1:37 pm, Sunday, 23 November 2025

জমাদিউস সানি মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:19:18 pm, Thursday, 20 November 2025
  • 83 Time View

সিলেট | ২০ নভেম্বর ২০২৫ — আরবি বর্ষপঞ্জির হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। এর জোড়া মাস হলো জমাদিউল আউয়াল, যা হিজরি সনের পঞ্চম মাস। বাংলায় এ মাসগুলোর অর্থ “প্রথম শীত” ও “দ্বিতীয় শীত”; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম ও দ্বিতীয় মাস। আরবে মাস দুটির নাম হলো ‘আল জুমাদাল উলা’ এবং ‘আল জুমাদাল উখরা’ বা ‘আল জুমাদাস সানিয়াহ’। ভারতীয় উপমহাদেশে মাস দুটি মূলত জমাদিউল আউয়ালজমাদিউস সানি নামে পরিচিত।

‘জুমাদা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো স্থির, দৃঢ়, কঠিন, নিস্তব্ধ ও বিশ্বস্ত। শীতকালে তরল পদার্থ বরফে পরিণত হয়, উদ্ভিদ ও প্রাণী নিথর হয়ে যায়—এই কারণে মাসটির নামকরণ হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “জুমাদা হলো শীতকাল, বসন্তের নিকটবর্তী এবং গ্রীষ্মের পূর্ববর্তী সময়।”

জমাদিউস সানি মাসে নেক আমল ও ইবাদতের গুরুত্ব অনেক। বিশেষত এই মাসে:

  • নফল নামাজ ও নফল রোজা আদায় করা,
  • কাজা ও মান্নত রোজা পূরণ করা,
  • মাসের ১, ১০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রোজা রাখা,
  • চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিদ’ সুন্নাত রোজা পালন করা।

এই মাসটি রজব মাসের প্রস্তুতির সময় হিসেবে আরও বেশি নেক আমল এবং দান–খয়রাত, জিকির–আসকার, দোয়া, দরুদ, তাসবিহ ও খতম তিলাওয়াতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত। হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“পরকালে নেককার মুমিনদের কোনো আফসোস থাকবে না; বরং আফসোস থাকবে শুধুমাত্র সেই সময়ের জন্য, যা তারা নেক আমল ছাড়া অতিবাহিত করেছে।” (তিরমিজি)

শীত ও গরমের মৌসুমে বিশেষ ইবাদত ও নেক আমল কোরআন–হাদিসে গুরুত্বপূর্ণভাবে উল্লেখ রয়েছে। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যেহেতু কুরাইশদের আসক্তি আছে, তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তারা এই (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করুক। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেছেন।” (সুরা কুরাইশ, আয়াত ১-৪)

মাসটি সাধারণ সময়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নেক আমল ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই মাসের বরকত লাভ করা সম্ভব, অন্যথায় সময়ের অপচয় হলে অনুতাপ ও অনুশোচনা করা প্রয়োজন।

উপসংহার: জমাদিউস সানি মাস মুসলমানদের জন্য নেক আমল ও ইবাদতের একটি বিশেষ সময়। এ মাসে নিয়মিত নামাজ, রোজা, দান ও অন্যান্য নেক আমল পালন করলে ব্যক্তির ইবাদত ও নেক কর্মকাণ্ডে প্রগাঢ়তা আসে এবং আল্লাহর বরকত লাভ হয়।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট। প্রতিষ্ঠিতা সভাপতি জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম সিলেট।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

জমাদিউস সানি মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

Update Time : 08:19:18 pm, Thursday, 20 November 2025

সিলেট | ২০ নভেম্বর ২০২৫ — আরবি বর্ষপঞ্জির হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। এর জোড়া মাস হলো জমাদিউল আউয়াল, যা হিজরি সনের পঞ্চম মাস। বাংলায় এ মাসগুলোর অর্থ “প্রথম শীত” ও “দ্বিতীয় শীত”; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম ও দ্বিতীয় মাস। আরবে মাস দুটির নাম হলো ‘আল জুমাদাল উলা’ এবং ‘আল জুমাদাল উখরা’ বা ‘আল জুমাদাস সানিয়াহ’। ভারতীয় উপমহাদেশে মাস দুটি মূলত জমাদিউল আউয়ালজমাদিউস সানি নামে পরিচিত।

‘জুমাদা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো স্থির, দৃঢ়, কঠিন, নিস্তব্ধ ও বিশ্বস্ত। শীতকালে তরল পদার্থ বরফে পরিণত হয়, উদ্ভিদ ও প্রাণী নিথর হয়ে যায়—এই কারণে মাসটির নামকরণ হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, “জুমাদা হলো শীতকাল, বসন্তের নিকটবর্তী এবং গ্রীষ্মের পূর্ববর্তী সময়।”

জমাদিউস সানি মাসে নেক আমল ও ইবাদতের গুরুত্ব অনেক। বিশেষত এই মাসে:

  • নফল নামাজ ও নফল রোজা আদায় করা,
  • কাজা ও মান্নত রোজা পূরণ করা,
  • মাসের ১, ১০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রোজা রাখা,
  • চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়ামে বিদ’ সুন্নাত রোজা পালন করা।

এই মাসটি রজব মাসের প্রস্তুতির সময় হিসেবে আরও বেশি নেক আমল এবং দান–খয়রাত, জিকির–আসকার, দোয়া, দরুদ, তাসবিহ ও খতম তিলাওয়াতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত। হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“পরকালে নেককার মুমিনদের কোনো আফসোস থাকবে না; বরং আফসোস থাকবে শুধুমাত্র সেই সময়ের জন্য, যা তারা নেক আমল ছাড়া অতিবাহিত করেছে।” (তিরমিজি)

শীত ও গরমের মৌসুমে বিশেষ ইবাদত ও নেক আমল কোরআন–হাদিসে গুরুত্বপূর্ণভাবে উল্লেখ রয়েছে। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যেহেতু কুরাইশদের আসক্তি আছে, তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তারা এই (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করুক। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেছেন।” (সুরা কুরাইশ, আয়াত ১-৪)

মাসটি সাধারণ সময়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নেক আমল ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই মাসের বরকত লাভ করা সম্ভব, অন্যথায় সময়ের অপচয় হলে অনুতাপ ও অনুশোচনা করা প্রয়োজন।

উপসংহার: জমাদিউস সানি মাস মুসলমানদের জন্য নেক আমল ও ইবাদতের একটি বিশেষ সময়। এ মাসে নিয়মিত নামাজ, রোজা, দান ও অন্যান্য নেক আমল পালন করলে ব্যক্তির ইবাদত ও নেক কর্মকাণ্ডে প্রগাঢ়তা আসে এবং আল্লাহর বরকত লাভ হয়।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট। প্রতিষ্ঠিতা সভাপতি জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম সিলেট।