সরকারের ভেতর আরেক সরকার: অন্তর্বর্তী ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সতর্ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ঢাকা | ২৫ জুলাই ২০২৫ —
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তাঁর ভাষায়, “আমরা সরকার বলতে যাদের দেখি, তাদের ভেতরেই রয়েছে আরেকটি সরকার। এটা আর কোনো গোপন বিষয় নয়।”
এই মন্তব্য তিনি করেন আজ বুধবার, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায়। আলোচনার বিষয় ছিল: “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ”।
দেবপ্রিয় বলেন, “বর্তমানে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দলীয় নিরপেক্ষতার প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। জনগণের চোখে পরিষ্কার, একটি অদৃশ্য অথচ শক্তিশালী ক্ষমতার বলয় সরকারের ভিতরে সক্রিয় রয়েছে।”
তিনি জোর দেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার যেন ‘অনন্তকালীন’ সরকার না হয়ে পড়ে। তার মতে, এ সময় সরকারের উচিত নিরপেক্ষতার প্রমাণ দেওয়া, জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করা এবং স্পষ্ট করে জানানো—এই সরকার কী দিয়ে শেষ করতে চায়।
সরকারি সংস্কার ও নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ
তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী চেতনায় একটি সরকার এলেও তা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিফলিত হয়নি। দুর্বল জনগোষ্ঠী, নারী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, এমনকি লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষেরাও উপেক্ষিত রয়ে গেছে।”
সরকারের নৈতিক অবস্থান অনির্ধারিত উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, “যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, বাস্তবে তা স্পষ্ট হয়নি। উৎপাদনশীল উদ্যোক্তারা পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারেননি।”
নির্বাচন ও নিরাপত্তার প্রশ্নে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা
একটি প্রকৃত, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “এটা স্পষ্ট যে প্রশাসনিক ও প্রচলিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একা এর জন্য যথেষ্ট নয়। সেনাবাহিনীর সক্রিয় ও সরাসরি অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।”
তার মতে, সেনাবাহিনীকে ‘ইন এইড টু সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ নয়, বরং একটি স্বতন্ত্র ও দায়িত্বশীল ভূমিকায় দেখা দরকার।
‘ডেস্ক ক্লিয়ারিং লিস্ট’ এবং এক্সিট পলিসির আহ্বান
দেবপ্রিয় আহ্বান জানান, সরকারের উচিত এখন একটি স্পষ্ট ‘ডেস্ক ক্লিয়ারিং লিস্ট’ তৈরি করা। প্রধান উপদেষ্টা যেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন—সরকার কী সংস্কার সম্পন্ন করেছে এবং কোনগুলো অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে।
“সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া,”—জানিয়ে তিনি বলেন, “নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও উদ্যোক্তাদের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারকে ঘিরে আলোচনায় অংশ নেওয়া। সরকার আসবে–যাবে, কিন্তু রাষ্ট্র ও জনগণ থাকবে। এখন সময় ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতির।”
বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ফরহাদ মজহার, পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী সারা হোসেন, গবেষক আলতাফ পারভেজ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন, বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, গবেষক মাহা মীর্জা, ও পিআইবির গবেষণা বিশেষজ্ঞ সহুল আহমদ প্রমুখ।
আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
— তাবাসসুম/সালেহ / এস এম মেহেদী
Reporter Name 



























