অর্থনীতি ডেস্ক: বাংলাদেশের তিন শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান—মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রোফুড ইন্ডাস্ট্রিজ—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিন আমদানিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে দুই দেশের কৃষি–বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস এবং US Soybean Export Council (USSEC)-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
▶ মেঘনা গ্রুপের নেতৃত্বে বিশাল আমদানি
চুক্তির আওতায় মেঘনা গ্রুপ একাই আনবে প্রায় ১০ লাখ টন সয়াবিন বীজ, যা পুরো চুক্তির প্রায় অর্ধেক।
বাকি অংশ ভাগাভাগি করে আনবে সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রোফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।
এই সয়াবিন আমদানি বাংলাদেশের খাদ্যতেল, প্রাণিখাদ্য ও শিল্প কাঁচামাল সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
▶ যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যে নতুন অধ্যায়
মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন কৃষিপণ্যের অন্যতম দ্রুত-বর্ধনশীল বাজারে পরিণত হয়েছে।”
USSEC জানায়, এই চুক্তি বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও শিল্প উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর সয়াবিনের চাহিদা ৮–১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। স্থানীয় উৎপাদন সীমিত হওয়ায় দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই আমদানিনির্ভর। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সরবরাহঝুঁকি কমাবে বলে মনে করছেন শিল্পবিশ্লেষকরা।
▶ ভারতের বাজারে বড় ধাক্কা
ভারতের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো এই চুক্তিকে ভারতের সয়াবিন রপ্তানি খাতে বড় আঘাত হিসেবে দেখছে।
Soybean Processors Association of India (SOPA)-এর নির্বাহী পরিচালক ডি. এন. পাঠক বলেন,
“বাংলাদেশ এখন স্বল্পমূল্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন নিচ্ছে। এতে ভারতের রপ্তানি বাজার দ্রুত কমে যাচ্ছে।”
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল ভারতের অন্যতম প্রধান সয়ামিল ও সয়াবিন আমদানিকারক দেশ। নতুন এই চুক্তি কার্যকর হলে ভারতের রপ্তানি আয় কয়েকশো কোটি রুপি পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
▶ গ্লোবাল সোর্সিংয়ে নতুন দিক
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তি শুধু বাণিজ্য নয়, বরং বাংলাদেশের গ্লোবাল সোর্সিং ডাইভার্সিফিকেশনের সুস্পষ্ট উদাহরণ।
দেশটি এখন ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও ইউক্রেনের মতো বিকল্প উৎসে ঝুঁকছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন,
“এটি বাংলাদেশের আমদানি ঝুঁকি কমাবে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং ডলার ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।”
▶ শিল্প ও কূটনীতিতে নতুন মাইলফলক
এই ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন চুক্তিকে শুধু শিল্পখাত নয়, বরং বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কৃষি-ভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্পাদনায়: এস এম মেহেদী হাসান, মোবাইল: ০১৭১১–৯৩৪৩৫৮
এস এম মেহেদী হাসান 


























