1:05 pm, Sunday, 23 November 2025

নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজা শুরু

  • Reporter Name
  • Update Time : 04:44:20 pm, Friday, 25 July 2025
  • 166 Time View

নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাসভবনের জন্য নতুন ঠিকানা নির্ধারণে প্রস্তুতি

ঢাকা | ২৪ জুলাই ২০২৫  — আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা না হলেও নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে উপযুক্ত বাসভবন নির্ধারণে প্রক্রিয়া শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

নিরাপত্তা, পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার দিক বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য হেয়ার রোড এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’ অগ্রাধিকার পেয়েছে।

বাসভবনের জন্য সুপারিশ জমা

নির্বাচিত সরকারের জন্য আবাসন নির্ধারণে ৭ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব। তারা রাজধানীর সম্ভাব্য এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলো এবং যমুনা ভবনকে সমন্বিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর আবাসন হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।

গণভবন আর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নয়

টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে অবস্থান করলেও, এখন আর কোনো সরকারপ্রধান সেখানে থাকবেন না। কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আগামী ৫ আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন হবে।

যমুনা ও হেয়ার রোড: নতুন প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ঠিকানা

যমুনা ভবনের আয়তন প্রায় সোয়া তিন একর এবং এটি বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পাশের দুটি বাংলো বাড়িতে বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা থাকছেন।

কমিটির মতে, এসব স্থাপনাকে একত্র করে সমন্বিতভাবে আধুনিক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গড়ে তোলা সম্ভব।

শেরেবাংলা নগর বিকল্প নয়

কমিটি বিকল্প হিসেবে শেরেবাংলা নগরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পুরোনো স্থানটি পরিদর্শন করলেও, লুই আই কানের নকশার কারণে সেখানে বড় ধরনের নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হবে বলে প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে। ফলে, হেয়ার রোডই প্রধান ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মন্ত্রীদের বাসস্থান ঘিরেও সংকট

বর্তমানে রাজধানীর মিন্টো রোড, হেয়ার রোড এবং বেইলি রোডে মন্ত্রীদের জন্য ১৫টি বাংলো ও ৩০টি ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট’ থাকলেও, তার বেশিরভাগই অন্য দপ্তরের বিচারপতি ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দখলে রয়েছে।

সূত্র জানায়, ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টিতে বিচারপতিরা এবং বাকি ফ্ল্যাটগুলোয় উপদেষ্টা, কমিশনার ও আমলারা অবস্থান করছেন। অথচ সচিবদের জন্য পৃথক ভবন থাকা সত্ত্বেও তাঁরা মন্ত্রীদের অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থান করছেন।

ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে, মিন্টো রোডের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর, বেইলি রোডের ২০ ও ২১ নম্বর বাংলো ভেঙে সেখানে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে মন্ত্রীদের জন্য আধুনিক বাসস্থান গড়ে তোলা যেতে পারে। তবে এসব ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হবে।

অপরিকল্পিত বরাদ্দে প্রশাসনিক জটিলতা

পর্যাপ্ত খালি ফ্ল্যাট থাকার পরও মন্ত্রীদের জন্য নতুন বাসভবন খোঁজার পেছনে মূল কারণ হলো—উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিব্রত তৈরি হবে।

এ কারণে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নতুন মন্ত্রীদের জন্য বিকল্প বাসা নির্ধারণ করছে সরকার।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

২০ জুলাই মুঠোফোনে অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির প্রধান ফারুক আহম্মেদ বলেন,

“নির্বাচিত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের জন্য কী করণীয়, সে বিষয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।”

— তাবাসসুম/সালেহ / এস এম মেহেদী

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজা শুরু

Update Time : 04:44:20 pm, Friday, 25 July 2025

নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাসভবনের জন্য নতুন ঠিকানা নির্ধারণে প্রস্তুতি

ঢাকা | ২৪ জুলাই ২০২৫  — আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা না হলেও নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে উপযুক্ত বাসভবন নির্ধারণে প্রক্রিয়া শুরু করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

নিরাপত্তা, পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার দিক বিবেচনায় সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য হেয়ার রোড এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’ অগ্রাধিকার পেয়েছে।

বাসভবনের জন্য সুপারিশ জমা

নির্বাচিত সরকারের জন্য আবাসন নির্ধারণে ৭ জুলাই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব। তারা রাজধানীর সম্ভাব্য এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলো এবং যমুনা ভবনকে সমন্বিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর আবাসন হিসেবে গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।

গণভবন আর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নয়

টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে অবস্থান করলেও, এখন আর কোনো সরকারপ্রধান সেখানে থাকবেন না। কারণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। আগামী ৫ আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন হবে।

যমুনা ও হেয়ার রোড: নতুন প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ঠিকানা

যমুনা ভবনের আয়তন প্রায় সোয়া তিন একর এবং এটি বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর পাশের দুটি বাংলো বাড়িতে বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা থাকছেন।

কমিটির মতে, এসব স্থাপনাকে একত্র করে সমন্বিতভাবে আধুনিক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গড়ে তোলা সম্ভব।

শেরেবাংলা নগর বিকল্প নয়

কমিটি বিকল্প হিসেবে শেরেবাংলা নগরের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পুরোনো স্থানটি পরিদর্শন করলেও, লুই আই কানের নকশার কারণে সেখানে বড় ধরনের নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হবে বলে প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে। ফলে, হেয়ার রোডই প্রধান ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মন্ত্রীদের বাসস্থান ঘিরেও সংকট

বর্তমানে রাজধানীর মিন্টো রোড, হেয়ার রোড এবং বেইলি রোডে মন্ত্রীদের জন্য ১৫টি বাংলো ও ৩০টি ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট’ থাকলেও, তার বেশিরভাগই অন্য দপ্তরের বিচারপতি ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দখলে রয়েছে।

সূত্র জানায়, ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১২টিতে বিচারপতিরা এবং বাকি ফ্ল্যাটগুলোয় উপদেষ্টা, কমিশনার ও আমলারা অবস্থান করছেন। অথচ সচিবদের জন্য পৃথক ভবন থাকা সত্ত্বেও তাঁরা মন্ত্রীদের অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থান করছেন।

ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে, মিন্টো রোডের ৩৩ ও ৩৪ নম্বর, বেইলি রোডের ২০ ও ২১ নম্বর বাংলো ভেঙে সেখানে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে মন্ত্রীদের জন্য আধুনিক বাসস্থান গড়ে তোলা যেতে পারে। তবে এসব ভবনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হবে।

অপরিকল্পিত বরাদ্দে প্রশাসনিক জটিলতা

পর্যাপ্ত খালি ফ্ল্যাট থাকার পরও মন্ত্রীদের জন্য নতুন বাসভবন খোঁজার পেছনে মূল কারণ হলো—উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিব্রত তৈরি হবে।

এ কারণে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নতুন মন্ত্রীদের জন্য বিকল্প বাসা নির্ধারণ করছে সরকার।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

২০ জুলাই মুঠোফোনে অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির প্রধান ফারুক আহম্মেদ বলেন,

“নির্বাচিত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের জন্য কী করণীয়, সে বিষয়ে আমরা সুপারিশ করেছি। এখন সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।”

— তাবাসসুম/সালেহ / এস এম মেহেদী