1:49 pm, Sunday, 23 November 2025

মেয়র হলে নতুন ট্যাক্স আরোপের আশঙ্কায় | বিলিয়নায়ারদের জোহরান আতঙ্ক

মেয়র হলে নতুন ট্যাক্স আরোপের আশঙ্কায় | বিলিয়নায়ারদের জোহরান আতঙ্ক

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র | ২৯ জুলাই ২০২৫  — ২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক এবং রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষকদের অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন বিরোধী কট্টর নীতির সূচনাকালে যেমন আলোড়ন উঠেছিল, ঠিক তেমনি আলোড়ন তুলেছেন প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রান্ট ও প্রগ্রেসিভ রাজনৈতিক প্রার্থী জোহরান মামদানি। ধর্মগত পরিচয় নয়, তার পুঁজিবাদবিরোধী অবস্থান ও দরিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক নীতিই তাকে বিতর্কের কেন্দ্রে এনেছে।

বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ও সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাজিওও এ্যাফোর্ডেবল নিউইয়র্ক গড়ার পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু প্রাইমারিতে মনোনয়ন পাওয়া মাত্রই মামদানি ধনীদের ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপের ঘোষণা দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন।

👉 “নায়িকার বিয়ে করার ইচ্ছা ‘ভালো হুজুরকে’ — মিথ্যাবাদী ইমামদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সাংবাদিক!”

তিনি ঘোষণা দেন, যদি নির্বাচিত হন, এক মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা বাসিন্দারা অতিরিক্ত ২% ট্যাক্স দেবেন। অন্যদিকে, কম আয়ের মানুষদের জন্য বাড়তি আবাসন সুবিধা ও গণপরিবহনে ভর্তুকির আশ্বাস দেন। তার এই অবস্থানের ফলে সিএনএন, সিএনবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, ফক্স বিজনেসসহ বহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তার নীতির অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বিনিয়োগে আশঙ্কা, স্থানান্তরের চিন্তা

নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা বলছেন, জোহরান মামদানির সম্ভাব্য জয়ে ধনীরা বিনিয়োগে সতর্ক হয়ে উঠছেন। আবাসন ব্যবসায়ী জে বাতরা জানান, তার দুই বিলিয়নিয়ার ক্লায়েন্ট ম্যানহাটনে বাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এখন বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবছেন। ফেসবুক গ্রুপ ও বাজার গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও বলছে, অভিজাত এলাকাগুলোতে বসবাসরত ধনীদের অনেকে নিউইয়র্ক ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।

রিয়েলটর ডট কমের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৫.৬%। ২০২০ সালের তুলনায় তা বেড়েছে ১৮%। মামদানি যদি ভাড়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ছোট বিনিয়োগকারীরা—এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে।

ফক্স নিউজ জানায়, মামদানির মনোনয়নের পর ফ্লোরিডার হাউজিং ওয়েবসাইটগুলোতে নিউইয়র্ক থেকে ভিজিট ৫০% বেড়েছে। ড্যানিয়েল ডে লা ভেগা, ওয়ান সদেবিস ইন্টারন্যাশনাল রিয়েলটির প্রেসিডেন্ট বলেন, তার ধনী ক্লায়েন্টরা নিউইয়র্কের কর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

“ট্যাক্সোডাস” ও জোহরান আতঙ্ক

২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১.২৫ লাখ নিউইয়র্কবাসী প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারসহ ফ্লোরিডায় চলে গেছে। মামদানি জিতলে এই “ট্যাক্সোডাস” দ্বিতীয় ধাপে রূপ নিতে পারে বলে মনে করেন ড্যানিয়েল। সিএনবিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, মামদানির প্রগতিশীল ট্যাক্স নীতির ফলে বিলিয়নিয়ারদের স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ফিসক্যাল পলিসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক নাথান গাসডর্ফ বলেন, বাস্তবে নিউইয়র্ক অনেক বেশি নতুন মিলিয়নিয়ার তৈরি করে, যত না তারা অন্যত্র চলে যায়। তার মতে, অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও মিডিয়া কিছু ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করছে।

কমিউনিজম বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিভাজন

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জোহরানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি মনে করেন না যে সমাজে বিলিয়নিয়ারদের থাকা উচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে “শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল” বলে অভিহিত করেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতাদের একাংশও তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তাকে ঠেকানোর ডাক দিয়েছেন।

তবে আল জাজিরা ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের মতে, মামদানি কোনোভাবেই কমিউনিস্ট নন। তার নীতিমালায় গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাজার অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য খোঁজা হয়েছে।

শেষ কথা

বিলিয়নিয়াররা নিউইয়র্ক ছাড়বেন কি না, তা সময় বলবে। তবে জোহরান মামদানির প্রস্তাবিত সামাজিক নীতি ও বিতর্কিত ট্যাক্স পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে প্রবল আলোড়ন তুলেছে।

 

— হাকিকুল ইসলাম খোকন / তাবাসসুম/ এস এম মেহেদী

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

মেয়র হলে নতুন ট্যাক্স আরোপের আশঙ্কায় | বিলিয়নায়ারদের জোহরান আতঙ্ক

Update Time : 06:41:04 pm, Tuesday, 29 July 2025

মেয়র হলে নতুন ট্যাক্স আরোপের আশঙ্কায় | বিলিয়নায়ারদের জোহরান আতঙ্ক

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র | ২৯ জুলাই ২০২৫  — ২৪ জুন নিউইয়র্ক সিটির ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক এবং রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষকদের অনেক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন বিরোধী কট্টর নীতির সূচনাকালে যেমন আলোড়ন উঠেছিল, ঠিক তেমনি আলোড়ন তুলেছেন প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রান্ট ও প্রগ্রেসিভ রাজনৈতিক প্রার্থী জোহরান মামদানি। ধর্মগত পরিচয় নয়, তার পুঁজিবাদবিরোধী অবস্থান ও দরিদ্রবান্ধব অর্থনৈতিক নীতিই তাকে বিতর্কের কেন্দ্রে এনেছে।

বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস ও সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাজিওও এ্যাফোর্ডেবল নিউইয়র্ক গড়ার পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু প্রাইমারিতে মনোনয়ন পাওয়া মাত্রই মামদানি ধনীদের ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপের ঘোষণা দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন।

👉 “নায়িকার বিয়ে করার ইচ্ছা ‘ভালো হুজুরকে’ — মিথ্যাবাদী ইমামদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সাংবাদিক!”

তিনি ঘোষণা দেন, যদি নির্বাচিত হন, এক মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা বাসিন্দারা অতিরিক্ত ২% ট্যাক্স দেবেন। অন্যদিকে, কম আয়ের মানুষদের জন্য বাড়তি আবাসন সুবিধা ও গণপরিবহনে ভর্তুকির আশ্বাস দেন। তার এই অবস্থানের ফলে সিএনএন, সিএনবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, ফক্স বিজনেসসহ বহু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তার নীতির অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

বিনিয়োগে আশঙ্কা, স্থানান্তরের চিন্তা

নিউইয়র্কের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা বলছেন, জোহরান মামদানির সম্ভাব্য জয়ে ধনীরা বিনিয়োগে সতর্ক হয়ে উঠছেন। আবাসন ব্যবসায়ী জে বাতরা জানান, তার দুই বিলিয়নিয়ার ক্লায়েন্ট ম্যানহাটনে বাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এখন বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবছেন। ফেসবুক গ্রুপ ও বাজার গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও বলছে, অভিজাত এলাকাগুলোতে বসবাসরত ধনীদের অনেকে নিউইয়র্ক ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।

রিয়েলটর ডট কমের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৫.৬%। ২০২০ সালের তুলনায় তা বেড়েছে ১৮%। মামদানি যদি ভাড়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ছোট বিনিয়োগকারীরা—এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে।

ফক্স নিউজ জানায়, মামদানির মনোনয়নের পর ফ্লোরিডার হাউজিং ওয়েবসাইটগুলোতে নিউইয়র্ক থেকে ভিজিট ৫০% বেড়েছে। ড্যানিয়েল ডে লা ভেগা, ওয়ান সদেবিস ইন্টারন্যাশনাল রিয়েলটির প্রেসিডেন্ট বলেন, তার ধনী ক্লায়েন্টরা নিউইয়র্কের কর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

“ট্যাক্সোডাস” ও জোহরান আতঙ্ক

২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ১.২৫ লাখ নিউইয়র্কবাসী প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারসহ ফ্লোরিডায় চলে গেছে। মামদানি জিতলে এই “ট্যাক্সোডাস” দ্বিতীয় ধাপে রূপ নিতে পারে বলে মনে করেন ড্যানিয়েল। সিএনবিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়, মামদানির প্রগতিশীল ট্যাক্স নীতির ফলে বিলিয়নিয়ারদের স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ফিসক্যাল পলিসি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক নাথান গাসডর্ফ বলেন, বাস্তবে নিউইয়র্ক অনেক বেশি নতুন মিলিয়নিয়ার তৈরি করে, যত না তারা অন্যত্র চলে যায়। তার মতে, অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও মিডিয়া কিছু ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করছে।

কমিউনিজম বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিভাজন

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জোহরানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি মনে করেন না যে সমাজে বিলিয়নিয়ারদের থাকা উচিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে “শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল” বলে অভিহিত করেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতাদের একাংশও তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ও বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তাকে ঠেকানোর ডাক দিয়েছেন।

তবে আল জাজিরা ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের মতে, মামদানি কোনোভাবেই কমিউনিস্ট নন। তার নীতিমালায় গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাজার অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য খোঁজা হয়েছে।

শেষ কথা

বিলিয়নিয়াররা নিউইয়র্ক ছাড়বেন কি না, তা সময় বলবে। তবে জোহরান মামদানির প্রস্তাবিত সামাজিক নীতি ও বিতর্কিত ট্যাক্স পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে প্রবল আলোড়ন তুলেছে।

 

— হাকিকুল ইসলাম খোকন / তাবাসসুম/ এস এম মেহেদী