কুয়েতে কর্মী নিয়োগ: ভিসা ফ্রি হলেও ৫-১০ লাখ টাকার অসম বাণিজ্য চলছেই- মঈন সুমন
কুয়েত | ২৪ জুলাই ২০২৫ — কুয়েত সরকার কর্তৃক ঘোষিত ‘ভিসা ফ্রি’ শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে কুয়েতগামী শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এই অনৈতিক বাণিজ্য পরিচালনা করছে একটি অসাধু দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছেন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের সভাপতি মঈন উদ্দিন সরকার সুমন।
তিনি জানান, ‘তিন দিনারের ভিসা’ নামে পরিচিত এসব ভিসার প্রকৃত খরচ দুই লাখ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে, যার কোনও রসিদ বা আইনি ভিত্তি নেই। অধিকাংশ শ্রমিক নিজের জমি বিক্রি করে, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে অথবা সর্বস্ব হারিয়ে এই টাকা জোগাড় করছেন।
“এটা শুধু ব্যবসা নয়, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন”
মঈন সুমন বলেন, “মানুষ যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যায়, তখন এটা শুধুই অর্থনৈতিক লেনদেন নয়—এটা রাষ্ট্রের মর্যাদা ও মানবিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়।” তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং কূটনৈতিক উদাসীনতার সুযোগে দালালচক্র বিদেশগামী শ্রমিকদের পণ্যে পরিণত করছে।
সুমনের প্রস্তাবনা: শ্রমিক সুরক্ষায় তিন দফা দাবি
বাংলাদেশ সরকারকে উদ্দেশ করে মঈন সুমন প্রবাসী কল্যাণে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ আইনি বাধ্যবাধকতা হিসেবে নিশ্চিত করার দাবি জানান:
* ন্যূনতম ৩ বছরের চাকরি চুক্তি: শ্রমিকদের চাকরির স্থায়িত্ব রক্ষায় তিন বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক চুক্তি।
* সুনির্দিষ্ট বেতন ও সুবিধা: বাসস্থান, পরিবহনসহ মাসিক বেতন কোম্পানির পক্ষ থেকে নির্ধারিতভাবে প্রদান নিশ্চিতকরণ।
* ক্ষতিপূরণ নীতিমালা: দুই বছরের মধ্যে চাকরি হারালে নিয়োগদাতা বা এজেন্সির কাছ থেকে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়।
তিনি আরও বলেন, “প্রবাসীরা কেবল রেমিট্যান্স পাঠানো যন্ত্র নয়; তারা জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। তাদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।”
তদারকির আহ্বান
মঈন সুমন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে—
-
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়মিতভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়ার উপর নজরদারি করে
-
দালাল ও ফ্রড এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়
-
দূতাবাস পর্যায়ে শ্রমিকের অভিযোগ গ্রহণ ও তাৎক্ষণিক সমাধান ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কুয়েতের মতো বাজারে নিয়োগ বাণিজ্যের এই ধারা চলতে থাকলে একদিকে প্রবাসীদের জীবন বিপন্ন হবে, অন্যদিকে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়বে।
বিশেষ প্রতিবেদক : আ হ জুবেদ
— তাবাসসুম/সালেহ / মেহেদী
Reporter Name 


























