📌 স্থানীয় সরকারে প্রশাসনিক দখল, স্বশাসনের শূন্যতা: ভোটের দাবিতে বঞ্চিত জনতা 📌
ঢাকা | ০২ জুলাই ২০২৫ — বাংলাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি দিয়ে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে দৃশ্যপট ভিন্ন। নির্বাচন অনিয়মিত, ক্ষমতা চলে গেছে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হাতে। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, দখল করছে স্বার্থান্বেষী চক্র।
ভোট নেই, সেবা নেই – মৌলভীবাজার শহরের দক্ষিণ কমিলাবাদ এলাকার মাহমুদুল হাসান বলেন, “আগে নাগরিক সনদের জন্য সকালে আবেদন করলে বিকেলেই হাতে পেতাম। এখন কয়েকদিন লেগে যায়। আমাদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের বদলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারি ছুটি ছাড়া বাকি সময়েও তাকে পাওয়া যায় না। আগে যে কোনো সময় কাউন্সিলরের সিল-স্বাক্ষর মিলত, এখন আমরা মহা বিপদে পড়েছি। এর সমাধান জরুরি।”
মৌলভীবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজছাত্রী তাহমিনা আক্তার বলেন, “জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। আগে এত দেরি হতো না। আমরা খুব বিপদে আছি। দ্রুত স্থানীয় নির্বাচন চাই।”
২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবিনা সুলতানা জান্নাত বলেন, “আগে একদিন পর পর বাসা থেকে ময়লা নিয়ে যেত, এখন ৩-৪ দিন পর আসে। চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। অভিযোগ করার কেউ নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, “বিগত ঈদুল ফিতরের সময় রাস্তায় লাইট বন্ধ ছিল। ঈদের পর বহুবার বলার পর ঠিক হয়েছে। ঈদুল আজহার আগের দিন থেকে আবার লাইট জ্বলছে না। পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের ইনচার্জকে বারবার বলেও কোনো লাভ হয়নি। যেখানে দরকার সেখানে অন্ধকার, আর কোদালীছাড়ার পারে যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে লাইট জ্বলছে। কথা বলার কেউ নেই।”
ঐতিহাসিক গোঁড়ামি আর রাজনৈতিক অনীহা– বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক ধারা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আর আইনগত দুর্বলতাই এই সংকটের মূল কারণ। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. ফারুক হোসেন বলেন, “সংবিধানে স্থানীয় স্বশাসনের কথা থাকলেও বাস্তবে সব ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের মতো কর্মকর্তাদের হাতে কেন্দ্রীভূত। ফলে জনগণ বঞ্চিত হয়, আর স্বার্থান্বেষী চক্র সুযোগ নেয়।”
সিনিয়র সাংবাদিক এস এম মেহেদী হাসান বলেন, “নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া স্থানীয় সরকার অর্থহীন। যে কোনো সরকারেরই উচিত নিরপেক্ষ ও সময়মত নির্বাচন নিশ্চিত করা, যাতে জনগণের মৌলিক সেবা ও অধিকার সুরক্ষিত থাকে।”
ড. তারেক আজিজ (অ্যাডভোকেট) বলেন, “স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন ও নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। না হলে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণই থেকে যাবে, জনগণ ভোট আর সেবার অধিকার হারাবে।”
উত্তরণ কোথায়– বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বশাসন কার্যকর করতে হলে দ্রুত নির্বাচন, স্বচ্ছ তদারকি আর জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণই একমাত্র সমাধান। না হলে ক্ষমতার এই শূন্যস্থান ভরাট করবে আরও শক্তিশালী স্বার্থান্বেষী চক্র।
শেষ কথা–স্থানীয় সরকার জনগণের। ভোট, জবাবদিহি আর স্বশাসনই একে জীবিত রাখে — প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে নয়।
লেখক : মনিরুজ্জামান মনির
— তাবাসসুম/ সালেহ/ মেহেদী
Reporter Name 
























