রাজবাড়ী, বাংলাদেশ | 19 জুলাই ২০২৫—
একটি রাষ্ট্রের সংবিধান যখন নাগরিকের বদলে একক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার অস্ত্র হয়ে ওঠে, তখন সেই রাষ্ট্র গণতন্ত্র নয়, কর্তৃত্ববাদের পথে হাঁটে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এই প্রশ্নই তুলেছেন—বাংলাদেশ কি এখনও একটি জনগণের রাষ্ট্র?
“যে সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা থাকে, সে সংবিধান নাগরিকের নয়,”—এ মন্তব্য করেন তিনি বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে রাজবাড়ী শহরের রেলগেট শহীদ স্মৃতি চত্বরে আয়োজিত পথসভায়। এটি ছিল ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ।
নতুন সংবিধানের ডাক
ডা. জারা বলেন,
“আমরা একটি নতুন সংবিধান চাই, যা সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা করবে। যে সংবিধান গুম-খুনের বৈধতা দেয়, তার জায়গা স্বাধীন বাংলাদেশে নেই।”
এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বরং একটি বৃহৎ দর্শনের বহিঃপ্রকাশ—একটি এমন রাষ্ট্রব্যবস্থার দাবি, যেখানে ক্ষমতা হবে জনগণের, শাসনব্যবস্থা হবে জবাবদিহিমূলক, আর সংবিধান হবে অংশগ্রহণমূলক ও ন্যায়নিষ্ঠ।
“এই লড়াই সরকার বদলের নয়, রাষ্ট্র বদলের”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন,
“গত বছর আপনারা গুলির ভয় না করেই রাস্তায় নেমেছিলেন। যারা শাসকগোষ্ঠীকে উল্টো ধাওয়া দিয়েছেন, তাদের স্যালুট জানাই।”
এই বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক সাহসিকতা নয়, বরং রাজনৈতিক ভিশনের প্রতিফলন। তাঁর ভাষায়, এই লড়াই নতুন সরকার নয়, “নতুন রাষ্ট্র” গঠনের জন্য—একটি এমন রাষ্ট্র যেখানে নাগরিকত্বের মানে হবে মর্যাদা, ন্যায্যতা ও অংশগ্রহণ।
একটি শ্রেণির জন্য নয়, সবার জন্য বাংলাদেশ
তাসনিম জারা বলেন,
“এ রাষ্ট্রে যেন শুধু একটি দলের, একটি শ্রেণির মানুষ সুবিধা না পায়—এ রাজনীতি বদলাতে আমরা এসেছি।”
বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রীভবন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং স্বচ্ছতা সংকট চলছে—এই বক্তব্য একটি প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনার মতো শোনায়।
ঐক্যের ডাক
তিনি সভায় উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানান দেশ গড়ার সংগ্রামে একত্রিত হওয়ার জন্য।
“আমরা চাই, বাংলাদেশ হবে সবার। রাষ্ট্র সবার জন্য কাজ করবে।”
এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নয়—বরং এটি একটি সামাজিক ও সাংবিধানিক রূপান্তরের দাবি।
উপসংহার: একটি নতুন সংবিধানের স্বপ্ন
বাংলাদেশে সংবিধান পরিবর্তনের প্রসঙ্গ খুব কমই আসে জনপরিসরে। কিন্তু যখন এটি আসে, তখন তা এক গভীর অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। তাসনিম জারার ভাষ্য সেই অসন্তোষেরই প্রতিধ্বনি—যেখানে নাগরিকরা আর শুধুমাত্র দর্শক থাকতে চায় না, তারা রাষ্ট্রের মালিক হতে চায়।
ইতিহাস সাক্ষী, যেখানেই জনগণ জেগেছে, সেখানেই রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনর্গঠন হয়েছে।
Reporter Name 
























