সূরা আল-মাউন এর ফজিলত ও শিক্ষা | Surah Al-Maun Tafsir & Importance in Bangla
* সূরা আল-মাউন: পরিচয়
-
সূরা নাম: আল-মাউন (সাহায্য, ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিস)
-
সূরা নম্বর: ১০৭
-
আয়াত সংখ্যা: ৭
-
নাজিলের স্থান: মক্কা
-
মূল বিষয়বস্তু: দ্বীন অস্বীকারকারী, মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য, নামাজে গাফিলতা, দরিদ্র ও এতিমের হক অবহেলা
সূরার নাজিলের প্রেক্ষাপট
এই সূরাটি সেইসব মানুষদের সমালোচনা করে যারা মুখে দ্বীনের দাবি করে কিন্তু কাজে তার বিপরীত আচরণ করে। বিশেষত, যারা নামাজ পড়ে কিন্তু তা আন্তরিকতা ছাড়া, কিংবা এতিম ও গরীবদের প্রতি নির্দয় আচরণ করে।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এই সূরাটি আস ইবনে ওয়ায়েল অথবা আমর ইবনে আ’as এর মতো মক্কার এক নেতার ব্যাপারে নাজিল হয়েছিল, যে এতিমদের নির্যাতন করত এবং দরিদ্রদের সাহায্য করত না।
সূরা মাউন এর ফজিলত
* মুনাফিকের চিহ্ন চিহ্নিত করে
— এই সূরায় আল্লাহ সেই ব্যক্তিদের পরিচয় দেন, যারা নামাজ পড়েও লোক দেখানো করে।
* সামাজিক ন্যায়বিচার ও দায়িত্ববোধ শেখায়
— এতিম ও গরীবদের উপেক্ষা করা ইসলামে বড় অপরাধ।
* নামাজে আন্তরিকতার গুরুত্ব বোঝায়
— শুধু নামাজ পড়লেই হবে না, বরং খুশু-খুজু সহকারে, মনোযোগসহকারে পড়তে হবে।
* সহজ জিনিসে কার্পণ্য নিন্দনীয়
— সাধারণ সাহায্য (যেমন পানি, হাঁড়ি, থালা দেওয়া) না করাও ধিক্কারযোগ্য।
সূরা আল-মাউন (আরবি, উচ্চারণ ও বাংলা অনুবাদ)
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
١. أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ
٢. فَذَٰلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ
٣. وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ الْمِسْكِينِ
٤. فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
٥. الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
٦. الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ
٧. وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
উচ্চারণ (বাংলা হরফে):
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১. আরাইতাল্লাযী ইউকাযযিবু বিদ্দীন
২. ফা-যালিকাল্লাযী ইয়াদু’উল ইয়াতীম
৩. ওয়ালা ইয়াহুজ্জু ‘আলা তা’আমিল মিসকীন
৪. ফাওয়াইলুল্লিল মুসাল্লীন
৫. আল্লাযীনা হুম ‘আন সালাতিহিম সাহূন
৬. আল্লাযীনা হুম ইউরা’ঊন
৭. ওয়া ইয়ামনাঊনাল মা’ঊন
অর্থ:
১. আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে বিচার দিবসকে অস্বীকার করে?
২. সে-ই তো, যে এতিমকে ধাক্কা দেয়।
৩. এবং মিসকিনকে খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না।
৪. তাহলে ধ্বংস তাদের জন্য— যারা নামাজ পড়ে,
৫. অথচ নিজেদের নামাজে গাফিল।
৬. যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে,
৭. এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসে (সহজ সাহায্যে) কার্পণ্য করে।
শিক্ষণীয় বিষয়:
* মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য চেনা যায় এই সূরার মাধ্যমে:
– নামাজ পড়ে কিন্তু আন্তরিক নয়
– দরিদ্রদের অবহেলা করে
– সাধারণ সহায়তা করতেও কৃপণতা করে
* ইবাদতের সঙ্গে সামাজিক দায়িত্ব জড়িত:
– শুধু নামাজ পড়লেই প্রকৃত মু’মিন হওয়া যায় না,
– বরং মানুষের অধিকার রক্ষা করাও ঈমানের অঙ্গ।
* লোক দেখানো ইবাদত অগ্রহণযোগ্য:
– নামাজ হতে হবে আন্তরিক, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
* গরীব-এতিমদের হক রক্ষা করা ফরজ:
– ইসলামে দয়া, সাহায্য ও মানবিকতা মৌলিক শিক্ষা
আমলের নির্দেশনা
-
নামাজে মনোযোগী হওয়া এবং তা নিয়মিত আদায় করা
-
এতিম ও দরিদ্রদের সাহায্য করা
-
সাধারণ প্রয়োজনে (পানি, বাসন, সাহায্য) কার্পণ্য না করা
-
লোক দেখানো ইবাদত থেকে বেঁচে থাকা
* উপসংহার
সূরা আল-মাউন হলো দ্বীনের বাস্তব প্রতিফলনের আয়না। মুখে মুসলমান হলেও, যদি আমাদের আচরণে সহানুভূতি, খালেস ইবাদত ও মানবিকতা না থাকে—তাহলে তা মুনাফিকির লক্ষণ। এই সূরা আমাদের সতর্ক করে দেয়:
“দ্বীন শুধু আল্লাহর ইবাদত নয়, বরং মানুষের হক আদায় করাও দ্বীনের অপরিহার্য অংশ।”
* সূরা আল-মাউন আমাদের শেখায়—দ্বীন মানে শুধু নামাজ নয়, বরং মানুষের উপকার করাও তারই অংশ।
লেখক: মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।
—সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মেহেদী
Reporter Name 

























