12:45 pm, Sunday, 23 November 2025

মুক্তিযুদ্ধের উপ–সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল এম এ রবের মৃত্যুবার্ষিকীতে সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশনের শ্রদ্ধা

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:16:25 am, Wednesday, 19 November 2025
  • 30 Time View

মুক্তিযুদ্ধের উপ–সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল এম এ রব

সালেহ আহমদ (স’লিপক), ঢাকা | ১৯ নভেম্বর ২০২৫ — মুক্তিযুদ্ধের উপ–সর্বাধিনায়ক, বীর উত্তম মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুর রবের (এম এ রব) মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৪ নভেম্বর। এ উপলক্ষে সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশন পরিবার এই মহান বীরের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

শৈশব ও শিক্ষা জীবন

১৯১৯ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এম এ রব। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। হবিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএসসি ও বিএসসি এবং পরবর্তী সময়ে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৪২ সালে।

সেনাবাহিনী জীবন

১৯৪৩ সালে তিনি ব্রিটিশ–ভারত সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কমিশন পাওয়ার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মার আরাকান সীমান্তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে ইন্দোনেশিয়ায় দখলদার বাহিনীতে দায়িত্ব পালন এবং পরে লাহোরে অবরুদ্ধ ৮৫ হাজার অমুসলিম শরণার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কৃতিত্বও তার।
দীর্ঘ চাকরি শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে থেকে ১৯৭০ সালে অবসর নেন।

রাজনৈতিক জীবন

অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালেও তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা

২৫ মার্চের পর সিলেট অঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেন এম এ রব।
৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে ঐতিহাসিক বৈঠকে কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মুক্তিযুদ্ধের সহ সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত হন।

মুজিবনগর সরকার গঠনের পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুদ্ধের শেষ দিকে জেনারেল ওসমানীর হেলিকপ্টারে হামলার সময় তিনি গুরুতর আহত হলেও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত হননি—যার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে “বীর উত্তম” খেতাব দেওয়া হয়।

সম্মাননা ও অবদান

স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং এর কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করেন।

মৃত্যু

১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন জেনারেল এম এ জি ওসমানী তাঁর মরদেহ হবিগঞ্জে নিয়ে যান এবং উমেদনগর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশন তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

মুক্তিযুদ্ধের উপ–সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল এম এ রবের মৃত্যুবার্ষিকীতে সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশনের শ্রদ্ধা

Update Time : 10:16:25 am, Wednesday, 19 November 2025

সালেহ আহমদ (স’লিপক), ঢাকা | ১৯ নভেম্বর ২০২৫ — মুক্তিযুদ্ধের উপ–সর্বাধিনায়ক, বীর উত্তম মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুর রবের (এম এ রব) মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৪ নভেম্বর। এ উপলক্ষে সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশন পরিবার এই মহান বীরের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

শৈশব ও শিক্ষা জীবন

১৯১৯ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এম এ রব। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। হবিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএসসি ও বিএসসি এবং পরবর্তী সময়ে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোলে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৪২ সালে।

সেনাবাহিনী জীবন

১৯৪৩ সালে তিনি ব্রিটিশ–ভারত সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কমিশন পাওয়ার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মার আরাকান সীমান্তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে ইন্দোনেশিয়ায় দখলদার বাহিনীতে দায়িত্ব পালন এবং পরে লাহোরে অবরুদ্ধ ৮৫ হাজার অমুসলিম শরণার্থীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কৃতিত্বও তার।
দীর্ঘ চাকরি শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে থেকে ১৯৭০ সালে অবসর নেন।

রাজনৈতিক জীবন

অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালেও তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা

২৫ মার্চের পর সিলেট অঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দেন এম এ রব।
৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা-বাগানে ঐতিহাসিক বৈঠকে কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মুক্তিযুদ্ধের সহ সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত হন।

মুজিবনগর সরকার গঠনের পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুদ্ধের শেষ দিকে জেনারেল ওসমানীর হেলিকপ্টারে হামলার সময় তিনি গুরুতর আহত হলেও দায়িত্ব পালন থেকে বিরত হননি—যার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে “বীর উত্তম” খেতাব দেওয়া হয়।

সম্মাননা ও অবদান

স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং এর কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করেন।

মৃত্যু

১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর, শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরদিন জেনারেল এম এ জি ওসমানী তাঁর মরদেহ হবিগঞ্জে নিয়ে যান এবং উমেদনগর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশন তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছে।