1:55 am, Monday, 8 December 2025

জুম্মার দিন ও জুমার নামাজের গুরুত্ব নিয়ে আলেমদের ব্যাখ্যা

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:34:02 pm, Friday, 28 November 2025
  • 44 Time View

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী জুম্মার দিন ও জুম্মার নামাজের গুরুত্ব, ফজিলত এবং আদব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবে শুক্রবারকে ইসলামে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এ দিনকে কেন্দ্র করে কোরআনে আলাদা সূরা—সূরা জুমআ—নাজিল হয়েছে।

জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয় হিজরতের প্রথম বছরেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে মদিনায় পৌঁছে প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন—ইতিহাসেও সেটিই প্রথম জুমা।

জুমার দিনের গুরুত্ব ও ধর্মীয় তাৎপর্য

ইসলামী সূত্রে জানা যায়—

  • এই দিনে হজরত আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করা হয়,
  • এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়,
  • একই দিনে জান্নাত থেকে নামানো হয়।

এ কারণে জুমার দিনকে মুসলিম উম্মাহর “সাপ্তাহিক ঈদ” হিসেবেও উল্লেখ করেছেন ইসলামি পণ্ডিতরা।

জুমার নামাজের ফজিলত

বিভিন্ন সহিহ হাদিসে জুমার নামাজ সম্পর্কে বিশেষ ফজিলতের কথা পাওয়া যায়। এর মধ্যে—

১. আগেভাগে মসজিদে গেলে বাড়তি সওয়াব

বর্ণিত আছে—
প্রথম সময়ে মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তি যেন উট কোরবানি করার সমান সওয়াব পান,
পরবর্তী সময়ে আসা লোকেরা ক্রমান্বয়ে গরু, ছাগল, মুরগি, এমনকি ডিম কোরবানি করার মতো সওয়াব পান।
(বুখারি ৮৮১)

২. দশ দিনের গুনাহ মাফ

যে ব্যক্তি গোসল করে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে— তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিন যুক্ত হয়ে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
(মুসলিম ৮৫৭)

৩. প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছরের সওয়াব

জুমার নামাজে আগেভাগে পায়ে হেঁটে গিয়ে ইমামের কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার জন্য এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের তাহাজ্জুদের সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে।
(মুসনাদে আহমাদ)

৪. দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মতোই এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা–মধ্যবর্তী সগিরা গুনাহ মাফ হয়—যদি কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা যায়।
(মুসলিম ২৩৩)

জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়

হাদিসে বলা হয়েছে—জুমার দিনে এমন এক সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়।
হাদিসের অধিকাংশ বর্ণনায় সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগে হিসেবে উল্লেখ আছে।

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল

ধর্মীয় সূত্রে জুমার দিনে নিম্নোক্ত আমলগুলো সুন্নত বা মুস্তাহাব হিসেবে বর্ণিত হয়েছে—

  • গোসল করা
  • সুগন্ধি ব্যবহার
  • উত্তম পোশাক পরা
  • আগেভাগে মসজিদে যাওয়া
  • সূরা কাহফ তিলাওয়াত
  • মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা
  • খুতবার সময় কথা না বলা
  • দোয়া করা
  • রাসূল (সা.)–এর ওপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ

জুমার নামাজ পরিত্যাগের শাস্তি

হাদিসে বলা হয়েছে—
যে ব্যক্তি কোনো ওজর ছাড়া পরপর তিনটি জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর বসিয়ে দেন।
(তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ)

তবে চার শ্রেণির ওপর জুমা ফরজ নয়—

  • নারী
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু
  • দাস
  • মুসাফির
  • গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি
    (আবু দাউদ)

লেখকের বক্তব্য

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী জুমার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন—
“জুমার সালাত একাকী আদায় করা যায় না। এটি জামাতের সঙ্গে ফরজ। মুসলমানদের উচিত নিয়মিতভাবে এ নামাজ আদায় করা।”

তিনি আরও বলেন—আল্লাহ তায়ালা যেন সবাইকে নিয়মিত জুমার নামাজ পড়ার তাওফিক দান করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ৩৭২ শিশু হাফেজের মাধ্যমে ১০০ বার কোরআন খতম

জুম্মার দিন ও জুমার নামাজের গুরুত্ব নিয়ে আলেমদের ব্যাখ্যা

Update Time : 08:34:02 pm, Friday, 28 November 2025

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী জুম্মার দিন ও জুম্মার নামাজের গুরুত্ব, ফজিলত এবং আদব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবে শুক্রবারকে ইসলামে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এ দিনকে কেন্দ্র করে কোরআনে আলাদা সূরা—সূরা জুমআ—নাজিল হয়েছে।

জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয় হিজরতের প্রথম বছরেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে মদিনায় পৌঁছে প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন—ইতিহাসেও সেটিই প্রথম জুমা।

জুমার দিনের গুরুত্ব ও ধর্মীয় তাৎপর্য

ইসলামী সূত্রে জানা যায়—

  • এই দিনে হজরত আদম (আ.)–কে সৃষ্টি করা হয়,
  • এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়,
  • একই দিনে জান্নাত থেকে নামানো হয়।

এ কারণে জুমার দিনকে মুসলিম উম্মাহর “সাপ্তাহিক ঈদ” হিসেবেও উল্লেখ করেছেন ইসলামি পণ্ডিতরা।

জুমার নামাজের ফজিলত

বিভিন্ন সহিহ হাদিসে জুমার নামাজ সম্পর্কে বিশেষ ফজিলতের কথা পাওয়া যায়। এর মধ্যে—

১. আগেভাগে মসজিদে গেলে বাড়তি সওয়াব

বর্ণিত আছে—
প্রথম সময়ে মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তি যেন উট কোরবানি করার সমান সওয়াব পান,
পরবর্তী সময়ে আসা লোকেরা ক্রমান্বয়ে গরু, ছাগল, মুরগি, এমনকি ডিম কোরবানি করার মতো সওয়াব পান।
(বুখারি ৮৮১)

২. দশ দিনের গুনাহ মাফ

যে ব্যক্তি গোসল করে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে— তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিন যুক্ত হয়ে মোট দশ দিনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
(মুসলিম ৮৫৭)

৩. প্রতিটি পদক্ষেপে এক বছরের সওয়াব

জুমার নামাজে আগেভাগে পায়ে হেঁটে গিয়ে ইমামের কাছে বসে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার জন্য এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের তাহাজ্জুদের সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে।
(মুসনাদে আহমাদ)

৪. দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মতোই এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা–মধ্যবর্তী সগিরা গুনাহ মাফ হয়—যদি কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা যায়।
(মুসলিম ২৩৩)

জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময়

হাদিসে বলা হয়েছে—জুমার দিনে এমন এক সময় রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হয়।
হাদিসের অধিকাংশ বর্ণনায় সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগে হিসেবে উল্লেখ আছে।

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল

ধর্মীয় সূত্রে জুমার দিনে নিম্নোক্ত আমলগুলো সুন্নত বা মুস্তাহাব হিসেবে বর্ণিত হয়েছে—

  • গোসল করা
  • সুগন্ধি ব্যবহার
  • উত্তম পোশাক পরা
  • আগেভাগে মসজিদে যাওয়া
  • সূরা কাহফ তিলাওয়াত
  • মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা
  • খুতবার সময় কথা না বলা
  • দোয়া করা
  • রাসূল (সা.)–এর ওপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ

জুমার নামাজ পরিত্যাগের শাস্তি

হাদিসে বলা হয়েছে—
যে ব্যক্তি কোনো ওজর ছাড়া পরপর তিনটি জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার অন্তরে মোহর বসিয়ে দেন।
(তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ)

তবে চার শ্রেণির ওপর জুমা ফরজ নয়—

  • নারী
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু
  • দাস
  • মুসাফির
  • গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি
    (আবু দাউদ)

লেখকের বক্তব্য

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী জুমার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন—
“জুমার সালাত একাকী আদায় করা যায় না। এটি জামাতের সঙ্গে ফরজ। মুসলমানদের উচিত নিয়মিতভাবে এ নামাজ আদায় করা।”

তিনি আরও বলেন—আল্লাহ তায়ালা যেন সবাইকে নিয়মিত জুমার নামাজ পড়ার তাওফিক দান করেন।