সখীপুর, টাঙ্গাইল | ১২ জুলাই ২০২৫ —
টাঙ্গাইলের সখীপুরে মাত্র ১৭ বছর বয়সী মামুন বিষপান করে জীবন শেষ করে দিলেন।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মামুন। নিহত মামুন উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের শামছুল আলমের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, সম্প্রতি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন মামুন। ১১ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে পরিবারের অগোচরে বাড়িতে ঘাসের বিষ পান করেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পেরে দ্রুত হাসপাতালে নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
সখীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম ভূঁইয়া বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। মরদেহের সুরতহাল ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
আত্মহত্যা নিয়ে ইসলামের অবস্থান
স্থানীয় সানবান্দা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম বলেন, “আত্মহত্যা ইসলামে চরমভাবে নিষিদ্ধ (হারাম)। কোনো অবস্থাতেই নিজের জীবন নিজেই নষ্ট করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
❝তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।❞
(সূরা আন-নিসা, আয়াত ২৯)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন —
❝আর নিজের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নেয়ো না।❞
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৯৫)
অর্থাৎ, বিপদের সময় হতাশা বা হতভম্ব হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া মহাপাপ। জীবনের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাই মানুষের উচিত বিপদে ধৈর্যধারণ করা। কোরআনে আল্লাহ বলেন:
❝নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিদান অসীমভাবে দেওয়া হবে।❞
(সূরা আয-জুমার, আয়াত ১০)
হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আত্মহত্যার পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন। যেমন —
❝যে ব্যক্তি কোনো জিনিস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, কেয়ামতের দিন সে একই জিনিস দিয়ে শাস্তি পাবে।❞
(সহীহ মুসলিম: হাদিস ১০৯)
আরেক হাদিসে আছে:
❝তোমাদের কেউ যেন বিপদে ধৈর্যহারা হয়ে মৃত্যুর কামনা না করে। বরং বলুক — হে আল্লাহ! তুমি যদি আমার জন্য জীবনকে ভালো মনে করো তবে আমাকে জীবিত রাখো, আর যদি মৃত্যু ভালো মনে করো তবে আমাকে মৃত্যু দাও।❞ (সহীহ বুখারি: হাদিস ৫৬৭১)
মাওলানা আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, “যে কোনো মানসিক কষ্ট বা হতাশার সময় পরিবার, সমাজ, ওলামায়ে কেরাম এবং বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া উচিত। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত, কারণ তিনি কখনো বান্দাকে নিরাশ করেন না।”
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ
সিলেট এমএ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পলাশ রায় বলেন,
“কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার বড় কারণ মানসিক চাপে একাকিত্ব অনুভব করা, যা পরিবারে পর্যাপ্ত সহমর্মিতা না পেলে গুরুতর রূপ নেয়। পরিবার ও সমাজকে এই সংকেতগুলো আগে থেকে বুঝতে হবে—হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ, আত্মঘাতী কথাবার্তা বলার মতো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে লজ্জা বা গোপনীয়তা রাখার প্রবণতা বিপজ্জনক। এখনই স্কুল-কলেজ ও পরিবার পর্যায়ে কাউন্সেলিং সচেতনতা বাড়াতে হবে।”
আইনি দিক
টাঙ্গাইল বারের আইনজীবী এডভোকেট রাসেল রানা বলেন, “আত্মহত্যা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে না হলেও এর পেছনে প্ররোচনা, অবহেলা বা নির্যাতনের কোনো প্রমাণ থাকলে তা শাস্তিযোগ্য। তাই পুলিশ সাধারণত ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নেয়, যাতে কোনো প্ররোচনা বা হত্যার আলামত আছে কি না—তা নিশ্চিত হওয়া যায়।”
রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com
প্রতিবেদক : আহমেদ সাজু
সম্পাদনায় : সুমাইয়া ইসলাম/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল
Reporter Name 



























