সূরা আল-আসর: সময়, ঈমান ও ধৈর্যের শিক্ষা যা জীবনের ক্ষতি রোধ করে?
এই সূরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সময়ই হলো মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, এবং এটি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারলে আমরা ক্ষতির মধ্যে পড়ি। চলুন, সূরা আল-আসর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। সূরা আল-আসর পরিচিতি • সূরা নাম: আল-আসর (العصر) • সূরা নম্বর: ১০৩ • আয়াত সংখ্যা: ৩ • নাজিলের স্থান: মক্কা ছোট্ট হলেও এই সূরায় লুকিয়ে আছে জ্ঞানের মহাসমুদ্র। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেছেন—“মানুষ যদি শুধু এই সূরাটিই ভালোভাবে বুঝত, তবে তার জন্য এটিই যথেষ্ট হতো।” সূরা আল-আসর (আরবি ও বাংলা অনুবাদ) بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ পরম করুণাময়, অতি দয়ালু আল্লাহর নামে وَالْعَصْرِ শপথ সময়ের। إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ তবে তারা নয়—যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে, একে অপরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। সূরার মূল বার্তা সূরা আল-আসর আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরে—সময় নষ্ট হলে ক্ষতি অনিবার্য। একজন ব্যবসায়ী ধরুন, সে তার সমস্ত ধন জমিয়েছে, কিন্তু প্রতিদিনই কিছু না কিছু হারাচ্ছে। জীবনের সময়ও ঠিক তেমন—দিন, মাস, বছর একে একে চলে যাচ্ছে। এই সূরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সময়কে কাজে লাগাতে হবে ঈমান, সৎকাজ, সত্য এবং ধৈর্যের জন্য। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “দুইটি নিয়ামতের ব্যাপারে অনেক মানুষ ধোঁকার মধ্যে থাকে—একটি হলো সুস্থতা, আরেকটি হলো অবসর সময়।” (বুখারি) আরেক হাদিসে এসেছে: “পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে কাজে লাগাও: বার্ধক্যের আগে যৌবন, অসুস্থতার আগে সুস্থতা, দারিদ্র্যের আগে সম্পদ, ব্যস্ততার আগে অবসর, মৃত্যু আসার আগে জীবন।” (হাকিম) এই হাদিসগুলি সূরা আল-আসরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সূরা আল-আসর থেকে চারটি শিক্ষা ১. ঈমান – অন্তরের বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা। ২. সৎকাজ – নামাজ, রোজা, দান-সদকা এবং মানুষের উপকার। ৩. সত্যের উপদেশ – ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকা। ৪. ধৈর্যের উপদেশ – বিপদে ও পরীক্ষায় স্থিরতা রাখা। আধুনিক জীবনে প্রয়োগ আজকের যুগে সময় নষ্ট করার অসংখ্য উপায় রয়েছে—সোশ্যাল মিডিয়া, গসিপ, উদ্দেশ্যহীন বিনোদন। অথচ সময়ই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। একটি সুন্দর সমাজ গড়তে হলে দরকার ঈমান, নেক আমল, সত্য প্রতিষ্ঠা এবং ধৈর্য। যেমন, একজন শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের সত্য ও ধৈর্য শেখান না, অথবা একজন ব্যবসায়ী যদি কেবল অর্থে ব্যস্ত থাকেন কিন্তু হালাল-হারাম বিবেচনা না করেন, তাহলে তাদের জীবন ও সমাজের ফলাফল অসম্পূর্ণ থাকবে। সাহাবাদের দৃষ্টিকোণ সাহাবারা একে অপরকে সময়ের মূল্য মনে করাতে সূরা আল-আসর পাঠ করতেন। আমরা যদি এই শিক্ষা বন্ধু, পরিবার ও সহকর্মীদের সঙ্গে ভাগ করি, তবে সেটিই হবে প্রকৃত সত্যের উপদেশ। চিরন্তন আহ্বান এই সূরা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন ক্ষণস্থায়ী, সময় অমূল্য। সম্পদ, পদ-মর্যাদা, খ্যাতি—কিছুই মুক্তি দিতে পারবে না। শুধু ঈমান, সৎকাজ, সত্য এবং ধৈর্যই মানুষকে প্রকৃত সাফল্যের পথে নিয়ে যায়।
Reporter Name 




























