1:49 pm, Sunday, 23 November 2025

হবিগঞ্জের সাবেক ডিসি-এডিসি ও দুই এসিল্যান্ডের কারাদণ্ড

হবিগঞ্জের সাবেক ডিসি-এডিসি ও দুই এসিল্যান্ডের কারাদণ্ড

হবিগঞ্জ | ২৭ জুলাই ২০২৫  —  একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার অভিযোগে হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এবং দুই সহকারী কমিশনারকে (এসিল্যান্ড, ভূমি) এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ তারেক আজিজ এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় কোনো অভিযুক্তই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

১৭ বছর আগের ঘটনার রায়

২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার (খোয়াই মুখ) এলাকায় একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় সেখানে আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ডিক্রি জারি ছিল। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অভিযানে আব্দুল আজিজের ছেলে আব্দুল হামিদের জমি দখল করা হয় এবং তার ঘর ভেঙে দেওয়া হয়।

ঘটনার পরের বছর, ২০০৮ সালের ১০ আগস্ট, ভুক্তভোগী আব্দুল হামিদ হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) একে এম আমিনুল ইসলাম, বানিয়াচং উপজেলার ইউএনও এবং ভারপ্রাপ্ত এসিল্যান্ড নুরে আলম সিদ্দিকী, সদরের এসিল্যান্ড সফিউল আলমসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এই মামলার দীর্ঘ ১৭ বছর পর, আদালত চার সরকারি কর্মকর্তাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আদালতের নির্দেশনা

রায়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বাদীর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ২১ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করেন।

এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে একটি বিরল নজির, যেখানে জেলার শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও আইন মেনে চলার বার্তা

এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যেখানে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে— রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, আইন ও আদালতের রায় লঙ্ঘনের পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হবে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ রায় বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখবে।

— আহমদুল হাসান/ তাবাসসুম/ এস এম মেহেদী

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

দ্রব্যমূল্য কমানো ও সর্বস্তরে রেশনিং চালুর দাবি

হবিগঞ্জের সাবেক ডিসি-এডিসি ও দুই এসিল্যান্ডের কারাদণ্ড

Update Time : 10:05:50 pm, Sunday, 27 July 2025

হবিগঞ্জের সাবেক ডিসি-এডিসি ও দুই এসিল্যান্ডের কারাদণ্ড

হবিগঞ্জ | ২৭ জুলাই ২০২৫  —  একটি জমি সংক্রান্ত মামলায় আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার অভিযোগে হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এবং দুই সহকারী কমিশনারকে (এসিল্যান্ড, ভূমি) এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ তারেক আজিজ এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় কোনো অভিযুক্তই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

১৭ বছর আগের ঘটনার রায়

২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার (খোয়াই মুখ) এলাকায় একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় সেখানে আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ডিক্রি জারি ছিল। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অভিযানে আব্দুল আজিজের ছেলে আব্দুল হামিদের জমি দখল করা হয় এবং তার ঘর ভেঙে দেওয়া হয়।

ঘটনার পরের বছর, ২০০৮ সালের ১০ আগস্ট, ভুক্তভোগী আব্দুল হামিদ হবিগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) একে এম আমিনুল ইসলাম, বানিয়াচং উপজেলার ইউএনও এবং ভারপ্রাপ্ত এসিল্যান্ড নুরে আলম সিদ্দিকী, সদরের এসিল্যান্ড সফিউল আলমসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এই মামলার দীর্ঘ ১৭ বছর পর, আদালত চার সরকারি কর্মকর্তাকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আদালতের নির্দেশনা

রায়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা বাদীর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ২১ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করেন।

এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে একটি বিরল নজির, যেখানে জেলার শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো।

প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও আইন মেনে চলার বার্তা

এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যেখানে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে— রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, আইন ও আদালতের রায় লঙ্ঘনের পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হবে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ রায় বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখবে।

— আহমদুল হাসান/ তাবাসসুম/ এস এম মেহেদী