আওয়ামী লীগ বিরোধিতা ঘিরেই কি এনসিপির রাজনীতি? প্রশ্ন উঠছে দলীয় দর্শনের স্বচ্ছতা নিয়ে
রূপান্তর সংবাদ ডেস্ক | ২৫ জুলাই ২০২৫ —
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র উত্থান এক আলোচিত ঘটনা। গণঅভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা ছাত্রনেতারা গঠিত এই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন, অর্থনৈতিক নীতি কিংবা রাষ্ট্রচিন্তার স্পষ্ট কোনো রূপরেখা দেখা যায়নি।
বরং যেটি প্রকটভাবে সামনে এসেছে, তা হলো—আওয়ামী লীগবিরোধিতা। এনসিপির বেশিরভাগ কর্মসূচি, স্লোগান ও রাজনৈতিক অবস্থান দলটির বিরোধীপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগকে চিহ্নিত করে, যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে দলের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। -বিবিসি
‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, মাজার ধ্বংসের হুমকি—রাজনৈতিক প্রতিবাদ, না অস্থির উসকানি?
গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনা এবং নেতাদের কিছু বক্তব্য—যেমন “মুজিববাদ মুর্দাবাদ” কিংবা “মৃত্যু অথবা মুজিব মাজার ভাঙা”—জাতীয় রাজনীতিতে কেবল উত্তাপই বাড়ায়নি, এনসিপির অবস্থানকেও বিতর্কিত করেছে। যদিও দলের শীর্ষ নেতারা এসব মন্তব্যকে “ব্যক্তিগত মত” বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দলীয় অনুমোদন বা নীরব সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়।
দর্শনহীন রাজনীতি কি স্থায়ী হতে পারে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদের ভাষায়, “এনসিপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো রাষ্ট্রচিন্তা, অর্থনৈতিক নীতি বা সমাজ রূপান্তরের রূপরেখা আসেনি, যা তাদের প্রতি মানুষের দীর্ঘমেয়াদি আগ্রহ তৈরি করতে পারে।”
এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে এনসিপির রাজনীতি আপাতত ‘আওয়ামী লীগবিরোধিতা’ ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন ইতিবাচক ও গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি—যা এই দল থেকে এখনও পর্যন্ত অনুপস্থিত।
রাষ্ট্রীয় সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন: আন্দোলনের জায়গায় সুবিধাভোগিতা?
গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর বা কক্সবাজারে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে নেতাদের স্থান ত্যাগের দৃশ্য অনেকের চোখে রাজনৈতিক স্ববিরোধিতা হিসেবেই প্রতিভাত হয়েছে।
নৃবিজ্ঞানী রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, “রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে পাশে নিয়ে আর যাই হোক, জনসংযোগ হয় না। আপনি মানুষকে ভাঙার বার্তা দিলে, গড়ার ভাষা মানুষের কাছে পৌঁছায় না।”
দলীয় ভাষ্য: শুধুই আওয়ামীবিরোধিতা নয়
এনসিপি নেতারা অবশ্য এসব অভিযোগ নাকচ করে দাবি করেছেন, দলটির লক্ষ্য একমাত্র আওয়ামীবিরোধিতা নয়; বরং মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদার জন্য লড়াই করাই তাদের উদ্দেশ্য।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা নিছক কাউন্টার পলিটিক্স করি না। আওয়ামী লীগের বিচার আমাদের কর্মসূচির অংশ, কারণ তারা গুম-খুন-দমন-পীড়নের রাজনীতি করেছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য বৃহত্তর—রাজনৈতিক সংস্কার।”
সমালোচকদের মতে, অদূরদর্শী রাজনীতির ফাঁদে এনসিপি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন একটি রাজনৈতিক দল যদি ইতিবাচক বিকল্প না দিতে পারে, তাহলে কেবল ক্ষোভ ও প্রতিশোধের রাজনীতি দিয়ে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি গড়া সম্ভব নয়।
নৃবিজ্ঞানী স্নিগ্ধা বলেন, “ছাত্র হিসেবে আপনার রাগ-ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনাকে সংবরণ করতে হয়। রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা না থাকলে আপনি শুধু ধ্বংসের বার্তা দেন।”
সূত্র : বিবিসি নিউজ
— তাবাসসুম/ সালেহ / এস এম মেহেদী
Reporter Name 
























