বিরল, দিনাজপুর | ১১ জুলাই ২০২৫ —
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী শক্তি হিসেবে বিএনপি’র পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা আর রাজনৈতিক বৈরিতার মধ্যে টিকে থাকা বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে নতুনভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে চাইছে — এ কার্যক্রম তারই প্রতিফলন।
কামদেবপুর থেকে নতুন শুরু
বৃহস্পতিবার বিকেলে কামদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ৮নং ধর্মপুর ইউনিয়নের ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রমের শুভ সূচনা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দিনাজপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনের ধানের শীষ প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোঃ মোজাহারুল ইসলাম।
স্থানীয় পর্যায়ের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ — ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মজিদের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সভায় বক্তৃতা করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি’র স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মোঃ নুর ইসলাম, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম, কৃষক দল, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃবৃন্দ।
বক্তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা
বক্তারা সরাসরি জানিয়েছেন — যারা রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন, তাদের বিএনপিতে কোনো স্থান নেই। বক্তারা আরও বলেন, বিগত একদশকে যারা দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন, চাকরি-বাণিজ্য বা প্রশাসনিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তারাই বিএনপি’র আসল শক্তি। তাদের নিয়েই নতুন প্রজন্মের তৃণমূল বিএনপি গড়ে উঠবে।
একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
বিশ্লেষকরা বলছেন — বিএনপি’র এই তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুধু দিনাজপুরে নয়, সারা দেশেই ছড়িয়ে দিতে হবে। রাজনৈতিক গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, “দীর্ঘ রাজনৈতিক বন্ধ্যা দশা কাটাতে হলে বিএনপি’কে তৃণমূলকেই প্রথমে শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূল সংগঠিত না হলে কেন্দ্রীয় রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
আন্তর্জাতিক নজর ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা
একইসাথে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতির যে সংকুচিত ক্ষেত্র, তা আবারও গণতান্ত্রিকভাবে উন্মুক্ত করতে হলে এমন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তাদের মতে, জনগণের অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ঘরে ঘরে নিয়ে যাওয়ার এ প্রচেষ্টা সফল হলে রাজনীতির মাঠে একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে ভারসাম্য তৈরি হবে।
তৃণমূলের প্রত্যাশা
বিরলের নতুন ও পুরনো বিএনপি কর্মীরা আশাবাদী — তারা আর মামলা, হামলা ও ভয়ভীতি নয়; বরং নতুন নেতৃত্ব, নতুন কর্মসূচি আর স্বচ্ছ রাজনীতির মাধ্যমে দলটিকে আরও শক্তিশালী দেখতে চান।
এ সময় স্থানীয় এক যুবদল নেতা বলেন, “আমরা চাই, বিএনপি তৃণমূলের কর্মীদের মূল্যায়ন করুক। সুবিধাবাদী নেতা নয়, ত্যাগী কর্মীদের পাশে থাকুক। তাহলেই সাধারণ মানুষ আবার বিশ্বাস করবে।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠা: একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বিকাশ এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষাই ছিল এই দলের মূল উদ্দেশ্য।
বিএনপি’র পূর্বের নাম ছিল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল)। ১৯৭৭ সালে জাগদল গঠন করা হলেও পরবর্তীতে এটিকে বিস্তৃত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়।
একদলীয় শাসন ও বাকশাল প্রবর্তনের পর দেশে বহুদলীয় রাজনীতি পুনঃস্থাপন, জনগণের ভোটাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকার নিয়েই বিএনপি’র যাত্রা শুরু হয়েছিল।
উপসংহার
কামদেবপুরের মাঠে গেরুয়া মাটি আর সবুজ ধানের শীষের পতাকার নিচে নতুন প্রত্যাশা জেগেছে — একদিন হয়তো এই নতুন সদস্য আর নবায়ন করা কার্ডগুলোই গণতন্ত্রের নতুন বাঁক রচনা করবে।
রূপান্তর সংবাদ-এ প্রতিনিধি হোন!
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। আগ্রহীরা সিভি পাঠান: E-mail : rupantorsongbad@gmail.com
প্রতিবেদক : মুরছালিন হোসেন
সম্পাদনায় : আসমা/ তাবাসসুম/ মাহমুদুল
Reporter Name 
























