সখীপুর, টাঙ্গাইল | ১১ জুলাই ২০২৫ —
ভূমিকা
টাঙ্গাইলের সখীপুরে প্রবাসীর স্ত্রী দিলরুবা আক্তার জুইয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হলেও স্থানীয়দের একাংশের ধারণা, এটি নিছক আত্মহত্যা নয় — এর পেছনে থাকতে পারে নির্মম হত্যার ছক। প্রবাসে স্বামী, সন্তান শাশুড়ির বাড়ি, আর জুই একা — এমন অবস্থায় তার রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন।
মূল ঘটনা
শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে সখীপুর উপজেলার নলুয়া এলাকায় নিজ ঘর থেকে দিলরুবা আক্তার জুই (৩২)-এর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জুই সিঙ্গাপুর প্রবাসী আলমগীর হোসেনের স্ত্রী।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র জানায়, ঘটনার সময় জুই একাই ছিলেন। ছেলে ও শাশুড়ি কয়েক দিন আগে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে গেছেন। রাতে তার সঙ্গে প্রতিবেশী পারুল বেগম থাকলেও সকালে তিনি চলে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পারুল এসে ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
কেন উঠছে হত্যার সন্দেহ?
🔎 প্রতিবেশীদের দাবি — জুই বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন না, তার কোনো সুইসাইড নোটও মেলেনি।
🔎 ঘরের দরজা খোলা ছিল কিনা, বাড়িতে অন্য কেউ ঢুকেছিল কিনা — এসব বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
🔎 স্বামীর প্রবাসজীবনকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধের কথাও উঠছে।
পুলিশের অবস্থান
সখীপুর থানার ওসি মো. আবুল কালাম ভূইয়া বলেন,
“লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। এটি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা, সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
আইনজীবীর দৃষ্টিকোণ
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন বলেন,
“এ ধরনের রহস্যজনক মৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও স্বচ্ছ তদন্ত সবচেয়ে জরুরি। সন্দেহজনক মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা (হত্যা) অনুযায়ী মামলা হতে পারে। সাক্ষী, ফরেনসিক রিপোর্ট এবং পরিবারের বক্তব্য— সবই গুরুত্বপূর্ণ।”
সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টি
সমাজ বিশ্লেষক ড. মাহফুজা ইয়াসমিন বলেন,
“প্রবাসীর পরিবারে একাকীত্ব ও নিরাপত্তাহীনতা অনেক সময় নারী নির্যাতনের সুযোগ তৈরি করে। জুইয়ের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন হলে সমাজের অনেক অজানা দিক বেরিয়ে আসবে।”
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ
কাহারতা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি বিল্লাল হোসেন বলেন,
“ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।’ (সূরা নিসা: ২৯)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আত্মহত্যা করবে, সে কিয়ামত পর্যন্ত একইভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।’ (সহীহ মুসলিম)। তবে যদি কারো মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যা হয়, তবে তা পুরো মানবজাতিকে হত্যার সমান অপরাধ (সূরা মায়েদাহ: ৩২)। তাই পরিবার-সমাজের উচিত সন্দেহজনক মৃত্যুর সঠিক তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করা এবং বিপদে কারো পাশে দাঁড়ানো।”
পরিবার-সমাজের করণীয়
** সন্দেহজনক মৃত্যুর ঘটনায় তাড়াহুড়ো না করে সঠিক তদন্তে সহায়তা করা
** প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের সন্দেহজনক আচরণ প্রশাসনকে জানানো
** একাকী নারীর নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি পরিবার-সমাজের নজর বাড়ানো
উপসংহার
দিলরুবা আক্তার জুইয়ের মৃত্যু আত্মহত্যা, না কি নির্মম হত্যাকাণ্ড — এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে সুষ্ঠু তদন্তে। প্রবাসীদের পরিবারে যেন এমন আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু না ঘটে, সে জন্যই প্রশাসন, সমাজ ও পরিবারের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com
প্রতিবেদক : আহমেদ সাজু
সম্পাদনায় : সুমাইয়া ইসলাম/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল
Reporter Name 



























