5:16 pm, Sunday, 7 December 2025

কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামী দাওয়াতের গুরুত্ব

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:35:36 pm, Tuesday, 2 December 2025
  • 72 Time View

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী : নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা’দ।

ইসলামী দাওয়াত মানবজাতিকে সৎপথে ফিরিয়ে আনার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। মানুষের কল্যাণে মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী–রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন, তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছেন এবং শিরক ও সকল প্রকার পাপাচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“…যিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন।” (সূরা আরাফ: ১৫৭)

দাওয়াতের দায়িত্ব উম্মতের ওপর

ইসলামী দাওয়াত শুধু নবী–রাসূলদের দায়িত্ব নয়; বরং পূর্ণ উম্মতের ওপরই অর্পিত একটি ফরজ দায়িত্ব। সৎকাজের নির্দেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা প্রতিটি মুসলমানের ওপর আবশ্যক। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজের নির্দেশ দেবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে—আর তারাই সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)

পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরে দাওয়াতের দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে। পিতা তার স্ত্রী ও সন্তানদের, মাদ্রাসা–মসজিদের প্রধানগণ তাঁদের অধীনদের, প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ কর্মচারীদের এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের অধীনস্তদের ইসলামের দিকে আহ্বান করবেন। হাদিসে এসেছে—
“তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (বুখারি)

দাওয়াত শুধু নির্দিষ্ট মহলের কাজ নয়

বর্তমানে অনেকেই মনে করেন শুধু পীর-মাশায়েখ, মাদ্রাসা শিক্ষক–ছাত্র, মসজিদের ইমাম–মুয়াজ্জিন, ইসলামী বক্তা বা লেখকরাই দাওয়াতি কাজ করেন। কিন্তু দাওয়াত হলো সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত দায়িত্ব।
– বক্তা তার বয়ানের মাধ্যমে,
– লেখক তার লেখনির মাধ্যমে,
– ইমাম–খতিব মসজিদে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে,
– শিক্ষক–ছাত্র জ্ঞানের মাধ্যমে—
সকলেই দাওয়াতি কাজের অংশীদার।

রাসূল (সা.) মানুষের সঙ্গে নম্র আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন—
“মানুষের সঙ্গে সহজ-সরল আচরণ করো, কঠোর হয়ো না; সুসংবাদ দাও, ভয় দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দিও না।” (বুখারি ও মুসলিম)

দাওয়াত শুধু মসজিদ–মাদ্রাসায় সীমাবদ্ধ নয়

ডিজিটাল যুগে দাওয়াতের ক্ষেত্র আরও প্রশস্ত হয়েছে। ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদ প্রচারে লক্ষাধিক ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে। মুসলমানদেরও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে হবে। দাওয়াত শুধু মুসলমানদের মধ্যে নয়; অমুসলিমদের কাছেও পৌঁছাতে হবে।

বন্ধ–বিদ্যালয় বা অবসর সময়ে কয়েকজন মিলে একজন আলেমকে সঙ্গে নিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি—সবার কাছে দ্বীনি দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া জরুরি।

দাওয়াতের ফল আল্লাহর হাতে

দাওয়াত দিলে মানুষ গ্রহণ করুক বা না করুক—দায়ী নিজেই পুরস্কৃত হয়। হাদিসে এসেছে—
“বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, আল্লাহ তখন তার সাহায্যে থাকেন।” (মুসলিম)
অন্যের ঈমান–আমলের কাজে সহযোগিতা করলে আল্লাহ তায়ালা নিজের আমলও শুদ্ধ করে দেন।

শেষে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা—আমাদের সবাইকে দাওয়াতি কাজে অংশ নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।


লেখক:
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী
ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট
সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম, সিলেট

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাষ্ট্র গঠনে কাজ করছে স্কাউটস — বিভাগীয় কমিশনার

কোরআন ও হাদিসের আলোকে ইসলামী দাওয়াতের গুরুত্ব

Update Time : 06:35:36 pm, Tuesday, 2 December 2025

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী : নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা’দ।

ইসলামী দাওয়াত মানবজাতিকে সৎপথে ফিরিয়ে আনার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। মানুষের কল্যাণে মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী–রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁরা আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন, তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছেন এবং শিরক ও সকল প্রকার পাপাচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“…যিনি তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেন এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন।” (সূরা আরাফ: ১৫৭)

দাওয়াতের দায়িত্ব উম্মতের ওপর

ইসলামী দাওয়াত শুধু নবী–রাসূলদের দায়িত্ব নয়; বরং পূর্ণ উম্মতের ওপরই অর্পিত একটি ফরজ দায়িত্ব। সৎকাজের নির্দেশ এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা প্রতিটি মুসলমানের ওপর আবশ্যক। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে—
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজের নির্দেশ দেবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে—আর তারাই সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)

পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরে দাওয়াতের দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে। পিতা তার স্ত্রী ও সন্তানদের, মাদ্রাসা–মসজিদের প্রধানগণ তাঁদের অধীনদের, প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ কর্মচারীদের এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের অধীনস্তদের ইসলামের দিকে আহ্বান করবেন। হাদিসে এসেছে—
“তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, এবং তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (বুখারি)

দাওয়াত শুধু নির্দিষ্ট মহলের কাজ নয়

বর্তমানে অনেকেই মনে করেন শুধু পীর-মাশায়েখ, মাদ্রাসা শিক্ষক–ছাত্র, মসজিদের ইমাম–মুয়াজ্জিন, ইসলামী বক্তা বা লেখকরাই দাওয়াতি কাজ করেন। কিন্তু দাওয়াত হলো সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত দায়িত্ব।
– বক্তা তার বয়ানের মাধ্যমে,
– লেখক তার লেখনির মাধ্যমে,
– ইমাম–খতিব মসজিদে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে,
– শিক্ষক–ছাত্র জ্ঞানের মাধ্যমে—
সকলেই দাওয়াতি কাজের অংশীদার।

রাসূল (সা.) মানুষের সঙ্গে নম্র আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন—
“মানুষের সঙ্গে সহজ-সরল আচরণ করো, কঠোর হয়ো না; সুসংবাদ দাও, ভয় দেখিয়ে দূরে সরিয়ে দিও না।” (বুখারি ও মুসলিম)

দাওয়াত শুধু মসজিদ–মাদ্রাসায় সীমাবদ্ধ নয়

ডিজিটাল যুগে দাওয়াতের ক্ষেত্র আরও প্রশস্ত হয়েছে। ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদ প্রচারে লক্ষাধিক ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে। মুসলমানদেরও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে হবে। দাওয়াত শুধু মুসলমানদের মধ্যে নয়; অমুসলিমদের কাছেও পৌঁছাতে হবে।

বন্ধ–বিদ্যালয় বা অবসর সময়ে কয়েকজন মিলে একজন আলেমকে সঙ্গে নিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি—সবার কাছে দ্বীনি দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া জরুরি।

দাওয়াতের ফল আল্লাহর হাতে

দাওয়াত দিলে মানুষ গ্রহণ করুক বা না করুক—দায়ী নিজেই পুরস্কৃত হয়। হাদিসে এসেছে—
“বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে, আল্লাহ তখন তার সাহায্যে থাকেন।” (মুসলিম)
অন্যের ঈমান–আমলের কাজে সহযোগিতা করলে আল্লাহ তায়ালা নিজের আমলও শুদ্ধ করে দেন।

শেষে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা—আমাদের সবাইকে দাওয়াতি কাজে অংশ নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।


লেখক:
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী
ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট
সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম, সিলেট