সূরা আত-তীন-এর শিক্ষা: শ্রেষ্ঠত্ব থেকে অধঃপতনের গল্প
তুর পাহাড়, সিনাই উপত্যকা ও পবিত্র নগরী মক্কা—এই তিনটি পবিত্র স্থানকে সাক্ষী রেখে আল্লাহ যখন কুরআনে কসম করেন, তখন সে বার্তায় বিশেষ তাৎপর্য লুকিয়ে থাকে। সূরা আত-তীন সেই সুমহান বার্তাই বহন করে, যেখানে বলা হয়েছে—মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শ্রেষ্ঠতর রূপে; কিন্তু সে যখন নীতিহীনতায় ডুবে যায়, তখন সে পশুর চেয়েও অধম হয়ে পড়ে।
মোট ৮ আয়াতের এই সূরাটি ছোট হলেও এতে নিহিত রয়েছে মানবজাতির মর্যাদা, দায়িত্ববোধ ও বিচারের দিনের হুঁশিয়ারি।
সূরা আত-তীন (সূরা নং ৯৫)
আবির্ভাবকাল: মক্কা
আয়াত সংখ্যা: ৮
পারাঃ ৩০তম পারা (আম্মা পারা)
আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও শুদ্ধ অনুবাদ
| আয়াত | আরবি | উচ্চারণ | বাংলা অনুবাদ |
|---|---|---|---|
| ১ | وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ | ওয়াত্তীনি ওয়ায্যাইতূন | শপথ ত্বীন (ডুমুর) এবং যায়তূনের। |
| ২ | وَطُورِ سِينِينَ | ওয়াতূরি সীনীন | এবং সিনাই পর্বতের। |
| ৩ | وَهَذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ | ওয়া হাযাল বালাদিল আমীন | এবং এই নিরাপদ নগরী (মক্কা)-র। |
| ৪ | لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ | লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফী আহসানি তাকওয়ীম | নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম কাঠামোতে। |
| ৫ | ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ | সুম্মা রাদাদনাহু আসফালা সাফিলীন | অতঃপর আমরা তাকে নিচে নামিয়ে দিলাম—সকল নিচের চেয়েও নিচে। |
| ৬ | إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ | ইল্লাল্লাযীনা আমানু ওয়া ‘আমিলুস্ সালিহাতি ফালাহুম আজরুন গাইরু মামনূন | তবে তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে—তাদের জন্য রয়েছে অশেষ পুরস্কার। |
| ৭ | فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِالدِّينِ | ফামা ইউকায্যিবুকা বা‘দু বিদ্দীন | অতঃপর কিসে তোমাকে বিচার দিবসকে অস্বীকার করতে বলছে? |
| ৮ | أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ | আলাইসাল্লাহু বিআহকামিল হাকিমীন | আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? |
সানে নুজুল ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
সূরা আত-তীন মক্কী সূরা, অবতীর্ণ হয় ইসলাম প্রচারের শুরুর দিকে। রাসূল (সা.)-এর নবুয়তের শুরুতে যখন মানুষ তাঁর আহ্বানে সাড়া দিতে দ্বিধায় ছিল, তখন আল্লাহ এই সূরার মাধ্যমে জানিয়ে দেন—মানবজাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন সম্মানের সাথে, কিন্তু তারা যদি সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তবে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তাফসিরের মূল বার্তা
🔹 শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা:
মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন “আহসানি তাকওয়ীম” অর্থাৎ সবচেয়ে সুন্দর অবয়ব ও কাঠামোয়। এর মানে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং জ্ঞান, বিবেক ও নৈতিকতা।
🔹 অবনমনের সতর্কতা:
যদি মানুষ ঈমান ও সৎকর্মের পথ না ধরে, তবে সে পশুর চেয়েও নিচে নেমে যায়। এটা দুনিয়ার জীবনে যেমন সত্য, তেমনি আখিরাতে ভয়াবহ পরিণতির নির্দেশ।
🔹 বিচার দিবসের গুরুত্ব:
সূরার শেষ আয়াতগুলো বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের প্রশ্ন তোলে: “আল্লাহ কি শ্রেষ্ঠ বিচারক নন?” এটি প্রতিটি মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান।
আমল ও আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা
-
এই সূরাটি সংক্ষিপ্ত ও হৃদয়ছোঁয়া, তাই এটি শিশুদের কুরআন শিক্ষার জন্য উপযুক্ত।
-
ব্যক্তি যদি মানসিক অবক্ষয়ে ভোগে বা আত্মবিশ্বাস হারায়, তবে এই সূরার আয়াত তাকে তার মর্যাদা স্মরণ করিয়ে দেয়।
-
কবর যিয়ারতের সময় ও বিভিন্ন নফল নামাজে এই সূরা পাঠের ফজিলতের কথা হাদীসে পাওয়া যায়।
উপসংহার
সূরা আত-তীন একদিকে যেমন শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিশ্রুতি দেয়, তেমনি অন্যদিকে সতর্ক করে অবমূল্যায়নের পরিণতির ব্যাপারে।
মানুষকে তার প্রকৃত আসনে রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে এ সূরায়—জ্ঞান, বিশ্বাস ও ন্যায়ের পথেই রয়েছে তার সম্মান ও মুক্তি।
Reporter Name 

























