সূরা কুরাইশ এর তাৎপর্য ও শিক্ষা: রিযিক, কৃতজ্ঞতা ও ইবাদতের নির্দেশ
সূরা কুরাইশ: পরিচয়
-
সূরা নাম: আল-কুরাইশ (قريش)
-
সূরা নম্বর: ১০৬
-
আয়াত সংখ্যা: ৪
-
নাজিলের স্থান: মক্কা
-
বিষয়বস্তু: রিযিক ও নিরাপত্তা, কৃতজ্ঞতা, এবং আল্লাহর একনিষ্ঠ ইবাদতের নির্দেশ
সূরার নাজিলের প্রেক্ষাপট
এই সূরাটি কুরাইশ গোত্রকে লক্ষ্য করে নাজিল হয়। তারা ছিল কাবা শরিফের তত্ত্বাবধায়ক এবং মরু অঞ্চলে বাণিজ্যের মাধ্যমে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল। আল্লাহ তাদেরকে নিরাপত্তা, সম্মান এবং রিযিক দান করেছিলেন। কিন্তু তারা সেই দাতার ইবাদতের পরিবর্তে শিরকে লিপ্ত ছিল। এই সূরার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের উপর তাঁর নেয়ামত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, তারা যেন একমাত্র এই ঘরের (কাবার) প্রভুর ইবাদত করে, যিনি তাদের ক্ষুধা থেকে আহার দিয়েছেন এবং ভয় থেকে নিরাপদ করেছেন।
সূরা কুরাইশ এর ফজিলত
-
রিযিক ও নিরাপত্তা আল্লাহর দান—এই উপলব্ধি মানুষের মাঝে কৃতজ্ঞতার জন্ম দেয়।
-
আল্লাহর নিয়ামতের প্রতিদান কেবল কথায় নয়, বরং একনিষ্ঠ ইবাদতের মাধ্যমে আদায় করতে হয়।
-
কুরাইশ গোত্রের উদাহরণ আমাদের শেখায়, যে জাতি আল্লাহর দানকে কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করে না, তাদের অবস্থা বদলে যায়।
-
ছোট একটি সূরা হয়েও এর মধ্যে ইসলামী সমাজের মৌলিক বিশ্বাস, ইতিহাস ও আচরণিক দিক নির্দেশনা রয়েছে।
সূরা কুরাইশ (আরবি, উচ্চারণ ও বাংলা অনুবাদ)
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
١. لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ
٢. إِيلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ
٣. فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَٰذَا الْبَيْتِ
٤. الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ وَآمَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ
উচ্চারণ (বাংলা হরফে)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
১. লি-ঈলা-ফি কুরাইশ।
২. ঈলা-ফিহিম রিহ-লাতাশ-শিতাই ওয়াস-সাঈফ।
৩. ফাল-ইয়া-বুদূ-রাব্বা হা-যাল বাঈত।
৪. আল্লাযী-আতা‘আমাহুম মিন জূ‘ইওঁ ওয়া আ-মানাহুম মিন খাওফ।
অর্থ
১. কুরাইশদের অভ্যস্ততার কারণে,
২. তাদের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সফরের অভ্যস্ততার কারণে,
৩. তারা যেন এই ঘরের প্রভুর ইবাদত করে,
৪. যিনি তাদেরকে ক্ষুধা থেকে আহার দিয়েছেন এবং ভয় থেকে নিরাপদ করেছেন।
শিক্ষণীয় দিকসমূহ
-
আল্লাহর দেওয়া রিযিক, নিরাপত্তা ও সম্মান কেবল তাঁর পক্ষ থেকেই আসে। এগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া আবশ্যক।
-
কৃতজ্ঞতার প্রকৃত প্রকাশ হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত ও একত্ববাদে অটল থাকা।
-
শিরক ও অহংকার আল্লাহর নেয়ামতের অপব্যবহার; তা জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
-
ব্যক্তি ও জাতি হিসেবে আমাদের উচিত আল্লাহর প্রতি খাঁটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং সমাজে শান্তি ও ন্যায়ের পরিবেশ গঠন করা।
করণীয়
-
প্রতিদিনের নামাজে এই সূরা পড়া যেতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের তা শিখানো।
-
আল্লাহর দান ও নিয়ামতের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে এ সূরা তিলাওয়াত ও বুঝে পড়া জরুরি।
-
সমাজে যারা কৃতজ্ঞতা ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করে, তাদের সম্মান করা এবং অনুসরণ করা ইসলামি আদর্শ।
সূরা কুরাইশ শুধু একটি ঐতিহাসিক সূরা নয়, এটি আজও আমাদের জন্য সময়োপযোগী শিক্ষার বার্তা বহন করে। যারা আল্লাহর নিয়ামত গ্রহণ করে, তাদের উচিত তা রক্ষায় একনিষ্ঠ ইবাদত ও খাঁটি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। আল্লাহর দান আমাদের জীবনে যত বেশি উপলব্ধি করব, তত বেশি শান্তি ও স্থিতি লাভ করব।
লেখক: মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী, মোহতামিম, মিশকাতুল কোরআন মাদরাসা, মৌলভীবাজার।
—সালেহ/ আসমা/ এস এম মেহেদী
মাওলানা সাদ আহমদ বর্ণভী 

























