1:55 pm, Sunday, 23 November 2025

প্রকাশ্যে ধর্ষণ, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে উত্তাল রাজনীতি ও সামাজিক উদ্বেগ

প্রকাশ্যে ধর্ষণ, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে উত্তাল রাজনীতি ও সামাজিক উদ্বেগ

বিঃদ্রঃ এই প্রতিবেদনে এমন কিছু বিবরণ রয়েছে, যা পাঠকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।

উজ্জয়িনী, মধ্যপ্রদেশ | ২২ জুলাই ২০২৫ — ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনী শহরের একটি জনবহুল রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে এক নারীর উপর যৌন সহিংসতার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ, উদ্বেগ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উজ্জয়িনীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর একটিতে—‘কয়লা ফটক’ মোড়ে, যেখানে পাশেই রয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প, হাসপাতাল ও মদের দোকান। ৪০ বছর বয়সী এক নারীকে, অভিযোগ অনুযায়ী, ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রকাশ্য ফুটপাথে যৌন নির্যাতন করে। আশেপাশে চলাচলকারী মানুষজন ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও কেউ হস্তক্ষেপ করেননি। বরং কয়েকজন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে, যা পরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

পুলিশের বক্তব্য ও তদন্তের অগ্রগতি

উজ্জয়িনীর পুলিশ সুপার প্রদীপ শর্মা জানান, ঘটনাটি ৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেলে ঘটেছে। তিনি বলেন, “নির্যাতিতা ও অভিযুক্ত একে অপরকে পূর্ব পরিচিত। তারা একসঙ্গে কথা বলতে বলতে মদ্যপান করেন এবং তখনই ঘটনাটি ঘটে।”
পুলিশ সূত্রে আরও জানানো হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ) অনুসারে মামলা দায়ের করে তাকে আদালতে হাজির করা হলে জেল হেফাজতের আদেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

ভুক্তভোগীর পটভূমি

পুলিশ জানায়, আট বছর আগে ওই নারী উজ্জয়িনীতে আসেন এবং তার ১৮ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন না। ঘটনার সময় এক পথচারী পুলিশের কাছে খবর দিলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: উত্তপ্ত মধ্যপ্রদেশ

এই মর্মান্তিক ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার)–এ লিখেছেন:

“উজ্জয়িনীতে এক নারীর সঙ্গে প্রকাশ্যে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সমাজের বিবেককে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে না এসে বরং ভিডিও করছিলেন—এটি মানবিকতার চরম অবক্ষয়।”

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটেওয়ারি বলেন,

“এই যদি মুখ্যমন্ত্রীর নিজের শহরের অবস্থা হয়, তাহলে বাকি রাজ্যের চিত্র সহজেই অনুমেয়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ানক রকমের অবনতির দিকে যাচ্ছে।”

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি মুখপাত্র আশিস আগরওয়াল বলেন,

“এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কংগ্রেস নেতারা রাজ্যকে বদনাম করতে মরিয়া।”

সমাজে উদ্বেগ: নৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি

সমাজকর্মী অর্চনা সহায় বলেন, “এই ধরনের ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের সমাজে করুণ অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ সহানুভূতি জানায় না, বরং ভিডিও করে ভাইরাল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “কোনও নারী স্বেচ্ছায় প্রকাশ্য রাস্তায় এমন কাজ করবেন না—এটা বোঝার পরেও কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। বরং কেউ কেউ হাসছে, কেউ ভিডিও করছে—এটাই কি আমাদের সমাজ?”

পূর্ববর্তী ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিল

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একই শহরে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সে সাহায্য চাইতে গিয়ে উপেক্ষিত হয় এবং তার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ঘটনার মতোই এবারও দেখা যাচ্ছে—মানুষ দেখছে, কিন্তু সাহায্য করছে না।

উপসংহার:

এই ঘটনাটি শুধু একটি অপরাধের চিত্রই তুলে ধরে না, বরং আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, কর্তব্যবোধের অভাব এবং ডিজিটাল যুগে মানবিকতার দুর্বলতাও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। এর প্রতিকার শুধুই আইনি ব্যবস্থা নয়—মানসিকতা ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

প্রকাশ্যে ধর্ষণ, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে উত্তাল রাজনীতি ও সামাজিক উদ্বেগ

Update Time : 06:22:42 am, Tuesday, 22 July 2025

প্রকাশ্যে ধর্ষণ, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে উত্তাল রাজনীতি ও সামাজিক উদ্বেগ

বিঃদ্রঃ এই প্রতিবেদনে এমন কিছু বিবরণ রয়েছে, যা পাঠকের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।

উজ্জয়িনী, মধ্যপ্রদেশ | ২২ জুলাই ২০২৫ — ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জয়িনী শহরের একটি জনবহুল রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে এক নারীর উপর যৌন সহিংসতার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ, উদ্বেগ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উজ্জয়িনীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর একটিতে—‘কয়লা ফটক’ মোড়ে, যেখানে পাশেই রয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প, হাসপাতাল ও মদের দোকান। ৪০ বছর বয়সী এক নারীকে, অভিযোগ অনুযায়ী, ২৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রকাশ্য ফুটপাথে যৌন নির্যাতন করে। আশেপাশে চলাচলকারী মানুষজন ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও কেউ হস্তক্ষেপ করেননি। বরং কয়েকজন মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে, যা পরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

পুলিশের বক্তব্য ও তদন্তের অগ্রগতি

উজ্জয়িনীর পুলিশ সুপার প্রদীপ শর্মা জানান, ঘটনাটি ৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বিকেলে ঘটেছে। তিনি বলেন, “নির্যাতিতা ও অভিযুক্ত একে অপরকে পূর্ব পরিচিত। তারা একসঙ্গে কথা বলতে বলতে মদ্যপান করেন এবং তখনই ঘটনাটি ঘটে।”
পুলিশ সূত্রে আরও জানানো হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ) অনুসারে মামলা দায়ের করে তাকে আদালতে হাজির করা হলে জেল হেফাজতের আদেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

ভুক্তভোগীর পটভূমি

পুলিশ জানায়, আট বছর আগে ওই নারী উজ্জয়িনীতে আসেন এবং তার ১৮ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন না। ঘটনার সময় এক পথচারী পুলিশের কাছে খবর দিলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: উত্তপ্ত মধ্যপ্রদেশ

এই মর্মান্তিক ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার)–এ লিখেছেন:

“উজ্জয়িনীতে এক নারীর সঙ্গে প্রকাশ্যে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সমাজের বিবেককে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে না এসে বরং ভিডিও করছিলেন—এটি মানবিকতার চরম অবক্ষয়।”

মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটেওয়ারি বলেন,

“এই যদি মুখ্যমন্ত্রীর নিজের শহরের অবস্থা হয়, তাহলে বাকি রাজ্যের চিত্র সহজেই অনুমেয়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়ানক রকমের অবনতির দিকে যাচ্ছে।”

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি মুখপাত্র আশিস আগরওয়াল বলেন,

“এই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কংগ্রেস নেতারা রাজ্যকে বদনাম করতে মরিয়া।”

সমাজে উদ্বেগ: নৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি

সমাজকর্মী অর্চনা সহায় বলেন, “এই ধরনের ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমাদের সমাজে করুণ অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ সহানুভূতি জানায় না, বরং ভিডিও করে ভাইরাল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করা উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “কোনও নারী স্বেচ্ছায় প্রকাশ্য রাস্তায় এমন কাজ করবেন না—এটা বোঝার পরেও কেউ তার পাশে দাঁড়ায়নি। বরং কেউ কেউ হাসছে, কেউ ভিডিও করছে—এটাই কি আমাদের সমাজ?”

পূর্ববর্তী ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিল

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একই শহরে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সে সাহায্য চাইতে গিয়ে উপেক্ষিত হয় এবং তার ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ঘটনার মতোই এবারও দেখা যাচ্ছে—মানুষ দেখছে, কিন্তু সাহায্য করছে না।

উপসংহার:

এই ঘটনাটি শুধু একটি অপরাধের চিত্রই তুলে ধরে না, বরং আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, কর্তব্যবোধের অভাব এবং ডিজিটাল যুগে মানবিকতার দুর্বলতাও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। এর প্রতিকার শুধুই আইনি ব্যবস্থা নয়—মানসিকতা ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।