1:00 pm, Sunday, 23 November 2025

বিরলে কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:53:56 pm, Monday, 14 July 2025
  • 24 Time View

বিরল, দিনাজপুর | ১৪ জুলাই ২০২৫ —

দিনাজপুরের বিরলে ট্রাক্টরের লোহার ফাল চুরির মিথ্যা অপবাদে এক এতিম কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা এলাকায় তোলপাড় ফেলেছে।

গত শুক্রবার (১১ জুলাই) রসুল শাহাপুর এলাকায় সড়কের পাশে একটি আম গাছে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয় মাহিম হোসেনকে। নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

স্থানীয়রা বলছেন, মাহিম কোনো চুরির সঙ্গে জড়িত নয়। তবু তাকে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে মারধর করা হয়েছে। পাশে লোকজন ভিড় করেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।

মাহিম জানায়, সে চুরির কিছুই জানে না। জোর করে ধরে এনে গাছে বেঁধে মিথ্যা অপবাদে নির্যাতন করা হয়।

এ ঘটনায় মাহিমের বাবা রায়হান পাঁচজনের নামে বিরল থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন—হেলাল, শফিকুল ইসলাম, মুকুল, মোস্তাফিজুর রহমান ও মাহাবুর রহমান।

বিরল থানার ওসি আব্দুস ছবুর জানান, ভিডিও দেখে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। দায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সবাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন, যাতে এমন নির্যাতন আর না হয়।

মিশকাতুল কোরআন মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা শেখ সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী বলেন— “ইসলামে কারো প্রতি অন্যায় অপবাদ দেওয়া বা বিনা অপরাধে কাউকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা মহাপাপ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘একজন নিরপরাধ মুসলিমের দেহ, সম্পদ ও সম্মান অপর মুসলিমের জন্য হারাম।’ এই ধরনের মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছে বেঁধে নির্যাতন চরম জুলুমের শামিল। সমাজে এমন অন্যায় বন্ধ করতে হলে কোরআন ও সুন্নাহর নীতি মেনে চলা ও বিচারকার্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরি।”

হাই কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ মালিক বলেন—“এটি একটি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ও শিশু আইন অনুযায়ী কোনো শিশুকে এভাবে শারীরিক নির্যাতন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যারা আইন হাতে তুলে নিয়ে এমন বর্বরতা চালিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সাহস না পায়।”

সিনিয়র সাংবাদিক এস এম মেহেদী হাসান বলেন, “বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে এখনও বিচার-বহির্ভূত শাস্তি ও গণপিটুনির প্রবণতা রয়ে গেছে। সামাজিক অবক্ষয়, বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি ও আইনের শাসনের দুর্বল প্রয়োগ এ ধরনের সহিংসতা উৎসাহিত করে। জনগণকে সচেতন করতে হবে যে, কোনো অপরাধের অভিযোগ প্রমাণের আগে কাউকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কারো নেই। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : মুরছালিন হোসেন

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

বিরলে কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

Update Time : 07:53:56 pm, Monday, 14 July 2025

বিরল, দিনাজপুর | ১৪ জুলাই ২০২৫ —

দিনাজপুরের বিরলে ট্রাক্টরের লোহার ফাল চুরির মিথ্যা অপবাদে এক এতিম কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা এলাকায় তোলপাড় ফেলেছে।

গত শুক্রবার (১১ জুলাই) রসুল শাহাপুর এলাকায় সড়কের পাশে একটি আম গাছে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয় মাহিম হোসেনকে। নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

স্থানীয়রা বলছেন, মাহিম কোনো চুরির সঙ্গে জড়িত নয়। তবু তাকে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে মারধর করা হয়েছে। পাশে লোকজন ভিড় করেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।

মাহিম জানায়, সে চুরির কিছুই জানে না। জোর করে ধরে এনে গাছে বেঁধে মিথ্যা অপবাদে নির্যাতন করা হয়।

এ ঘটনায় মাহিমের বাবা রায়হান পাঁচজনের নামে বিরল থানায় মামলা করেছেন। অভিযুক্তরা হলেন—হেলাল, শফিকুল ইসলাম, মুকুল, মোস্তাফিজুর রহমান ও মাহাবুর রহমান।

বিরল থানার ওসি আব্দুস ছবুর জানান, ভিডিও দেখে অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। দায়ীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সবাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন, যাতে এমন নির্যাতন আর না হয়।

মিশকাতুল কোরআন মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা শেখ সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী বলেন— “ইসলামে কারো প্রতি অন্যায় অপবাদ দেওয়া বা বিনা অপরাধে কাউকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা মহাপাপ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘একজন নিরপরাধ মুসলিমের দেহ, সম্পদ ও সম্মান অপর মুসলিমের জন্য হারাম।’ এই ধরনের মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছে বেঁধে নির্যাতন চরম জুলুমের শামিল। সমাজে এমন অন্যায় বন্ধ করতে হলে কোরআন ও সুন্নাহর নীতি মেনে চলা ও বিচারকার্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরি।”

হাই কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম এ মালিক বলেন—“এটি একটি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ও শিশু আইন অনুযায়ী কোনো শিশুকে এভাবে শারীরিক নির্যাতন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যারা আইন হাতে তুলে নিয়ে এমন বর্বরতা চালিয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সাহস না পায়।”

সিনিয়র সাংবাদিক এস এম মেহেদী হাসান বলেন, “বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে এখনও বিচার-বহির্ভূত শাস্তি ও গণপিটুনির প্রবণতা রয়ে গেছে। সামাজিক অবক্ষয়, বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতি ও আইনের শাসনের দুর্বল প্রয়োগ এ ধরনের সহিংসতা উৎসাহিত করে। জনগণকে সচেতন করতে হবে যে, কোনো অপরাধের অভিযোগ প্রমাণের আগে কাউকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার কারো নেই। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com

প্রতিবেদক : মুরছালিন হোসেন

সম্পাদনায় : সুমাইয়া/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল