12:45 pm, Sunday, 23 November 2025

জমাদিউস সানি মাসের ফজিলত ও ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:53:49 am, Wednesday, 19 November 2025
  • 109 Time View

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী — ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট

ইসলাম ধর্ম ডেস্ক, ঢাকা | ১৯ নভেম্বর ২০২৫ — আরবি হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস জমাদিউস সানি। এর আগের মাস জমাদিউল আউয়ালকে বলা হয় প্রথম জুমাদা, আর জমাদিউস সানি হলো দ্বিতীয় জুমাদা। আরবিতে এই দুই মাস ছিল শীতের প্রতীক। তাই ভারতীয় উপমহাদেশে মাস দুটি বেশি পরিচিত—‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে।

‘জুমাদা’ শব্দের অর্থ—স্থির, শুষ্ক, জমাটবদ্ধ, নিথর, নীরবতা, নির্ভরযোগ্যতা ও শীতলতা। তীব্র শীতে পানি জমে বরফ হয়, প্রাণ–প্রকৃতি নিথর হয়ে পড়ে—এই বাস্তবতা থেকেই মাসটির নামকরণ। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, জুমাদা হলো শীতকাল, যা বসন্তের পূর্ববর্তী।

ইবাদতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়

ইসলামি শিক্ষায় জমাদিউস সানি বিশেষ আমলের মাস হিসেবে গুরুত্ব পায়। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল নামাজ—তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউওয়াবিন—এই মাসে আলাদা তাৎপর্য বহন করে।

নফল রোজা, কাজা রোজা পূরণ, মান্নতের রোজা আদায়, মাসের ১, ১০, ২৯, ৩০ তারিখে রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের ‘আইয়ামে বিয’ রোজা পালন অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

রজব মাসের প্রস্তুতির মাস হিসেবেও জমাদিউস সানিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন আলেমরা।

একটি প্রসিদ্ধ বাণী—
“যিনি রাতের মূল্য দেন, তাঁর কাছে প্রতিটি রাতই শবে কদর।”
অর্থাৎ নেক আমলই সাধারণ সময়কে বিশেষ প্রয়োজনীয়তায় রূপ দেয়।

দোয়া, জিকির ও দান–খয়রাতের বরকত

জিকির–আসকার, দোয়া, তাসবিহ–তাহলিল, দরুদ–সালাম, খতম তিলাওয়াত ও সদকা–খয়রাত—এই মাসে অতিরিক্ত আমল বান্দাকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে।

হাদিসে এসেছে—
“জান্নাতিরা কেবল সেই সময়ের জন্য আফসোস করবে, যে সময় তারা নেক আমল ছাড়া কাটিয়েছে।” (তিরমিজি)

ফজিলতহীন মাসেও বেশি আমল—অতিরিক্ত সওয়াব

যেসব মাসের বিশেষ ফজিলত হাদিস–কোরআনে নেই—তাতেও বেশি ইবাদত করলে মুমিন অন্যদের চেয়ে অগ্রসর হয়। জমাদিউস সানি সেই ইবাদতের সুযোগময় সময়।

ঋতুর পরিবর্তন ও মুমিনের দায়িত্ব

আল্লাহ তাআলা সুরা কুরাইশে বলেন—
“শীত–গ্রীষ্মের ভ্রমণে তাদের আসক্তির কারণেই তারা এই কাবার প্রভুর ইবাদত করুক—যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং ভয় থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।” (১০৬:১–৪)

অর্থাৎ পরিবেশ বা মৌসুম যাই হোক, ইবাদতই মুমিনের প্রধান দায়িত্ব।

উপসংহার

জমাদিউস সানি আমল, তাওবা, দোয়া, নফল রোজা ও নফল নামাজ বাড়ানোর একটি উত্তম সময়। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে এ মাসের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করেন।

লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী — ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট; সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট; প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

জমাদিউস সানি মাসের ফজিলত ও ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব

Update Time : 10:53:49 am, Wednesday, 19 November 2025

ইসলাম ধর্ম ডেস্ক, ঢাকা | ১৯ নভেম্বর ২০২৫ — আরবি হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস জমাদিউস সানি। এর আগের মাস জমাদিউল আউয়ালকে বলা হয় প্রথম জুমাদা, আর জমাদিউস সানি হলো দ্বিতীয় জুমাদা। আরবিতে এই দুই মাস ছিল শীতের প্রতীক। তাই ভারতীয় উপমহাদেশে মাস দুটি বেশি পরিচিত—‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে।

‘জুমাদা’ শব্দের অর্থ—স্থির, শুষ্ক, জমাটবদ্ধ, নিথর, নীরবতা, নির্ভরযোগ্যতা ও শীতলতা। তীব্র শীতে পানি জমে বরফ হয়, প্রাণ–প্রকৃতি নিথর হয়ে পড়ে—এই বাস্তবতা থেকেই মাসটির নামকরণ। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, জুমাদা হলো শীতকাল, যা বসন্তের পূর্ববর্তী।

ইবাদতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়

ইসলামি শিক্ষায় জমাদিউস সানি বিশেষ আমলের মাস হিসেবে গুরুত্ব পায়। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল নামাজ—তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, জাওয়াল ও আউওয়াবিন—এই মাসে আলাদা তাৎপর্য বহন করে।

নফল রোজা, কাজা রোজা পূরণ, মান্নতের রোজা আদায়, মাসের ১, ১০, ২৯, ৩০ তারিখে রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের ‘আইয়ামে বিয’ রোজা পালন অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

রজব মাসের প্রস্তুতির মাস হিসেবেও জমাদিউস সানিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন আলেমরা।

একটি প্রসিদ্ধ বাণী—
“যিনি রাতের মূল্য দেন, তাঁর কাছে প্রতিটি রাতই শবে কদর।”
অর্থাৎ নেক আমলই সাধারণ সময়কে বিশেষ প্রয়োজনীয়তায় রূপ দেয়।

দোয়া, জিকির ও দান–খয়রাতের বরকত

জিকির–আসকার, দোয়া, তাসবিহ–তাহলিল, দরুদ–সালাম, খতম তিলাওয়াত ও সদকা–খয়রাত—এই মাসে অতিরিক্ত আমল বান্দাকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে।

হাদিসে এসেছে—
“জান্নাতিরা কেবল সেই সময়ের জন্য আফসোস করবে, যে সময় তারা নেক আমল ছাড়া কাটিয়েছে।” (তিরমিজি)

ফজিলতহীন মাসেও বেশি আমল—অতিরিক্ত সওয়াব

যেসব মাসের বিশেষ ফজিলত হাদিস–কোরআনে নেই—তাতেও বেশি ইবাদত করলে মুমিন অন্যদের চেয়ে অগ্রসর হয়। জমাদিউস সানি সেই ইবাদতের সুযোগময় সময়।

ঋতুর পরিবর্তন ও মুমিনের দায়িত্ব

আল্লাহ তাআলা সুরা কুরাইশে বলেন—
“শীত–গ্রীষ্মের ভ্রমণে তাদের আসক্তির কারণেই তারা এই কাবার প্রভুর ইবাদত করুক—যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং ভয় থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।” (১০৬:১–৪)

অর্থাৎ পরিবেশ বা মৌসুম যাই হোক, ইবাদতই মুমিনের প্রধান দায়িত্ব।

উপসংহার

জমাদিউস সানি আমল, তাওবা, দোয়া, নফল রোজা ও নফল নামাজ বাড়ানোর একটি উত্তম সময়। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে এ মাসের ফজিলত অর্জনের তাওফিক দান করেন।

লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী — ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট; সাবেক ইমাম ও খতিব, কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট; প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম।