1:00 pm, Sunday, 23 November 2025

কফিনে বাবার চুমু, চিরবিদায় হুমায়রা

কফিনে বাবার চুমু, চিরবিদায় হুমায়রা

সখীপুর, টাঙ্গাইল | ২২ জুলাই ২০২৫ — রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা। সেই একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ বাবা-মা। আর তাকে ঘিরেই রাতের আঁধারে শোকে কাঁপল পুরো গ্রাম।

নিহত হুমায়রার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া গ্রামে। তার বাবা দেলোয়ার হোসাইন রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। দুর্ঘটনার সময় তিনিও স্কুলে থাকলেও অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান।

‘স্যার আসবেন, কিন্তু হুমায়রা আসবে না’

হুমায়রার সহপাঠী আজমাইন অনন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন,

“স্যারকে প্রতিদিন দেখতাম মেয়েকে কোলে করে কিংবা হাতে ধরে স্কুলে নিয়ে আসতেন। ছুটির পর আবার বাসায় পৌঁছে দিতেন। এখন স্যার হয়তো আসবেন, কিন্তু হুমায়রা আর নয়।”

রাতের আঁধারে কান্নায় ভেসে গেল গ্রাম

হুমায়রার মরদেহ সোমবার রাত আনুমানিক ২টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজতেই এলাকার মানুষ যেন জেগে ওঠে। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ এসে জড়ো হয় এক নজর হুমায়রাকে দেখার জন্য।

গ্রামের পরিবেশ মুহূর্তেই ভারী হয়ে ওঠে। স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। দাদা আব্দুল বাছেদ মিয়া বলেন,

“এই ঈদেও দাদু এসেছিল, সারাক্ষণ আমার সঙ্গে ছিল। এখন আর কোনো দিন আসবে না। আর বলবে না—দাদু…”

মায়ের কান্না নেই, নেই কথাও

বাবা দেলোয়ার হোসাইন আর মা সুমি আক্তারের চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। দুজনেই স্তব্ধ, কারও মুখে কোনো শব্দ নেই। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীদের সান্ত্বনার কোনো বাক্য যেন তাদের মনকে ছুঁতে পারছে না।

জানাজা ও দাফন

হুমায়রার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সখীপুরের হতেয়া গাবলের বাজারে। জানাজায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও হাজারো সাধারণ মানুষ অংশ নেন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

— সালেহ/ তাবাসসুম/ মেহেদী

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

কফিনে বাবার চুমু, চিরবিদায় হুমায়রা

Update Time : 09:11:34 pm, Tuesday, 22 July 2025

কফিনে বাবার চুমু, চিরবিদায় হুমায়রা

সখীপুর, টাঙ্গাইল | ২২ জুলাই ২০২৫ — রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেনাজ আক্তার হুমায়রা। সেই একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ বাবা-মা। আর তাকে ঘিরেই রাতের আঁধারে শোকে কাঁপল পুরো গ্রাম।

নিহত হুমায়রার বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া গ্রামে। তার বাবা দেলোয়ার হোসাইন রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। দুর্ঘটনার সময় তিনিও স্কুলে থাকলেও অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান।

‘স্যার আসবেন, কিন্তু হুমায়রা আসবে না’

হুমায়রার সহপাঠী আজমাইন অনন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন,

“স্যারকে প্রতিদিন দেখতাম মেয়েকে কোলে করে কিংবা হাতে ধরে স্কুলে নিয়ে আসতেন। ছুটির পর আবার বাসায় পৌঁছে দিতেন। এখন স্যার হয়তো আসবেন, কিন্তু হুমায়রা আর নয়।”

রাতের আঁধারে কান্নায় ভেসে গেল গ্রাম

হুমায়রার মরদেহ সোমবার রাত আনুমানিক ২টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজতেই এলাকার মানুষ যেন জেগে ওঠে। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষ এসে জড়ো হয় এক নজর হুমায়রাকে দেখার জন্য।

গ্রামের পরিবেশ মুহূর্তেই ভারী হয়ে ওঠে। স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। দাদা আব্দুল বাছেদ মিয়া বলেন,

“এই ঈদেও দাদু এসেছিল, সারাক্ষণ আমার সঙ্গে ছিল। এখন আর কোনো দিন আসবে না। আর বলবে না—দাদু…”

মায়ের কান্না নেই, নেই কথাও

বাবা দেলোয়ার হোসাইন আর মা সুমি আক্তারের চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। দুজনেই স্তব্ধ, কারও মুখে কোনো শব্দ নেই। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, সহকর্মীদের সান্ত্বনার কোনো বাক্য যেন তাদের মনকে ছুঁতে পারছে না।

জানাজা ও দাফন

হুমায়রার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সখীপুরের হতেয়া গাবলের বাজারে। জানাজায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও হাজারো সাধারণ মানুষ অংশ নেন। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

— সালেহ/ তাবাসসুম/ মেহেদী