1:21 pm, Sunday, 23 November 2025

রেলওয়ে অব্যবস্থাপনায় মুখোমুখি সংঘর্ষ: লালমনিরহাটে ট্রেন দুর্ঘটনায় স্থবির যোগাযোগ ব্যবস্থা

রেলওয়ে অব্যবস্থাপনায় মুখোমুখি সংঘর্ষ: লালমনিরহাটে ট্রেন দুর্ঘটনায় স্থবির যোগাযোগ ব্যবস্থা

দক্ষিণ সুরমা, সিলেট | ২৯ জুলাই ২০২৫  —

দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়ের অভাব ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটি—এই তিনের ঘূর্ণিতে লালমনিরহাটে ঘটল ভয়াবহ এক রেল দুর্ঘটনা। রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের ওয়ার্কশেডের পাশে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায় দুটি ট্রেন। এতে বুড়িমারী রেলরুটে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ে।

ঘটনার বিবরণ

স্থানীয় সূত্র ও রেল বিভাগ জানায়, রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে স্টেশনে পৌঁছে যাত্রী নামিয়ে দেয়। এরপর সেটিকে পরিস্কারের জন্য ওয়ার্কশেডের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

অন্যদিকে, একই লাইনে পার্বতীপুরগামী ৪৬১ নম্বর ‘বুড়িমারী কমিউটার’ ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করতে যায়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং জরুরি সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।

দুর্ঘটনার ফলে লালমনি এক্সপ্রেসের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রাবিহীন অবস্থায় থাকায় লালমনি এক্সপ্রেসে কেউ আহত হননি, তবে বুড়িমারী কমিউটারে যাত্রী থাকলেও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

দায় কে নেবে?

দুর্ঘটনার পরপরই রেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে। আটকে পড়ে বুড়িমারী কমিউটার ট্রেনের যাত্রীরা, শুরু হয় চরম ভোগান্তি।

রেল নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ জানান, “হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং উদ্ধারকাজ চলছে।”

তবে এই বিবৃতিতে আশ্বস্ত না হয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন—কেন এই অনিয়ম? সিগন্যালিং সিস্টেমে ত্রুটি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কথা সরাসরি উঠে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে।

রেল বিভাগের লোকো ডিপার্টমেন্টের ডিএমই সাজিদ হাসান জানিয়েছেন, “গাফিলতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বারবার কেন এই অব্যবস্থা?

বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমন্বয়হীনতা ও যান্ত্রিক দুর্বলতায় ভুগছে। বর্ষা মৌসুমে লাইনচ্যুতি, সময়সূচি বিপর্যয়, সিগন্যালিং জটিলতা—সবকিছু মিলিয়ে এটি যেন দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষমাণ এক খোলা চক্র।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রেনের শিডিউল ও সিগন্যালিং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও থামবে না।

জনগণের প্রত্যাশা

এখন সময় এসেছে দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার। এ দুর্ঘটনা প্রাণহানির ঘটনা না হলেও ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। গণপরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কেবল তদন্ত নয়, বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কারও জরুরি।

👉 “নায়িকার বিয়ে করার ইচ্ছা ‘ভালো হুজুরকে’ — মিথ্যাবাদী ইমামদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সাংবাদিক!”
ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ খুলে দিলেন সাহসী এক সাংবাদিক—চাঞ্চল্যকর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন দেখতে ক্লিক করুন।

— কল্লোল আহমেদ/ তাবাসসুম/ এস এম মেহেদী

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

রেলওয়ে অব্যবস্থাপনায় মুখোমুখি সংঘর্ষ: লালমনিরহাটে ট্রেন দুর্ঘটনায় স্থবির যোগাযোগ ব্যবস্থা

Update Time : 05:06:51 pm, Tuesday, 29 July 2025

রেলওয়ে অব্যবস্থাপনায় মুখোমুখি সংঘর্ষ: লালমনিরহাটে ট্রেন দুর্ঘটনায় স্থবির যোগাযোগ ব্যবস্থা

দক্ষিণ সুরমা, সিলেট | ২৯ জুলাই ২০২৫  —

দায়িত্বে অবহেলা, সমন্বয়ের অভাব ও সিগন্যালিং ব্যবস্থার ত্রুটি—এই তিনের ঘূর্ণিতে লালমনিরহাটে ঘটল ভয়াবহ এক রেল দুর্ঘটনা। রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের ওয়ার্কশেডের পাশে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায় দুটি ট্রেন। এতে বুড়িমারী রেলরুটে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ে।

ঘটনার বিবরণ

স্থানীয় সূত্র ও রেল বিভাগ জানায়, রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে স্টেশনে পৌঁছে যাত্রী নামিয়ে দেয়। এরপর সেটিকে পরিস্কারের জন্য ওয়ার্কশেডের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

অন্যদিকে, একই লাইনে পার্বতীপুরগামী ৪৬১ নম্বর ‘বুড়িমারী কমিউটার’ ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করতে যায়। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং জরুরি সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।

দুর্ঘটনার ফলে লালমনি এক্সপ্রেসের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয় এবং রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রাবিহীন অবস্থায় থাকায় লালমনি এক্সপ্রেসে কেউ আহত হননি, তবে বুড়িমারী কমিউটারে যাত্রী থাকলেও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

দায় কে নেবে?

দুর্ঘটনার পরপরই রেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে। আটকে পড়ে বুড়িমারী কমিউটার ট্রেনের যাত্রীরা, শুরু হয় চরম ভোগান্তি।

রেল নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ জানান, “হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং উদ্ধারকাজ চলছে।”

তবে এই বিবৃতিতে আশ্বস্ত না হয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন—কেন এই অনিয়ম? সিগন্যালিং সিস্টেমে ত্রুটি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কথা সরাসরি উঠে এসেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে।

রেল বিভাগের লোকো ডিপার্টমেন্টের ডিএমই সাজিদ হাসান জানিয়েছেন, “গাফিলতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বারবার কেন এই অব্যবস্থা?

বাংলাদেশ রেলওয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমন্বয়হীনতা ও যান্ত্রিক দুর্বলতায় ভুগছে। বর্ষা মৌসুমে লাইনচ্যুতি, সময়সূচি বিপর্যয়, সিগন্যালিং জটিলতা—সবকিছু মিলিয়ে এটি যেন দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষমাণ এক খোলা চক্র।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রেনের শিডিউল ও সিগন্যালিং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও থামবে না।

জনগণের প্রত্যাশা

এখন সময় এসেছে দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার। এ দুর্ঘটনা প্রাণহানির ঘটনা না হলেও ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা। গণপরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কেবল তদন্ত নয়, বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কারও জরুরি।

👉 “নায়িকার বিয়ে করার ইচ্ছা ‘ভালো হুজুরকে’ — মিথ্যাবাদী ইমামদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সাংবাদিক!”
ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোশ খুলে দিলেন সাহসী এক সাংবাদিক—চাঞ্চল্যকর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন দেখতে ক্লিক করুন।

— কল্লোল আহমেদ/ তাবাসসুম/ এস এম মেহেদী