12:32 pm, Sunday, 23 November 2025

পর্তুগালে নাগরিকত্বের পথে নতুন দেয়াল: কঠোর হচ্ছে অভিবাসননীতি

পর্তুগালে নাগরিকত্বের পথে নতুন দেয়াল: কঠোর হচ্ছে অভিবাসননীতি

লিসবন, পর্তুগাল | ২৩ জুলাই ২০২৫ —

এক সময় উদার অভিবাসন নীতির জন্য পরিচিত পর্তুগাল এখন ক্রমশ কঠোরতার পথে হাঁটছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটির সরকার নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত আরও কঠিন করতে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়বে লক্ষাধিক অভিবাসীর ওপর। পাশাপাশি পারিবারিক পুনর্মিলন সংক্রান্ত নিয়মেও আসছে কড়াকড়ি।

নাগরিকত্বের শর্তে দ্বিগুণ সময়

বর্তমানে পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাস করলেই আবেদনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সরকার এখন এই সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ বছর করার প্রস্তাব এনেছে। এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা বিষয়ক মন্ত্রী আন্তোনিও লেইতাও আমারো

এছাড়া, যারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখনো অনুমোদন পাননি—তাদের আবেদনের পর অপেক্ষার সময়টুকুকে বৈধ বসবাস হিসেবে গণ্য করার দাবিও সরকার নাকচ করে দিয়েছে। ফলে হাজার হাজার অভিবাসীর আশায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

‘কঠোরতা নয়, কাঠামোগত সংস্কার’ বলছে সরকার

সরকারি ভাষ্যমতে, এই পরিবর্তন ‘কঠোরতা’ নয়, বরং অভিবাসন ব্যবস্থাকে সুসংহত ও নিয়ন্ত্রিত করার প্রচেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো অভিবাসন সংস্কারকে নিজের সরকারের একটি প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

সরকার বলছে, “আমাদের জনসেবা ও সমাজের অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষমতা একটি সীমার মধ্যে রয়েছে। তাই অভিবাসন প্রবাহকে একটি কার্যকর কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।”

পারিবারিক পুনর্মিলনেও কড়াকড়ি

নাগরিকত্ব ছাড়াও পারিবারিক পুনর্মিলনের নীতিমালায় কড়াকড়ি আনার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে সরকার। এখন থেকে পরিবার নিয়ে আসতে চাইলে অভিবাসীদের আরও কঠিন শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে আর্থিক সামর্থ্য ও বসবাসের অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হবে।

‘হাই-স্কিলড’ কর্মীরাই থাকবে অগ্রাধিকার

অভিবাসন প্রক্রিয়ায় উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীদের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলছে সরকার। নতুন কর্মসংস্থান ভিত্তিক ভিসা পেতে হলে ভাষাজ্ঞানপ্রশিক্ষণের প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

সরকার স্পষ্ট করেছে: “আমরা এমন বিদেশি কর্মীদের চাচ্ছি, যারা পর্তুগিজ সমাজে সম্পৃক্ত হতে পারবেন এবং অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখবেন।”

CPLP দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

পর্তুগাল CPLP (Community of Portuguese Language Countries) জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ব্রাজিল, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, কেপ ভার্দে, গিনি-বিসাউ ও সাও তোমে প্রিন্সিপের বহু মানুষ পর্তুগালে পাড়ি জমান, বিশেষ করে ব্রাজিলীয়রা—যারা এতদিন কিছুটা সহজ শর্তে বসবাস ও নাগরিকত্ব পেতেন।

কিন্তু নতুন নীতির আওতায় ব্রাজিলীয়দের সেই সুবিধাও সীমিত হয়ে যাবে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।

উপসংহার: পর্তুগাল কি ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে?

এই ধারাবাহিক কঠোরতা শুধু প্রশাসনিক সংস্কার নয়, বরং অনেকের কাছে রাজনৈতিক দিকচ্যুতির ইঙ্গিত হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপজুড়ে যে ডানপন্থার উত্থান চলছে, পর্তুগালও এখন সেই ধারাতেই হাঁটছে।

এই প্রেক্ষাপটে অভিবাসীরা যেমন চাপে রয়েছেন, তেমনি পর্তুগালের বহুজাতিক সমাজ ও অর্থনীতিও নতুন পরীক্ষার মুখে পড়ছে।

— সালেহ/ তাবাসসুম/ মেহেদী

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

পর্তুগালে নাগরিকত্বের পথে নতুন দেয়াল: কঠোর হচ্ছে অভিবাসননীতি

Update Time : 09:54:45 am, Wednesday, 23 July 2025

পর্তুগালে নাগরিকত্বের পথে নতুন দেয়াল: কঠোর হচ্ছে অভিবাসননীতি

লিসবন, পর্তুগাল | ২৩ জুলাই ২০২৫ —

এক সময় উদার অভিবাসন নীতির জন্য পরিচিত পর্তুগাল এখন ক্রমশ কঠোরতার পথে হাঁটছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটির সরকার নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত আরও কঠিন করতে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়বে লক্ষাধিক অভিবাসীর ওপর। পাশাপাশি পারিবারিক পুনর্মিলন সংক্রান্ত নিয়মেও আসছে কড়াকড়ি।

নাগরিকত্বের শর্তে দ্বিগুণ সময়

বর্তমানে পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য পাঁচ বছর বৈধভাবে বসবাস করলেই আবেদনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সরকার এখন এই সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ বছর করার প্রস্তাব এনেছে। এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা বিষয়ক মন্ত্রী আন্তোনিও লেইতাও আমারো

এছাড়া, যারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখনো অনুমোদন পাননি—তাদের আবেদনের পর অপেক্ষার সময়টুকুকে বৈধ বসবাস হিসেবে গণ্য করার দাবিও সরকার নাকচ করে দিয়েছে। ফলে হাজার হাজার অভিবাসীর আশায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

‘কঠোরতা নয়, কাঠামোগত সংস্কার’ বলছে সরকার

সরকারি ভাষ্যমতে, এই পরিবর্তন ‘কঠোরতা’ নয়, বরং অভিবাসন ব্যবস্থাকে সুসংহত ও নিয়ন্ত্রিত করার প্রচেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো অভিবাসন সংস্কারকে নিজের সরকারের একটি প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

সরকার বলছে, “আমাদের জনসেবা ও সমাজের অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্ষমতা একটি সীমার মধ্যে রয়েছে। তাই অভিবাসন প্রবাহকে একটি কার্যকর কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।”

পারিবারিক পুনর্মিলনেও কড়াকড়ি

নাগরিকত্ব ছাড়াও পারিবারিক পুনর্মিলনের নীতিমালায় কড়াকড়ি আনার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছে সরকার। এখন থেকে পরিবার নিয়ে আসতে চাইলে অভিবাসীদের আরও কঠিন শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে আর্থিক সামর্থ্য ও বসবাসের অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হবে।

‘হাই-স্কিলড’ কর্মীরাই থাকবে অগ্রাধিকার

অভিবাসন প্রক্রিয়ায় উচ্চশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীদের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলছে সরকার। নতুন কর্মসংস্থান ভিত্তিক ভিসা পেতে হলে ভাষাজ্ঞানপ্রশিক্ষণের প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

সরকার স্পষ্ট করেছে: “আমরা এমন বিদেশি কর্মীদের চাচ্ছি, যারা পর্তুগিজ সমাজে সম্পৃক্ত হতে পারবেন এবং অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখবেন।”

CPLP দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

পর্তুগাল CPLP (Community of Portuguese Language Countries) জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ব্রাজিল, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, কেপ ভার্দে, গিনি-বিসাউ ও সাও তোমে প্রিন্সিপের বহু মানুষ পর্তুগালে পাড়ি জমান, বিশেষ করে ব্রাজিলীয়রা—যারা এতদিন কিছুটা সহজ শর্তে বসবাস ও নাগরিকত্ব পেতেন।

কিন্তু নতুন নীতির আওতায় ব্রাজিলীয়দের সেই সুবিধাও সীমিত হয়ে যাবে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।

উপসংহার: পর্তুগাল কি ডানপন্থার দিকে ঝুঁকছে?

এই ধারাবাহিক কঠোরতা শুধু প্রশাসনিক সংস্কার নয়, বরং অনেকের কাছে রাজনৈতিক দিকচ্যুতির ইঙ্গিত হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপজুড়ে যে ডানপন্থার উত্থান চলছে, পর্তুগালও এখন সেই ধারাতেই হাঁটছে।

এই প্রেক্ষাপটে অভিবাসীরা যেমন চাপে রয়েছেন, তেমনি পর্তুগালের বহুজাতিক সমাজ ও অর্থনীতিও নতুন পরীক্ষার মুখে পড়ছে।

— সালেহ/ তাবাসসুম/ মেহেদী