1:01 pm, Sunday, 23 November 2025

কানাইঘাটে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পেট্রোল ঢেলে হত্যার চেষ্টা — মৃত সন্তানের জন্ম, স্বামী গ্রেফতার

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:34:54 pm, Monday, 14 July 2025
  • 25 Time View

সিলেট | ১৪ জুলাই ২০২৫ —

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কান্দলা গ্রামে স্বামী কর্তৃক ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে হোসেন আহমদ চৌধুরী আক্তার (৪৫)-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত শনিবার (১২ জুলাই) রাতে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সাতবাঁক ইউনিয়নের চরিপাড়া গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় আক্তারকে আটক করে কানাইঘাট থানা পুলিশ।

মর্মান্তিক ঘটনা

জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা সাবানা বেগম (২০)-কে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার সকালে তার গর্ভে থাকা শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নেয়। বর্তমানে সাবানা বেগম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।

কীভাবে ঘটল এই নারকীয় ঘটনা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা খাইরুল আলম চৌধুরীর ছেলে হোসেন আহমদ চৌধুরী আক্তারের সঙ্গে এক বছর আগে দরিদ্র দিনমজুর আব্দুল জব্বারের মেয়ে সাবানার বিয়ে হয়। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে স্ত্রীকে পিত্রালয় থেকে বাড়ি নেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ি যান আক্তার। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় শাশুড়ি তাকে দিতে রাজি না হলে ক্ষুব্ধ হয়ে আক্তার বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় বাজার থেকে পেট্রোল কিনে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে এসে ঘুমন্ত সাবানার গায়ে পেট্রোল ঢেলে গ্যাস লাইট দিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়।

সাবানার আর্তচিৎকারে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা আগুন নিভিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা গর্ভের সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

আক্তার গ্রেফতার

কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল জানান, “স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে হোসেন আহমদ চৌধুরী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।”

স্থানীয়দের মতামত

ইউপি সদস্য ফখর উদ্দিন চৌধুরী জানান, “আমি অগ্নিদগ্ধ সাবানাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পুলিশকে জানানো হলে নবজাতককে দাফন করা হয়।”

কান্দলা গ্রামের অনেকে জানান, আক্তার মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে তারা জানেন। একসময় তিনি কুয়েত প্রবাসীও ছিলেন। তবে কেন তিনি এমন নারকীয় কাজ করেছেন, তা স্থানীয়রা বলতে পারছেন না।

ভিকটিমের পিতার বক্তব্য

সাবানা বেগমের বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, “বিয়ের পর আক্তার প্রায়ই মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়িতেই থাকত। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। মেয়ের সাথে যা ঘটেছে, তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আমার মেয়ে এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে।”

মিশকাতুল কুরআন মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা শেখ সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী বলেন,
“পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন— ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে অভিশাপ দিবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা নিসা: ৯৩)। এ ধরনের নির্মমতা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পরিবারে হোক বা সমাজে— অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা বা ক্ষতি করার অধিকার কারো নেই।” আর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন— ‘সবচেয়ে উত্তম মানুষ সেই, যে তার পরিবার-পরিজনের কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)।

স্ত্রীকে নিরাপত্তা ও ভালোবাসা দেয়া স্বামীর foremost দায়িত্ব। গর্ভবতী স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতি ও যত্নবান হওয়া তো আরও বড় দায়িত্ব। কোনো অবস্থাতেই নারীকে শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। এ ধরনের পাশবিক কর্মকাণ্ড শুধু মানবতাবিরোধী নয়, কঠোর গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, এর জন্য কঠোর বিচার আছে।”

*তিনি আরও বলেন, “সমাজকে এই ধরনের অনাচার থেকে রক্ষা করতে পারিবারিক বন্ধন, নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং দ্বীনী মূল্যবোধের চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা নারীর উপর নির্যাতন চালায়, তাদের জন্য দুনিয়াতে আইনগত শাস্তি এবং আখিরাতে কঠিন আজাব অপেক্ষা করছে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে চলা, পরিবারকে নিরাপদ রাখা এবং কোনো নির্যাতনকারীর পক্ষ না নেয়া।”

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : শেখ আসমা আক্তার

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

কানাইঘাটে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পেট্রোল ঢেলে হত্যার চেষ্টা — মৃত সন্তানের জন্ম, স্বামী গ্রেফতার

Update Time : 10:34:54 pm, Monday, 14 July 2025

সিলেট | ১৪ জুলাই ২০২৫ —

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কান্দলা গ্রামে স্বামী কর্তৃক ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে হোসেন আহমদ চৌধুরী আক্তার (৪৫)-কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত শনিবার (১২ জুলাই) রাতে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সাতবাঁক ইউনিয়নের চরিপাড়া গ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় আক্তারকে আটক করে কানাইঘাট থানা পুলিশ।

মর্মান্তিক ঘটনা

জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা সাবানা বেগম (২০)-কে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার সকালে তার গর্ভে থাকা শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নেয়। বর্তমানে সাবানা বেগম হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।

কীভাবে ঘটল এই নারকীয় ঘটনা

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা খাইরুল আলম চৌধুরীর ছেলে হোসেন আহমদ চৌধুরী আক্তারের সঙ্গে এক বছর আগে দরিদ্র দিনমজুর আব্দুল জব্বারের মেয়ে সাবানার বিয়ে হয়। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে স্ত্রীকে পিত্রালয় থেকে বাড়ি নেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ি যান আক্তার। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় শাশুড়ি তাকে দিতে রাজি না হলে ক্ষুব্ধ হয়ে আক্তার বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় বাজার থেকে পেট্রোল কিনে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে এসে ঘুমন্ত সাবানার গায়ে পেট্রোল ঢেলে গ্যাস লাইট দিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়।

সাবানার আর্তচিৎকারে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা আগুন নিভিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা গর্ভের সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

আক্তার গ্রেফতার

কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল জানান, “স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে হোসেন আহমদ চৌধুরী আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।”

স্থানীয়দের মতামত

ইউপি সদস্য ফখর উদ্দিন চৌধুরী জানান, “আমি অগ্নিদগ্ধ সাবানাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পুলিশকে জানানো হলে নবজাতককে দাফন করা হয়।”

কান্দলা গ্রামের অনেকে জানান, আক্তার মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে তারা জানেন। একসময় তিনি কুয়েত প্রবাসীও ছিলেন। তবে কেন তিনি এমন নারকীয় কাজ করেছেন, তা স্থানীয়রা বলতে পারছেন না।

ভিকটিমের পিতার বক্তব্য

সাবানা বেগমের বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, “বিয়ের পর আক্তার প্রায়ই মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়িতেই থাকত। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। মেয়ের সাথে যা ঘটেছে, তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আমার মেয়ে এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে।”

মিশকাতুল কুরআন মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা শেখ সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী বলেন,
“পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন— ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে অভিশাপ দিবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’ (সূরা নিসা: ৯৩)। এ ধরনের নির্মমতা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পরিবারে হোক বা সমাজে— অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা বা ক্ষতি করার অধিকার কারো নেই।” আর প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন— ‘সবচেয়ে উত্তম মানুষ সেই, যে তার পরিবার-পরিজনের কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)।

স্ত্রীকে নিরাপত্তা ও ভালোবাসা দেয়া স্বামীর foremost দায়িত্ব। গর্ভবতী স্ত্রীর প্রতি সহানুভূতি ও যত্নবান হওয়া তো আরও বড় দায়িত্ব। কোনো অবস্থাতেই নারীকে শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। এ ধরনের পাশবিক কর্মকাণ্ড শুধু মানবতাবিরোধী নয়, কঠোর গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, এর জন্য কঠোর বিচার আছে।”

*তিনি আরও বলেন, “সমাজকে এই ধরনের অনাচার থেকে রক্ষা করতে পারিবারিক বন্ধন, নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং দ্বীনী মূল্যবোধের চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা নারীর উপর নির্যাতন চালায়, তাদের জন্য দুনিয়াতে আইনগত শাস্তি এবং আখিরাতে কঠিন আজাব অপেক্ষা করছে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে চলা, পরিবারকে নিরাপদ রাখা এবং কোনো নির্যাতনকারীর পক্ষ না নেয়া।”

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : শেখ আসমা আক্তার

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল