সূরা কাফিরুনের ফজিলত ও তাৎপর্য জানতে পড়ুন এই প্রবন্ধটি—শিরকমুক্ত ঈমান, দ্বীনের সুস্পষ্ট সীমারেখা এবং রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সূরা কাফিরুন: পরিচয় ও তাৎপর্য
পবিত্র কোরআনের ১০৯ নম্বর সূরা সূরা আল-কাফিরুন হল এক শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট বার্তা, যা ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার সীমারেখা নির্ধারণ করে। এটি মূলত তাওহিদে আকীদা ও ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস রক্ষার ঘোষণাপত্র।
‘কাফিরুন’ অর্থ—অবিশ্বাসীগণ। এ সুরায় মুসলিমদের আকীদা ও ঈমানী দৃষ্টিভঙ্গির অটলতা প্রকাশ পেয়েছে, যাতে মুশরিকদের সঙ্গে কোনরকম আপসের সুযোগ নেই।
সুরা নাজিলের প্রেক্ষাপট
কুরাইশরা প্রস্তাব দেয় যে, তারা এক বছর আল্লাহর ইবাদত করবে, আর এক বছর রাসুল (সা.) তাদের দেবতাদের পূজা করবেন। তখনই এই সূরা নাজিল হয়। এতে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে বললেন, তিনি যেন দ্বীনের ব্যাপারে কোনরকম আপস না করেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন—
“তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আর আমার ধর্ম আমার জন্য।”
বিশুদ্ধ ঈমান ও দ্বীনের স্থিরতা
এই সূরা আমাদের শিক্ষা দেয় যে ঈমান ও কুফরের মাঝে কোনরকম মিলন সম্ভব নয়। মুসলমানদের দ্বীন কোন আপসের ভিত্তিতে নয় বরং সুনির্দিষ্ট তাওহিদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অভ্যাস
হজরত ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল (রা.) বলেন—
“রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন সূরা কাফিরুন পড়ে ঘুমাতেন।”
* (তিরমিজি, আবু দাউদ)
শিরক থেকে মুক্ত থাকার দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“সূরা কাফিরুন হচ্ছে শিরকমুক্তির ঘোষণা।”
* (তাবারানি, হাকিম)
এ সূরাটি পাঠ করার মাধ্যমে একজন মুমিন তাঁর তাওহিদি অবস্থান সুদৃঢ় করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে উপাসনা না করার অঙ্গীকার নবায়ন করে।
সূরা আল-কাফিরুন (আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ)
سورة الكافرون
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
١. قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ
২. لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
٣. وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
٤. وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدتُّمْ
٥. وَلَا أَنتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
٦. لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ
বাংলা উচ্চারণ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১. কুল্ ইয়াআয়্যুহাল কাফিরূন
২. লা আ’বুদু মা তা’বুদুন
৩. ওয়া লা আনতুম ‘আবিদূনা মা আ’বুদ
৪. ওয়া লা আনা ‘আবিদুম্মা ‘আবদতুম
৫. ওয়া লা আনতুম ‘আবিদূনা মা আ’বুদ
৬. লাকুম দীনুকুম ওলিয়া দীন
বাংলা অনুবাদ
“বল, হে কাফিরগণ!
আমি ইবাদত করি না তাদের, যাদের তোমরা ইবাদত করো।
তোমরাও ইবাদত করো না তাঁর, যাঁর আমি ইবাদত করি।
আমি কখনোই ইবাদত করব না তাদের, যাদের তোমরা করো।
তোমরাও ইবাদত করবে না তাঁর, যাঁর আমি ইবাদত করি।
তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আর আমার ধর্ম আমার জন্য।”
বিশেষ ফজিলত
* এই সূরা পড়লে শিরকমুক্ত থাকার ঘোষণা হয়
* ঘুমের আগে এই সূরা পাঠ করা রাসুল (সা.)-এর নিয়ম
* ঈমানি পরিচয় রক্ষায় এটি একটি পরিপূর্ণ সুরা
শেষ কথা
সূরা কাফিরুন শুধু অবিশ্বাসীদের প্রতি নয়, বরং প্রতিটি মুমিনের জন্য এক সুস্পষ্ট ঘোষণা—আমরা কেবলমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি, আর দ্বীনের বিষয়ে কোনো আপস আমাদের নীতিতে নেই। এই সূরা পাঠ আমাদের তাওহিদকে সংহত করে এবং অন্তরে ইসলামি আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করে।
“তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আর আমার ধর্ম আমার জন্য”—এই বাক্যে রয়েছে চূড়ান্ত সত্যের ঘোষণা, যা একজন মুসলিমের আত্মপরিচয়।
লেখক: মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।
মাওলানা শেখ সাদ আমিন বর্ণভী 

























