই চলছে টিকিট কাউন্টার বা স্টোর রুম।
প্রশাসনের চোখ কি সত্যিই বন্ধ?
যাত্রীদের অভিযোগ অনেকদিন ধরেই। কিন্তু এর সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
লিজ গ্রহীতা আল আমিন স্বীকার করেছেন—জামানত ও ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে তার দাবি, “সব নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রনী জানিয়েছেন, ছাউনিগুলো জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। তবে ভোগান্তি লাঘবে স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
জেলা পরিষদ সচিব শামসুন্নাহার বলেছেন, “সড়ক বিভাগ ও জেলা পরিষদ যৌথভাবে ছাউনিগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবে। অনেক লিজের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শেষ প্রশ্ন: এই ছাউনিগুলো যদি যাত্রীদের আশ্রয় না হয়, তবে আদৌ এগুলোকে যাত্রী ছাউনি বলা যায় কি?
— আহমেদ সাজু/ তাবাসসুম/ সালেহ
Reporter Name 



























