1:47 pm, Sunday, 23 November 2025

টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউসবোটে বিদেশি মদের রমরমা ব্যবসা

  • Reporter Name
  • Update Time : 08:01:07 pm, Friday, 1 August 2025
  • 56 Time View

টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউসবোটে বিদেশি মদের রমরমা ব্যবসা | শিশুদের ব্যবহার করে চলছে অবৈধ বেচাকেনা, বিপাকে পর্যটন শিল্প

সুনামগঞ্জ |০১ আগষ্ট ২০২৫ — সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গুয়ার হাওর, জাদুকাটা নদী, নিলাদ্রী লেক, বারেকটিলা ও শিমুল বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু এই অনিন্দ্যসুন্দর পর্যটন এলাকার ছায়ার নিচেই গড়ে উঠেছে একটি অবৈধ ব্যবসা—হাউসবোটে ফেরি করে বিদেশি মদ বিক্রি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিশুদের ব্যবহার করে পর্যটকদের কাছে বিদেশি মদ বিক্রি করছে। ফলে পর্যটকদের পাশাপাশি হাউসবোট চালকরাও পড়েছেন মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

হাউসবোটেই ‘লাল পানির’ হাতছানি

পর্যটকবাহী হাউসবোটগুলো যখন টাঙ্গুয়ার হাওর পেরিয়ে বারেকটিলা বা শিমুল বাগান পাড়ে ভিড়ে, তখনই ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী কিছু ছেলে নৌকা বা পাড় থেকে হাউসবোটে উঠে বলে—“মাল লাগবে? সব ব্র্যান্ড পাওয়া যাবে।”

হাউসবোট ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন শাওন বলেন,

“শুক্রবার দুপুরে জাদুকাটা নদীর পাড়ে আমাদের হাউসবোট ভিড়তেই কয়েকজন শিশু বোতল হাতে হাউসবোটে উঠে মদ বিক্রির প্রস্তাব দেয়। আমি ছবি তুলতে গেলে তারা পালিয়ে যায়।”

একই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন “তরঙ্গ বিলাশ” হাউসবোটচালক জানে আলম।

“আমরা অনেক সময় মদ নিতে অনিচ্ছুক হলেও পর্যটকদের সামনে এ ধরনের প্রস্তাব আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। এতে আমাদের সুনামও ক্ষুণ্ন হয়।”

পর্যটন সেবার নামে হুমকি

তাহিরপুর নৌ-পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রব্বানী জানান,

“পর্যটকদের কাছে হাউসবোটকর্মীরা যদি মদ না দেয়, তখন স্থানীয় চক্রগুলো এই সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করে। এখন তারা শিশুদের ব্যবহার করছে, যা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, মদ সেবন ও বেচাকেনার এই পরিস্থিতি শুধু আইন-শৃঙ্খলা নয়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে একটি বড় হুমকি।

প্রশাসনের অবস্থান

তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন বলে জানান।

“পর্যটন এলাকার পরিবেশ রক্ষায় আমরা জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছি। শিশুদের দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা অত্যন্ত ভয়ংকর প্রবণতা। এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সমাধানের পথ?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধু অবকাঠামো নয়, প্রয়োজন আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি। টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো স্থানে শিশুদের দিয়ে মদ বিক্রি চলতে থাকলে তা শুধু পর্যটনের ভাবমূর্তি নয়, সমাজকেও গভীর সংকটে ফেলবে।



Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউসবোটে বিদেশি মদের রমরমা ব্যবসা

Update Time : 08:01:07 pm, Friday, 1 August 2025

টাঙ্গুয়ার হাওরের হাউসবোটে বিদেশি মদের রমরমা ব্যবসা | শিশুদের ব্যবহার করে চলছে অবৈধ বেচাকেনা, বিপাকে পর্যটন শিল্প

সুনামগঞ্জ |০১ আগষ্ট ২০২৫ — সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গুয়ার হাওর, জাদুকাটা নদী, নিলাদ্রী লেক, বারেকটিলা ও শিমুল বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু এই অনিন্দ্যসুন্দর পর্যটন এলাকার ছায়ার নিচেই গড়ে উঠেছে একটি অবৈধ ব্যবসা—হাউসবোটে ফেরি করে বিদেশি মদ বিক্রি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিশুদের ব্যবহার করে পর্যটকদের কাছে বিদেশি মদ বিক্রি করছে। ফলে পর্যটকদের পাশাপাশি হাউসবোট চালকরাও পড়েছেন মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

হাউসবোটেই ‘লাল পানির’ হাতছানি

পর্যটকবাহী হাউসবোটগুলো যখন টাঙ্গুয়ার হাওর পেরিয়ে বারেকটিলা বা শিমুল বাগান পাড়ে ভিড়ে, তখনই ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী কিছু ছেলে নৌকা বা পাড় থেকে হাউসবোটে উঠে বলে—“মাল লাগবে? সব ব্র্যান্ড পাওয়া যাবে।”

হাউসবোট ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন শাওন বলেন,

“শুক্রবার দুপুরে জাদুকাটা নদীর পাড়ে আমাদের হাউসবোট ভিড়তেই কয়েকজন শিশু বোতল হাতে হাউসবোটে উঠে মদ বিক্রির প্রস্তাব দেয়। আমি ছবি তুলতে গেলে তারা পালিয়ে যায়।”

একই অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন “তরঙ্গ বিলাশ” হাউসবোটচালক জানে আলম।

“আমরা অনেক সময় মদ নিতে অনিচ্ছুক হলেও পর্যটকদের সামনে এ ধরনের প্রস্তাব আমাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। এতে আমাদের সুনামও ক্ষুণ্ন হয়।”

পর্যটন সেবার নামে হুমকি

তাহিরপুর নৌ-পর্যটন শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ রব্বানী জানান,

“পর্যটকদের কাছে হাউসবোটকর্মীরা যদি মদ না দেয়, তখন স্থানীয় চক্রগুলো এই সুযোগ নিয়ে ব্যবসা করে। এখন তারা শিশুদের ব্যবহার করছে, যা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, মদ সেবন ও বেচাকেনার এই পরিস্থিতি শুধু আইন-শৃঙ্খলা নয়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে একটি বড় হুমকি।

প্রশাসনের অবস্থান

তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন বলে জানান।

“পর্যটন এলাকার পরিবেশ রক্ষায় আমরা জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছি। শিশুদের দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা অত্যন্ত ভয়ংকর প্রবণতা। এই বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সমাধানের পথ?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধু অবকাঠামো নয়, প্রয়োজন আইনের কার্যকর প্রয়োগ এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি। টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো স্থানে শিশুদের দিয়ে মদ বিক্রি চলতে থাকলে তা শুধু পর্যটনের ভাবমূর্তি নয়, সমাজকেও গভীর সংকটে ফেলবে।