কৃষকদের অভিযোগ: আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত, ক্ষতিপূরণের দাবি জোরালো
পাবনা | ১৩ জুলাই ২০২৫ —
পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলে হঠাৎ স্লুইসগেট খুলে পানি ছাড়ার ফলে প্রায় ২০০ বিঘা জমির বোনা আমন ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই পানি ছাড়া হয়েছে। এক রাতেই শেষ হয়ে গেল বছরের ভরসার ফসল।’’
এক রাতেই সব তলিয়ে গেল
বাদাই গ্রামের কৃষক বকুল শেখ বলেন, ‘‘এ বছর ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করছিলাম। হঠাৎ স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দেওয়ায় সাত বিঘার ধান পানির নিচে। এখন কীভাবে ক্ষতি সামলাব, ভেবে পাচ্ছি না। সরকার যদি কিছু ক্ষতিপূরণ দেয়, তবে অন্তত বেঁচে থাকার মতো কিছু করা যাবে।’’
তার মতো একই বিপদে পড়েছেন রিজাই শেখ, নাদের শেখ, মকবুল হোসেন, সুজন বিশ্বাস ও আকতার হোসেনসহ শতাধিক কৃষক। তারা বলছেন, ‘‘এই আমন ধান আমাদের সবচেয়ে কম খরচের ফসল। এই ধানেই আমাদের পরিবারের খাবারের বড় একটা অংশ জোগাড় হয়। সবকিছু একরাতে শেষ হয়ে গেল!’’
কৃষকরা বলছেন, ‘‘ধীরে ছাড়লেই বাঁচত ধান’’
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দাবি করেন, তালিমনগর স্লুইসগেট থেকে যদি ধাপে ধাপে পানি ছাড়া হতো, তাহলে ফসল তলিয়ে যেত না। মকবুল হোসেন বলেন, ‘‘বিলে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি আছে। এর মধ্যে ২০০ বিঘা তলিয়ে গেছে। পাম্প হাউজ দিয়ে পানি টেনে নেওয়া হলে কিছুটা হলেও রক্ষা পেত ধান।’’
প্রশাসনের যুক্তি
তবে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, ‘‘পাটচাষীদের দাবির প্রেক্ষিতে ও বিলে মাছের স্বাভাবিক বংশবিস্তার রক্ষার কথা বিবেচনা করেই পানি ছাড়া হয়েছে। পাট কাটার উপযুক্ত সময় হয়েছে, অথচ পানির সংকট ছিল। এছাড়া জোয়ারের সাথে রেনু পোনা আসে, সেটিও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’’
তিনি আশ্বাস দেন, ‘‘যদি কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে কৃষি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে।’’
কৃষি বিভাগের বক্তব্য
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘‘কৃষকরা আমাদের জানিয়েছিলেন যেন পানি একেবারে না ছাড়া হয়। আমরা ইউএনও স্যারকে বিষয়টি জানাই। তবে উঁচু এলাকার পাটচাষীদের চাপ ও দাবির মুখে ইউএনও বাধ্য হন পানি ছাড়তে। এখানে সবার স্বার্থই বিবেচনায় রাখতে হয়।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘পাম্প হাউজের মাধ্যমে দ্রুত পানি তুলে নিলে অনেক জমির ধান এখনো রক্ষা সম্ভব।’’
এখন কী হবে?
এ বছর সুজানগর উপজেলায় প্রায় ২,৭৭০ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪,৩৭৭ মেট্রিকটন চাল। কৃষকদের দাবি, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন সরকারের কাছে জরুরি ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন সহায়তা দাবি করছেন। তাদের কথায়, *‘‘আমরা চাই আর যেন এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি না হয়। ফসল বাঁচানোই আমাদের বাঁচা।’’
রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com
প্রতিবেদক : সুমাইয়া ইসলাম
সম্পাদনায় : মিনারা/ তাবাসসুম/ মেহেদী
Reporter Name 




























