1:12 pm, Sunday, 23 November 2025

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের চেম্বারে অভিযান, তিন মাসের কারাদণ্ড

  • Reporter Name
  • Update Time : 05:59:57 pm, Tuesday, 26 August 2025
  • 55 Time View

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের চেম্বারে অভিযান, তিন মাসের কারাদণ্ড

কালীগঞ্জ উপজেলায় ভুয়া চিকিৎসা সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অপচিকিৎসা ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির দায়ে হাসিবুর রহমান (৩১) নামে এক ব্যক্তিকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

লালমনিরহাট | ২৬ আগষ্ট ২০২৫ —  মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অংশ নেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

হাসিবুর রহমান উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সামছুল হকের ছেলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজেকে ডিগ্রিধারী চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে চেম্বার পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু ভুয়া চিকিৎসার কারণে বহু রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তাদের চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে না।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

অভিযান ও ওষুধ জব্দ

অভিযানের সময় হাসিবুর রহমান তার চিকিৎসা ডিগ্রির কোনো বৈধ সনদ বা কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। পাশাপাশি তার চেম্বার থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করা হয়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, এসব ওষুধ অনেকক্ষেত্রে মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ চিকিৎসা ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির দায়ে তাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

ইউএনও’র বক্তব্য

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন,

“জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রতারণা করা এবং ভুয়া চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসক কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না। জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে এমন অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে।”

গ্রামবাসীর প্রতিক্রিয়া

গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছিলেন যে হাসিবুর রহমান চিকিৎসক সেজে চেম্বার চালাচ্ছেন। অসচেতন রোগীরা তার ভুয়া চিকিৎসার কারণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। স্থানীয়রা প্রশাসনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে নিয়মিত নজরদারি চালানো হোক।

গ্রামবাসী জানান,

“আমরা অনেকদিন ধরে দেখছিলাম, কেউ তাকে শাস্তি পাচ্ছে না। আজ প্রশাসনের অভিযান দেখে আমরা安心 বোধ করছি। আশা করি ভবিষ্যতেও আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।”

ভুয়া চিকিৎসকের ভয়াবহ প্রভাব

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, ভুয়া চিকিৎসকরা শুধু অর্থ আত্মসাৎ করে না, বরং রোগীদের গুরুতর শারীরিক ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেন। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং দারিদ্র্যসীমার মানুষরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তাদের মতে, ভুয়া চিকিৎসকের কর্মকাণ্ড রুখতে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন যে, বৈধ সনদবিহীন চিকিৎসকের কাছে কোনোভাবেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত নয়।

ভবিষ্যতের পদক্ষেপ

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে এবং ভুয়া চিকিৎসক ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের অভিযান শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ।

এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, সচেতন জনগণ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ উদ্যোগ ছাড়া গ্রামীণ অঞ্চলে ভুয়া চিকিৎসা ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির মতো অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক: কল্লোল আহমেদ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের চেম্বারে অভিযান, তিন মাসের কারাদণ্ড

Update Time : 05:59:57 pm, Tuesday, 26 August 2025

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে ভুয়া চিকিৎসকের চেম্বারে অভিযান, তিন মাসের কারাদণ্ড

কালীগঞ্জ উপজেলায় ভুয়া চিকিৎসা সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অপচিকিৎসা ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির দায়ে হাসিবুর রহমান (৩১) নামে এক ব্যক্তিকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

লালমনিরহাট | ২৬ আগষ্ট ২০২৫ —  মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অংশ নেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

হাসিবুর রহমান উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সামছুল হকের ছেলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজেকে ডিগ্রিধারী চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে চেম্বার পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু ভুয়া চিকিৎসার কারণে বহু রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং তাদের চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে না।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

অভিযান ও ওষুধ জব্দ

অভিযানের সময় হাসিবুর রহমান তার চিকিৎসা ডিগ্রির কোনো বৈধ সনদ বা কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। পাশাপাশি তার চেম্বার থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করা হয়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, এসব ওষুধ অনেকক্ষেত্রে মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ চিকিৎসা ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির দায়ে তাকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

ইউএনও’র বক্তব্য

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন,

“জনগণের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রতারণা করা এবং ভুয়া চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার ফলে সাধারণ মানুষ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসক কোনোভাবেই ছাড় পাবেন না। জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে এমন অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে।”

গ্রামবাসীর প্রতিক্রিয়া

গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছিলেন যে হাসিবুর রহমান চিকিৎসক সেজে চেম্বার চালাচ্ছেন। অসচেতন রোগীরা তার ভুয়া চিকিৎসার কারণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছেন। স্থানীয়রা প্রশাসনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে নিয়মিত নজরদারি চালানো হোক।

গ্রামবাসী জানান,

“আমরা অনেকদিন ধরে দেখছিলাম, কেউ তাকে শাস্তি পাচ্ছে না। আজ প্রশাসনের অভিযান দেখে আমরা安心 বোধ করছি। আশা করি ভবিষ্যতেও আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।”

ভুয়া চিকিৎসকের ভয়াবহ প্রভাব

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, ভুয়া চিকিৎসকরা শুধু অর্থ আত্মসাৎ করে না, বরং রোগীদের গুরুতর শারীরিক ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেন। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং দারিদ্র্যসীমার মানুষরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তাদের মতে, ভুয়া চিকিৎসকের কর্মকাণ্ড রুখতে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন যে, বৈধ সনদবিহীন চিকিৎসকের কাছে কোনোভাবেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত নয়।

ভবিষ্যতের পদক্ষেপ

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে এবং ভুয়া চিকিৎসক ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের অভিযান শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার অংশ।

এ ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, সচেতন জনগণ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ উদ্যোগ ছাড়া গ্রামীণ অঞ্চলে ভুয়া চিকিৎসা ও নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রির মতো অনিয়ম বন্ধ করা সম্ভব নয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক: কল্লোল আহমেদ