1:01 pm, Sunday, 23 November 2025

বিরলে ভ্যানচালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই, গ্রেফতার একজন

দিনাজপুর | ২১ জুলাই ২০২৫ —

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় চার্জার ভ্যানচালককে নির্মমভাবে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে পুরো এলাকায়। তবে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ আবারও প্রমাণ করেছে—পেশাদারিত্ব ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে তারা প্রস্তুত।

১৫ জুলাই ২০২৫, বিকেল ৪টার দিকে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের যুগিহারী গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল হক (৪৫) তার নিজস্ব চার্জার ভ্যান নিয়ে ভাড়া খাটার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।

পরদিন, ১৬ জুলাই সকাল ৭টার দিকে, ধামইর ইউনিয়নের মাটিয়ানদিঘী গ্রামের সীতলা মন্দিরের পাশের একটি পাকা সড়কে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে ভিকটিমের পিতা ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

তদন্তে নামে পুলিশ

ঘটনার পরপরই ভিকটিমের পিতা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিরল থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: ১৬/১৯৮)।
তৎক্ষণাৎ পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন এর দিকনির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুস ছবুর, এবং এসআই সোহেল রানা-এর নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।

তদন্তে তথ্য প্রযুক্তি, লোকবল এবং সোর্স ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশ দ্রুত সম্ভাব্য আসামিদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।

নাটকীয় গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তি

২১ জুলাই ভোররাতে বিরল থানাধীন মোতাপুকুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামী মোঃ নাজমুল হক মুন্না (৩২)-কে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার নৃশংস ও সুপরিকল্পিত কাহিনি।

নাজমুল জানায়, বছরখানেক আগে চানাচুর বিক্রির জন্য একটি ঠেলা ভ্যান তৈরির কাজে নিহত আসাদুল হকের পরামর্শে চাকা ও এক্সেল কিনে দিয়েছিলেন। ভ্যান তৈরি না হওয়ায় তার মনে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ জন্ম নেয়।
এই ক্ষোভ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করে মুন্না।

ঘটনার দিন, মালামাল পরিবহনের কথা বলে সে আসাদুলকে ধানক্ষেত এলাকার নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানেই মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়ার নাটক করে তাকে নিচু হওয়ার সুযোগে, পিছন থেকে শরীরে লুকিয়ে রাখা দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপ মেরে হত্যা করে। পরে দা ফেলে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

ভ্যান বিক্রির কাহিনি

খুনের পর আসামী মুন্না ও তার সহযোগী মোঃ রুবেল ইসলাম (৩৪) ভিকটিমের চার্জার ভ্যানটি কৌশলে স্থানীয় কিনু দেব শর্মা নামে এক ব্যক্তিকে ৩৫,০০০ টাকায় বিক্রি করেন। কিনু দেব শর্মা সরল বিশ্বাসে মুন্নাকেই ভ্যানটির মালিক মনে করেছিলেন।

পুলিশের তদন্তে পরে কিনু দেব শর্মার বাড়ি থেকে লুণ্ঠিত ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। এরপর মুন্নার দেয়া তথ্যমতে, পাশের একটি ধানক্ষেত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা-টিও উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্ত ও আলামত

গ্রেফতারকৃতরা:

  • মোঃ নাজমুল হক মুন্না, পিতা মজিবর রহমান, গ্রাম– বিরল

  • মোঃ রুবেল ইসলাম, পিতা সলেমান আলী, গ্রাম– জালালী আটগাঁও, বোচাগঞ্জ

উদ্ধারকৃত:

  • চার্জার ভ্যান (ভিকটিমের)

  • স্যাম্ফনি বাটন মোবাইল

  • খুনে ব্যবহৃত দা

পুলিশের মন্তব্য

দিনাজপুর জেলা পুলিশ জানায়, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আলামতসহ আসামি গ্রেফতারের মাধ্যমে জনমনে নিরাপত্তাবোধ বাড়বে। পুলিশ সুপার জানান, ভবিষ্যতেও এ ধরনের অপরাধ দমন ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ সবসময় সজাগ ও প্রস্তুত থাকবে।

প্রতিবেদক : ‎মুরছালিন হোসেন

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মেহেদী

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

বিরলে ভ্যানচালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই, গ্রেফতার একজন

Update Time : 08:20:18 pm, Monday, 21 July 2025

দিনাজপুর | ২১ জুলাই ২০২৫ —

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় চার্জার ভ্যানচালককে নির্মমভাবে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে পুরো এলাকায়। তবে দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ আবারও প্রমাণ করেছে—পেশাদারিত্ব ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে তারা প্রস্তুত।

১৫ জুলাই ২০২৫, বিকেল ৪টার দিকে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের যুগিহারী গ্রামের বাসিন্দা আসাদুল হক (৪৫) তার নিজস্ব চার্জার ভ্যান নিয়ে ভাড়া খাটার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।

পরদিন, ১৬ জুলাই সকাল ৭টার দিকে, ধামইর ইউনিয়নের মাটিয়ানদিঘী গ্রামের সীতলা মন্দিরের পাশের একটি পাকা সড়কে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে ভিকটিমের পিতা ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

তদন্তে নামে পুলিশ

ঘটনার পরপরই ভিকটিমের পিতা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিরল থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: ১৬/১৯৮)।
তৎক্ষণাৎ পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন এর দিকনির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুস ছবুর, এবং এসআই সোহেল রানা-এর নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।

তদন্তে তথ্য প্রযুক্তি, লোকবল এবং সোর্স ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশ দ্রুত সম্ভাব্য আসামিদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।

নাটকীয় গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তি

২১ জুলাই ভোররাতে বিরল থানাধীন মোতাপুকুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামী মোঃ নাজমুল হক মুন্না (৩২)-কে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যার নৃশংস ও সুপরিকল্পিত কাহিনি।

নাজমুল জানায়, বছরখানেক আগে চানাচুর বিক্রির জন্য একটি ঠেলা ভ্যান তৈরির কাজে নিহত আসাদুল হকের পরামর্শে চাকা ও এক্সেল কিনে দিয়েছিলেন। ভ্যান তৈরি না হওয়ায় তার মনে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ জন্ম নেয়।
এই ক্ষোভ থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করে মুন্না।

ঘটনার দিন, মালামাল পরিবহনের কথা বলে সে আসাদুলকে ধানক্ষেত এলাকার নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানেই মোবাইল ফোন খুঁজে পাওয়ার নাটক করে তাকে নিচু হওয়ার সুযোগে, পিছন থেকে শরীরে লুকিয়ে রাখা দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপ মেরে হত্যা করে। পরে দা ফেলে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

ভ্যান বিক্রির কাহিনি

খুনের পর আসামী মুন্না ও তার সহযোগী মোঃ রুবেল ইসলাম (৩৪) ভিকটিমের চার্জার ভ্যানটি কৌশলে স্থানীয় কিনু দেব শর্মা নামে এক ব্যক্তিকে ৩৫,০০০ টাকায় বিক্রি করেন। কিনু দেব শর্মা সরল বিশ্বাসে মুন্নাকেই ভ্যানটির মালিক মনে করেছিলেন।

পুলিশের তদন্তে পরে কিনু দেব শর্মার বাড়ি থেকে লুণ্ঠিত ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। এরপর মুন্নার দেয়া তথ্যমতে, পাশের একটি ধানক্ষেত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা-টিও উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্ত ও আলামত

গ্রেফতারকৃতরা:

  • মোঃ নাজমুল হক মুন্না, পিতা মজিবর রহমান, গ্রাম– বিরল

  • মোঃ রুবেল ইসলাম, পিতা সলেমান আলী, গ্রাম– জালালী আটগাঁও, বোচাগঞ্জ

উদ্ধারকৃত:

  • চার্জার ভ্যান (ভিকটিমের)

  • স্যাম্ফনি বাটন মোবাইল

  • খুনে ব্যবহৃত দা

পুলিশের মন্তব্য

দিনাজপুর জেলা পুলিশ জানায়, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আলামতসহ আসামি গ্রেফতারের মাধ্যমে জনমনে নিরাপত্তাবোধ বাড়বে। পুলিশ সুপার জানান, ভবিষ্যতেও এ ধরনের অপরাধ দমন ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ সবসময় সজাগ ও প্রস্তুত থাকবে।

প্রতিবেদক : ‎মুরছালিন হোসেন

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মেহেদী