1:00 pm, Sunday, 23 November 2025

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ঢাকায় আটক

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ঢাকায় আটক

ঢাকা | ২৪ জুলাই ২০২৫  —  সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে আটটায় ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাঁকে আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম।

আটকের পর খায়রুল হককে মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তিনটি মামলা রয়েছে। এর যেকোনো একটিতে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।”

মামলার পটভূমি

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে জালজালিয়াতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয় গত বছরের ২৫ আগস্ট। মামলার বাদী ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী ভূঁইয়া। অভিযোগে বলা হয়, তিনি পরিকল্পিতভাবে সংবিধান সংশোধন ও আদালতের রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।

রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিতর্কিত চরিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১১ সালে অবসর গ্রহণের আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রদ করার ঐতিহাসিক রায় দেন। এই রায়কে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।

এ ছাড়া, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত থাকাকালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, চার নদী রক্ষা এবং ফতোয়া অবৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত রায়গুলোও দিয়েছেন তিনি।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন

অবসরের পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাঁকে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে আরও কয়েকবার তাঁকে একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ তিনি ২০২৪ সালের আগস্টে পদত্যাগ করেন।

আলোচনার চূড়ায়

তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং আটকের ঘটনাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকেই মনে করছেন, দেশের বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে এই ঘটনাটি একটি অনন্য নজির হয়ে থাকবে।

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া

এ বিষয়ে গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক: এস এম মেহেদী হাসান

— মিনারা আজমী/ তাবাসসুম/ সালেহ আহমদ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ঢাকায় আটক

Update Time : 10:58:41 am, Thursday, 24 July 2025

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ঢাকায় আটক

ঢাকা | ২৪ জুলাই ২০২৫  —  সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে আটটায় ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাঁকে আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম।

আটকের পর খায়রুল হককে মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তিনটি মামলা রয়েছে। এর যেকোনো একটিতে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।”

মামলার পটভূমি

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে জালজালিয়াতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয় গত বছরের ২৫ আগস্ট। মামলার বাদী ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী ভূঁইয়া। অভিযোগে বলা হয়, তিনি পরিকল্পিতভাবে সংবিধান সংশোধন ও আদালতের রায়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।

রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিতর্কিত চরিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১১ সালে অবসর গ্রহণের আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রদ করার ঐতিহাসিক রায় দেন। এই রায়কে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।

এ ছাড়া, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত থাকাকালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, চার নদী রক্ষা এবং ফতোয়া অবৈধ ঘোষণা-সংক্রান্ত রায়গুলোও দিয়েছেন তিনি।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন

অবসরের পর ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাঁকে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে আরও কয়েকবার তাঁকে একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ তিনি ২০২৪ সালের আগস্টে পদত্যাগ করেন।

আলোচনার চূড়ায়

তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং আটকের ঘটনাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকেই মনে করছেন, দেশের বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে এই ঘটনাটি একটি অনন্য নজির হয়ে থাকবে।

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া

এ বিষয়ে গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক: এস এম মেহেদী হাসান

— মিনারা আজমী/ তাবাসসুম/ সালেহ আহমদ