ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) | ২০ নভেম্বর ২০২৫ — বাংলাদেশে তামাক একটি নীরব মহামারি। এই নীরব মৃত্যুঝুঁকি ও সামাজিক ক্ষতির বিরুদ্ধে টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে অনুষ্ঠিত হলো “স্থায়ীত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি” শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা। স্থানীয় সরকার, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠন ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে আয়োজিত এই সভা তামাকবিরোধী প্রচেষ্টায় নতুন গতি এনে দিয়েছে।
তামাক: ব্যক্তিগত অভ্যাস থেকে জাতীয় সংকট
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু তামাকসেবন–সংক্রান্ত রোগে। ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন তামাক উভয়ই সমান ক্ষতিকর—এমন তথ্য সভায় উঠে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সিগারেট ফুঁকলেও শরীরে ৭,০০০ এর বেশি রাসায়নিক প্রবেশ করে, যার শতাধিক ক্যানসার তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিড়ি-সিগারেটের সহজলভ্যতা, অসচেতনতা এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতার কারণে নিয়ন্ত্রণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। ইন্দুরকানীও এর বাইরে নয়।
সভায় বক্তাদের আহ্বান: বাজেট, তদারকি ও শক্তিশালী বাস্তবায়ন
ইন্দুরকানী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ইন্দুরকানী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. জাকারিয়া হোসেন।
তিনি বলেন—
“তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে যে নির্দেশনা আছে, তা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারকে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। সচেতনতা কার্যক্রম নিয়মিত না হলে কোনো উদ্যোগই টেকসই হয় না।”
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি গাজী হেলাল উদ্দীন, সদর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মজনু হোসেন রনি এবং রূপসী বাংলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. আজাদ হোসেন তামাকমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে সামাজিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
সভায় সাংবাদিকরাও স্থানীয় পর্যায়ে আইন লঙ্ঘনের নানা চিত্র তুলে ধরেন—দোকানে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রি, জনসমাগমস্থলে ধূমপান এবং তামাকবিজ্ঞাপনের প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন: যা আছে, যা নেই
সভায় ২০০৫ সালের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০১৩) বিশেষভাবে আলোচিত হয়। আইনে আছে—
- জনসমাগমস্থলে ধূমপান নিষিদ্ধ
- অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিক্রি অপরাধ
- ৫০% প্যাকেটে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাধ্যতামূলক
- তামাক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান–হাসপাতাল–মসজিদ–সরকারি দপ্তরের ১০ মিটারের মধ্যে বিক্রি নিষিদ্ধ
কিন্তু বাস্তবতা হলো—আইন আছে, প্রয়োগ নেই। বক্তাদের ভাষায়—
“আইন কার্যকর না হলে তামাকের ভয়াবহতা অটুটই থাকবে।”
জনসচেতনতা ছাড়া কোনো উদ্যোগ সফল নয়
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ইন্দুরকানীতে স্কুল–কলেজ, ইউনিয়ন পরিষদ, বাজার কমিটি এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলবে।
সভার সঞ্চালনা করেন কর্মসূচি সমন্বয়কারী মো. আলতাফ হোসেন।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ: তামাক পরিহার ইসলামের নির্দেশ — মাওলানা সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী
মিশকাতুল কোরআন মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী রূপান্তর সংবাদকে বলেন— “কোরআনে আল্লাহ বলেন— ‘নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না’ (সূরা বাকারা: ১৯৫)। আর তামাক এমন কিছু, যা নিশ্চিতভাবে শরীরের ক্ষতি করে, রোগ সৃষ্টি করে এবং পরিবারকে দুর্ভোগে ফেলে। ইসলামে ক্ষতিকর ও অপবিত্র বস্তু পরিহারের নির্দেশ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন—
“রাসুল (সা.) বলেছেন— কোনো কিছু নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা অন্যকে ক্ষতি দেওয়া বৈধ নয় (ইবনে মাজাহ)। ধূমপান নিজের ক্ষতি তো করেই, পাশাপাশি স্ত্রী–সন্তান–সহপথচারীকেও ক্ষতির মুখে ফেলে। তাই ধর্মীয়ভাবে এটি পরিত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি।”
মাওলানা সাদ আহমদ আমিন বর্ণভী মনে করেন, মসজিদ-মাদ্রাসার মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রচারণা চালানো হলে জনসচেতনতা আরও দ্রুত বাড়বে। তিনি যুবসমাজকে তামাক থেকে দূরে রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেন।
সম্পাদনায় | এস এম মেহেদী হাসান | E-mail: rupantorsongbad@gmail.com
Reporter Name 




























