1:37 pm, Sunday, 23 November 2025

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ছত্রচ্ছায়ায় এখনো বেপরোয়া খুনিরা: সংবাদ সম্মেলনে রুমা আক্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ছত্রচ্ছায়ায় এখনো বেপরোয়া খুনিরা: সংবাদ সম্মেলনে রুমা আক্তার

ঢাকা | ০৪ আগস্ট ২০২৫  “আমার মা, ভাই ও বোনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপানো হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। খুনিরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরছে, আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আর এই সবকিছুর মদদদাতা—প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কুমিল্লা মুরাদনগরের কড়ইবাড়ী গ্রামের তিনজন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত রুমা আক্তার।

তিনি অভিযোগ করেন, ৩ জুলাই সকালে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা তার মা, ভাই ও বোনকে কুপিয়ে হত্যা করে। তাকেও মারাত্মকভাবে কোপানো হয়, যার ফলে মাথায় ৭২টি সেলাই করতে হয়।

প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকতা ও পুলিশের পক্ষপাতিত্ব

রুমা আক্তার দাবি করেন, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন।

তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পর মামলা করলেও পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধান অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে মামলা রুজু করে। এমনকি হত্যার দিন ৯৯৯-এ ফোন করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। পুলিশের উপস্থিতিতেই হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করা হয়।”

রুমার অভিযোগ, “বর্তমানে খুনিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং আমাদের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ঘটনার পর থেকে পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে আছি।”

হত্যার নেপথ্যে রাজনৈতিক ঈর্ষা

রুমা আক্তার জানান, তার মা স্থানীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয় ছিলেন এবং দুইবার ইউপি নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিএনপি-সমর্থিত হওয়ায় তাকে নির্বাচনে জিততে দেওয়া হয়নি, বরং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “মায়ের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পরিকল্পিত বৈঠকে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। হত্যার আগের দিন মোবাইল চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি করা হয়। এরপর ৩ জুলাই সকালে ২০-২৫ জন মিলে হামলা চালায়।”

মামলার গড়মিল ও প্রধান দাবি

রুমা অভিযোগ করেন, “মামলায় বাদী করা হয় আমার বোন রিক্তা আক্তারকে, যিনি তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ফলে মামলায় অনেক অপরাধীর নাম বাদ পড়ে। পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে আসামির তালিকা পরিবর্তন করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন:

  1. বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে

  2. শিমুল চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে হবে

  3. মামলার আসামিদের পুনর্বিন্যাস করে প্রকৃত খুনিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

  4. একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে

  5. পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

তিনি আরও বলেন, “এই সংবাদ সম্মেলনের পর যদি আমাদের পরিবারের কারো ওপর হামলা হয়, তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তার পরিবার। আমরা শুধু বাঁচতে চাই, আর কিছু না।”

—  এস এম মেহেদী হাসান/ সালেহ/ তাবাসসুম

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ছত্রচ্ছায়ায় এখনো বেপরোয়া খুনিরা: সংবাদ সম্মেলনে রুমা আক্তার

Update Time : 09:27:33 pm, Monday, 4 August 2025

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবার ছত্রচ্ছায়ায় এখনো বেপরোয়া খুনিরা: সংবাদ সম্মেলনে রুমা আক্তার

ঢাকা | ০৪ আগস্ট ২০২৫  “আমার মা, ভাই ও বোনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপানো হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। কিন্তু বিচার পাচ্ছি না। খুনিরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরছে, আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আর এই সবকিছুর মদদদাতা—প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কুমিল্লা মুরাদনগরের কড়ইবাড়ী গ্রামের তিনজন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত রুমা আক্তার।

তিনি অভিযোগ করেন, ৩ জুলাই সকালে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা তার মা, ভাই ও বোনকে কুপিয়ে হত্যা করে। তাকেও মারাত্মকভাবে কোপানো হয়, যার ফলে মাথায় ৭২টি সেলাই করতে হয়।

প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকতা ও পুলিশের পক্ষপাতিত্ব

রুমা আক্তার দাবি করেন, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন।

তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পর মামলা করলেও পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধান অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে মামলা রুজু করে। এমনকি হত্যার দিন ৯৯৯-এ ফোন করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি। পুলিশের উপস্থিতিতেই হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করা হয়।”

রুমার অভিযোগ, “বর্তমানে খুনিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে এবং আমাদের পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ঘটনার পর থেকে পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে আছি।”

হত্যার নেপথ্যে রাজনৈতিক ঈর্ষা

রুমা আক্তার জানান, তার মা স্থানীয় রাজনীতিতে জনপ্রিয় ছিলেন এবং দুইবার ইউপি নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিএনপি-সমর্থিত হওয়ায় তাকে নির্বাচনে জিততে দেওয়া হয়নি, বরং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “মায়ের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পরিকল্পিত বৈঠকে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। হত্যার আগের দিন মোবাইল চুরির একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি করা হয়। এরপর ৩ জুলাই সকালে ২০-২৫ জন মিলে হামলা চালায়।”

মামলার গড়মিল ও প্রধান দাবি

রুমা অভিযোগ করেন, “মামলায় বাদী করা হয় আমার বোন রিক্তা আক্তারকে, যিনি তখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। ফলে মামলায় অনেক অপরাধীর নাম বাদ পড়ে। পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে আসামির তালিকা পরিবর্তন করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে তিনি পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন:

  1. বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে

  2. শিমুল চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার করতে হবে

  3. মামলার আসামিদের পুনর্বিন্যাস করে প্রকৃত খুনিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

  4. একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে

  5. পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

তিনি আরও বলেন, “এই সংবাদ সম্মেলনের পর যদি আমাদের পরিবারের কারো ওপর হামলা হয়, তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তার পরিবার। আমরা শুধু বাঁচতে চাই, আর কিছু না।”

—  এস এম মেহেদী হাসান/ সালেহ/ তাবাসসুম